অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “অনুরাগ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৮৩ – ১০০ পর্যন্ত মোট ৯০ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ৪৬ – ৯০ বাণীসমূহ দেয়া হলো।
ইষ্টনিষ্ঠ ভাববৃত্তি
রঙীন যাহার যেমনতর,
প্রাপ্তিও তা'র তেমনই হয়
আনুগত্য যেমন দড়। ৪৬।
নিষ্ঠাভরা শিষ্ট স্বভাব
আনেই রতি-ঊর্জ্জনা,
স্বভাবও তা'র ব্যবস্থ হয়
ঝেড়ে অশেষ আবৰ্জ্জনা। ৪৭।
ইষ্টনিষ্ঠ অনুগতি-কৃতি
শ্রেয়চর্য্যী উৎসবপ্রাণ,
দীপ্ত ক'রে যে করেই নিছক
দক্ষ-নিপুণ চক্ষু দান। ৪৮।
অনুরাগের মহিমাই জেনো—
নিষ্ঠা তীক্ষ্ণ ক'রে তুলে'
কৃতিদীপ্ত ঊৰ্জ্জনাতে
চালায়, যা'তে সুফল ফলে। ৪৯।
নিষ্ঠা-নিপুণ অনুরাগের
হৃদয়ভরা চর্য্যা-নেশায়,
আচার-চলন ভাব-দীপনাও
বদলে চলে সেই নিশায়। ৫০।
নিষ্ঠা-অটুট অনুরাগই যে
দীক্ষা-শিক্ষার মূল ধারা—
নিষ্ঠানিপুণ গুরুতে হ'লে
বুঝে দেখে যায় করা। ৫১।
কৃতিমুখর সন্দীপনা
অনুগতির রতিরাগে,
আত্মকর্ষণ তেমনি উছল
অনুরাগ যা'র যেমন জাগে। ৫২।
ইষ্টরাগের শিষ্ট নেশার
সঙ্গতিশীল ঊৰ্জ্জনায়,
যোগ্যতারই তাৎপর্য্য ঐ
সঞ্চারে যা' বর্দ্ধনায়। ৫৩।
অনুরাগের আকুল টানে
আগ্রহ যদি নাই-ই ফোটে,
অনুরাগ তো নাই সেখানে
আবৰ্জ্জনা তাই-ই জোটে। ৫৪।
আগ্রহটার বাস্তবতায়
থাকলে অনুরাগ উচ্ছলা,
কৃতিতীর্থ হবেই তুমি
হবে না লক্ষ্মী চঞ্চলা। ৫৫।
প্রীতি আনে নিষ্ঠানিবেশ
দ্যুতিমুখর হয় হৃদয়,
প্রীতি-অনুকম্পা-যোগে
জ্ঞানদ্যোতনার হয় উদয়। ৫৬।
প্রীতি আনে অনুসরণ
সেবামুখর অনুরাগ,
তৃপ্তিভরা দীপ্তি নিয়ে
বেড়েই চলে জীবন-যাগ। ৫৭।
প্রীতি যেথায় নিষ্ঠাপৃত
ঊর্জ্জী তেজে চলে,
অভিমানের স্থান কোথায় তা'র?
দীপ্ত হৃদয় বলে । ৫৮।
প্রীতিদীপ্ত ইষ্টনেশা
বাড়বে যত যেই তালে,
দরদভরা গণপ্রীতি
বাড়বে তেমনি সেই চালে। ৫৯।
প্রীতির নেশায় ভাববৃত্তি
কৃতিচলায় হ'লে অবাধ,
উন্নতি তা'র স্বতঃই ফোটে
ভেঙ্গে-চুরে কামের বাঁধ। ৬০।
প্রীতির আবেগ বোধ-বিবেকে
নিষ্ঠা নিয়ে যতই বাড়ে,
নিখুঁত চলার দক্ষ করায়
সুসর্জ্জনায় রাখেই তা'রে। ৬১।
তোর অনুরাগই তো তোর উদ্ধাতা
ইষ্টনিষ্ঠায় তপ্ত যা',
তপশ্চর্য্যা-রাগেই আনে
নিদেশ-পালায় সততা। ৬২।
প্রতিষ্ঠাই যদি চাস্ ওরে তুই
প্রতিষ্ঠ হ' ইষ্টরাগে,
সেই রাগেরই নিয়ন্ত্রণায়
সব-কিছুকেই আনিস্ বাগে ;
ইচ্ছা আসে প্রীতির টানে
নিষ্ঠাতে হয় প্রতিষ্ঠা,
জীবনদ্যুতি প্রীতিই জাগায়
ইষ্টেতে হয় সুনিষ্ঠা। ৬৩।
প্রীতি হ'লেই কৃতি আনে
প্রিয়'র স্বস্তি-উপচয়,
কৃতিহারা ব্যস্ত-বিপুল
প্রীতির ঠাটটি অমন নয়। ৬৪।
প্রীতিই আনে কৃতিচৰ্য্যা –
ধৃতিচর্য্যার আশীর্ব্বাদ,
সুকৃতিরই জীবনতপে
কাটেই বহুৎ বিসম্বাদ। ৬৫।
ইষ্টপ্রীতির মহান্ তালে
সঙ্গে-সঙ্গে কৃষ্টি জাগে—
জ্ঞান-লোচনের বিশদ দেখায়
প্রজ্ঞা-রঙিল জ্ঞানের ফাগে। ৬৬।
ঊর্জ্জীতেজা নতি নিয়ে
রতি বাড়াও ইষ্ট-প্রতি,
ধৃতি-পথে সজাগ থেকো
কৃতিপূজায় রেখে নতি। ৬৭ ।
প্রীতির সহিত আদান-প্রদান
চর্য্যা-নিপুণ অন্তরে,
পারস্পরিক সংহতি আনে
ভুলত্রুটি সব দুর ক'রে। ৬৮।
তোমার প্রতি যেমন প্রীতি
সেই প্রীতিকে লক্ষ্য ক'রে,
অন্যের প্রীতি-চর্য্যা নিয়ে
চল্ এগিয়ে দেখে ধীরে। ৬৯।
ওজোদীপ্ত নয় যে প্রীতি
নাইকো যাতে ঊর্জ্জনা,
নিষ্ঠা-বিহীন এমন প্রীতি
রাখিস্ জেনে প্রীতিই না। ৭০।
প্রীতির ঝলক দেখবে যেথায়
তোমা ছাড়া আর চলে নাকো,
দাঁত-খিঁচিয়ে, কড়া কথায়
প্রণয় কিনা খতিয়ে দেখো;
অপ্রীতিকর ধমক দিয়ে
দেখো প্রীতি কেমন টেঁকে,
প্রিয় তোমার কতখানি
বুঝে নিও সেইটি দেখে। ৭১।
আবোল-তাবোল যতই ভাবিস্
প্রিয়তমের দোষ ব'লে,
প্রীতি যদি সত্যি হয় তোর
তা' কি ছুটে যায় চ'লে? ৭২।
জুলুমবাজি নাই দরদে,—
হৃদ্য-চৰ্য্যা ল'য়ে
নেওয়া-দেওয়ার সার্থকতা
চলছে শুধু ব'য়ে। १৩।
ঢেউয়ের মত চলে জীবন
ওঠানামার তাল-বেতালে,
সব-কিছুরই হয় সমাধান
সাগর-স্রোতায় যদি চলে। ৭৪।
মান-অপমান, সুখ-সম্পদ
সব দিয়ে যা'রে ভালবাসিস,
রাগ-বিরাগ আর বিরক্তি সব
ঝেড়ে ফেলে তা'র চর্য্যা করিস্ ;
মান-অপমান, সুখ-দুঃখের
সব লালসা ছেড়ে দিয়ে,
প্রেষ্ঠ-স্বার্থ প্রেষ্ঠ-প্রীতি
একটানা থাক্ তা'কেই নিয়ে। ৭৫।
অভিমান-শূন্য প্রীতি
চর্য্যামুখর ভজন-সেবা,
উচ্ছলাতে আনেই কিন্তু
সব সৌভাগ্যের স্বস্তি-বিভা। ৭৬।
মনের মানুষ থাকলে একটি
আর কি কেহ হয় ?
চৰ্য্যা-সেবা চলতে পারে
আচরণে কিন্তু নয়। ৭৭।
কান্তাভাবের লক্ষণ দেখো
দেওয়া-থোওয়া-সেবা চলনে,
নিজের স্বার্থে আগুন দিয়েও
কান্ত-স্বার্থ পালে কেমনে ;
বারনারীর কিন্তু উল্টো বোধ—
রং-ঢং আর কথার ছলে,
কেমন ক'রে রাখতে পারে
স্বার্থসেবায় সুকৌশলে
কান্তস্বার্থীর লক্ষণই কিন্তু
দেওয়া-থোওয়ায় সেবার টান,
নিজের স্বার্থে আগুন দিয়েও
কান্ত-স্বার্থই তাহার প্রাণ। ৭৮।
যা'র তরে তুই অন্যে ছেড়ে
তা'কে নিয়ে সুখী থাকিস,
ঠিক জানিস্ তুই সুখে-দুঃখে
তৃপ্তিতেই তা'য় ভালবাসিস্ । ৭৯।
যা'র কথা তুই এড়াতে নারিস্
দরদ কিন্তু সেইখানে,
কৃতিরাগে যা' জাগে তোর
তা'ই-ই কিন্তু রয় প্রাণে। ৮০।
দু'জনাকেই ভালবাসিস্
প্রিয়-প্রেষ্ঠ উভয়কেই,
সত্তাস্বার্থে যে-জন স্বাৰ্থী
প্রেষ্ঠ কিন্তু তোরই সেই। ৮১।
প্রেষ্ঠ তোমার হ'লেই প্রিয়,—
থাকুক যত রঙ্গিল চোখ,
নিষ্ঠাপ্রতুল অনুরাগে
থামবে নাকো তোমার ঝোঁক। ৮২।
যা'কেই তুমি প্রেষ্ঠ বল
প্রিয় তোমার যতই সে,
রাগদীপনী চর্য্যা তত
দেয় দেখায়ে তাঁ'র দিশে। ৮৩।
ধরা ছাড়া নিকেশ ক'রে
প্রেষ্ঠে তুমি আগলে ধ'রে
সব থাকা, সব যাওয়া নিয়ে
তাঁ'র চলনে নাই চল—
তাঁ'র যা-কিছু গুণান্বয়ে
বোধ-প্রবৃত্তির সমুচ্চয়ে
বুক ফুলিয়ে উচ্ছলতায়
চলবে কেমন কিসে বল ?
রিক্ত হ'য়ে, সিক্ত হ'য়ে
অন্তরেতে ধ'রে-ব'য়ে
বিচ্ছুরণী সার্থকতায়
তবে তো জীবন সার্থক হ'ল !
বোধ-প্রবোধের অভ্যুদয়ে
সার্থকতার ঋতান্বয়ে
ধরা-ছোঁওয়া স'য়ে-বয়ে
তা'তেই জীবন ধন্য হ'ল। ৮৪।
পুণ্যপ্রতুল কুলগৌরবে যে
প্রেষ্ঠে করে আত্মদান,
সেবা-সৌকর্য স্বার্থই যা'র—
জীবনচর্য্যী প্রণিধান,
শ্রেষ্ঠ তা'রা হ'য়েই থাকে
প্রকৃতিরই অমোঘ ডাকে,
তৃপ্ত ক'রে, দীপ্ত ক'রে
নিষ্ঠাপ্রতুল ক'রে সবাকে। ৮৫।
প্রিয়র জীবন বেসে ভাল
ভরলি না তোর কুটিল বুক,
লাখ সেবা তোর আরতি করুক
পাবি কি তুই একটু সুখ ? ৮৬।
চ'টে যখন আগুন হ'লে
লোভে হ'লে মুহ্যমান,
ইষ্টপ্রাণ তবুও থাকলে
তবেই আছে ইষ্টটান। ৮৭।
নেশার চোটে আত্মহারা
সে মত্ততা কোথায় ভাল ?
সেবামুখর ইষ্টনেশা
সব নেশারই দ্যোতন-আলো। ৮৮।
যা'কে তুমি বলছ প্রিয়
তাঁ'র তিরস্কার, গঞ্জনা,
তাড়ন-পীড়ন যা' করেন তা'তে
প্রীতি তোমার ধ্বসেই না;
অন্তর-বাহির সবটা দিয়ে
ব'লো তা'কে তখন প্রিয়',
সত্তাটাকে অর্ঘ্য দিয়ে
অন্তর-বাইরে সার্থক হ'য়ো,
ঐ প্রীতিই তো অটুট নিষ্ঠায়
আনুগত্য-কৃতি নিয়ে
সার্থকতা উথলে তোলে,
করে মহৎ হৃদয় দিয়ে,
অন্তরেরও অনুভূতি
ব্যবহার-সহ কৃতি,
শ্রদ্ধাসিদ্ধ ক'রে তোমায়
বাড়িয়ে দেবে বিভব-ধৃতি ;
জপ-সাধনা তপশ্চর্যা
যেমনতরই কর তুমি,
তা'রই স্থণ্ডিল ঐ তো প্রিয়,
সার্থক হ' তাঁ'র চরণ চুমি'। ৮৯।
ইষ্ট তোমার, প্রিয় তোমার,
প্রেষ্ঠ তোমার যা'কে বল,
তৃপ্ত তুমি তা'কে না ক'রে
তুমি তৃপ্ত হবে বল ?
তোমার চর্য্যায় তৃপ্ত করা
তা'তেই থাকে নিয়ন্ত্রণ—
সার্থকতায় সংগ্রথিত
জ্ঞান, বিবেক আর সদবোধন
স্থিতি-গতির ঊর্জ্জনাতে
তৃপ্তি-দীপন চর্য্যাদানে
কৃতি-বিভব উথলে ওঠে
প্রীতিপ্রসূন-ধৃতির টানে
যা'র ফলেতে সত্তায় তোমার
দীপ্ত দ্যুতি গজিয়ে ওঠে,
যা'র ফলেতে কৃতিচর্য্যায়
তৃপ্তি তোমার ফোটেই ফোটে।
যা'র ফলেতে অটুট নিষ্ঠা
আনুগত্য-কৃতিবেগ
বেড়ে ওঠে, আনে তোমাতে
স্বতঃস্ফূর্ত্ত সুসম্বেগ ;
মনুষ্যত্ব ব্যক্তিত্বে তোমার
ওঠেই গজিয়ে ক্রমে ক্রমে,
সব কাজেতে, সব ব্যাপারে
বল ‘নমোহস্ত' স্থিতির দমে। ৯০।