অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ডে “অসৎ-নিরোধ” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৩৭ – ১৫২ পর্যন্ত ৯২ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ১-৫০ বাণীসমূহ দেয়া হলো।
অসৎ-নিরোধ মানেই জেনো,—
ব্যষ্টিসমষ্টির অসৎ যা'য়,
সেগুলিকে নিরোধ ক'রে
বিনিয়ে তোলা সুসংস্থায় । ১ ।
ছোটবেলা হ'তেই কিন্তু
খেলাধূলার মধ্য দিয়ে,
অসৎ-নিরোধ করা শিখবি—
কুশল-কৌশল বুদ্ধি নিয়ে । ২।
সব যা'-কিছু,—তিক্ত যা' সব,
যা'তে লোকের অনিষ্ট হয়—
অসৎ কিন্তু তা'ই তো আসল,
দিও না কিন্তু তা'কে প্রশ্রয় । ৩ ।
সত্তা যা'তে শীর্ণ করে
সেটাই বুঝো অসৎ কাজ,
সব অসৎকে তাড়িয়ে দিয়ে
উদ্যোগী রও, হও ধী-রাজ । ৪।
বর্জ্জন কর্ তুই সে-সবগুলি
ভ্রষ্ট করে যা' তোকে,
নিষ্ঠানিপুণ বিক্রমে ওঠ্
সাহস-বীর্য্য ধ'রে বুকে । ৫।
সৎ-সুন্দর-সাবধানতা—
তিনটি গুণে নজর রেখে,
সহজভাবে চলিস্-ফিরিস্
অসৎ-নিরোধ লক্ষ্য রেখে । ৬।
অসৎ-নিরোধ করতে গিয়ে
অসৎ-সৃষ্টি আর করিস্ না,
অসৎটাকে তাড়িয়ে দিয়ে
স্বস্তি আনিস, ছাড়িস্ না ।৭।
অসৎ-নিরোধ করতে হবে,
অসৎ গুণের হোক্ না ক্ষয়,
অসতের ক্ষয় ক'রতে গিয়ে
করিস্ নে সত্তার অপচয় । ৮।
অসৎ-করণ অসৎ-চারণ—
মুখ্য কিংবা গৌণ হো'ক,
তখনই 'রুদ্ধ না করলে তা'
কঠিন রোখা তা'দের রোখ । ৯।
অসৎ যা'-সব নিরোধ করিস্
জেনে-শুনে স্বভাব তা'র,
নিয়মনে ঋদ্ধি আনিস্
রুদ্ধ ক'রে অসৎ-দ্বার । ১০।
বদমেজাজী খেঁকশিয়ালী
করছে কত আনাগোনা,
নজর রাখিস্, বুঝে চলিস্
বিপাক পথে চলিস্ না । ১১ ।
ভণ্ড-ঠগী দেখবে যেথায়—
ক'রো সামাল সবায়,
কেউ যেন না ঠকে প'ড়ে
এদের ভাঁওতায় । ১২।
অত্যাচারী অসৎ কৃতি
যখন করে নির্য্যাতন,
বাঁচিয়ে তাঁ'দের স্বস্তি দিতে
সৎ অহং-এর প্রয়োজন । ১৩।
কাম-কামনা কল্লোল হ'য়ে
ছোটে যখন এদিক্-সেদিক্,
সন্দীপনী শুভ চালে
পারিস্ যদি রাখিস্ ঠিক । ১৪।
ব্যতিক্রান্ত কাম-কামনা
লেলিহান হ'য়ে চলছে যখন,
লোলদীপনার অশিষ্ট চাল
পারলে করিস্ বিনায়ন । ১৫।
যতই অসৎ কো’ক্ না কথা
অশিষ্ট ব্যবহার করুক যা'ই,
অসৎ-নিরোধ দৃষ্টি রেখে
চেষ্টা-চলন করিস্ তাই । ১৬।
অসৎ যা' তা'য় ঘৃণা ক'রো
ঘৃণা ক'রো না আর কা'কেও,
করলে ঘৃণা, হিংসা-কপট
ছাড়বে নাকো তোমাকেও । ১৭।
সৎ-অসতের দুটি ধারাই
থাকে সবার হৃদয়-মাঝে,
সৎ যাহারা অসৎকে তা'রা
দেয় না প্রশ্রয় কোন কাজে । ১৮ ।
পাপকে দলন ক'রো তুমি,
পার তো—পাপীকে শুধরে নিও,
হৃদয়ে তা'র শ্রেয়নিষ্ঠার
ভাব-রশ্মি ঢুকিয়ে দিও । ১৯ ।
শ্রেয়পথে পাপীকে এনে
স্নেহল ঊর্জ্জনায় নিষ্ঠারতি
জাগিয়ে যদি দিতেই পার,—
তোমারও খুলবে সুনিয়তি । ২০।
অসৎজনায় ফেরাতে গেলে
ক'রে শুভ বিবেচনা,
কথায়-করায় করবি এমন
যা' এড়াতে পারবে না ;
সৎ-অসতের সংঘাত যত
বিনিয়ে তা'দের সৎ-এ টেনে,
জীবনটাকে উছল কর্ তুই
সব-কিছুকে অর্থে এনে । ২১।
কোন ব্যাপারে অসৎ-এর কাছে
যেতেও যদি হয় তোমার,
এমনভাবে গুছিয়ে যেও
ধারতে না হয় তাহার ধার । ২২।
অসৎ-এর হাতে না পড়তে হয়
বুঝে-সুঝে ঠিক দেখো,
অসৎ-পথে না যেতে হয়
এমন পথটা ক'রে দেখো । ২৩।
দুঃখ-আপদ আসেই সবার
ছোট-বড় যে-জন হো'ক্,
বোধ-ভাতিতে দেখে-বুঝে
করবি নিরোধ তা'দের রোখ । ২৪।
ঠাট্টা ছলেও বিষ ঢেলো না
সত্তা যা'তে ক্ষুব্ধ হয়,
সে-বিষ নিজের ব্যক্তিত্বকে
করেও কিন্তু লুপ্ত ক্ষয় । ২৫।
হিংসা যখন দাউ দহনে
সত্তাঘাতী হয়,
নিঠুর কঠোর উদ্দীপনায়
নিরোধ করবি তা'য় । ২৬।
আগুন যখন লক্লকিয়ে
সর্ব্বনাশে ধায়,—
আগুন-নিরোধ জল-সেচনায়
তবে তো নিভে যায় ? ২৭ ।
হিংসা যখন আগুন হ'য়ে
দাউ দীপনায় ধায়,
জ্বলনবেগে জ্ব'লতেই থাকে,
তেলে নিভে যায় ? ২৮ ।
আগুন যেমন তেল-আহুতিত্
তীব্রবেগে ধায়,
হিংসাও কিন্তু স্নেহপ্রক্ষেপে
তেমনি বৃদ্ধি পায় । ২৯।
ঘৃত-মাখন যা'ই না ঢালিস্
হিংস্র-অসৎ বিষ-আগুনে
বিনা জলে নিড়বে না তা'—
এটা কিন্তু রাখিস্ মনে । ৩০ ।
আগুন যেমন দাউ দহনে
সৰ্ব্বনাশা হ'য়ে ওঠে,
জলই তা'কে নিরোধ করে
জলই তাহার ঔষধ বটে ;
অগ্নির জল যেমন বিপরীত
অগ্নিকে নিরোধ ক'রেই থাকে,
অসৎ যেখানে উদ্ধত হয়
সৎ-কঠোর তাই নিরোধে তা'কে ;
বিষ যেখানে প্লুত আহ্বানে
ডাকে বিনাশে মর্য্যাদাভরে,
বিষ নাশে যা'—শ্রেষ্ঠ সেথায়
বিষকে নিরোধ তাহাই করে ;
অগ্নিকে যদি শীতল করিতে
বিষকে অমৃত করিতে পার,
তবে তো তাহা শিষ্ট বিনায়ন—
বৃদ্ধিতে করে সবা'য় বড় । ৩১ ।
অপকর্ম্ম যা' করেছ
সংশোধনের সন্ধিৎসায়
নিরোধ করার কেন্দ্রগুলি
প্রস্তুত রেখো সদ্-দিশায় । ৩২।
ব্যতিক্রমী বেহাল চলায়
দিস্ নে আমল কোন দিনে,
সার্থকতার দেখিস্ স্বপন
রাখিস্ নে ঝোঁক কোন হীনে । ৩৩ ।
নজর রাখিস্ শুদ্ধ-সাফ
আরিল দৃষ্টি এড়িয়ে চল,—
এ অভ্যাসে অন্তরেতে
কমই ঢোকে জঙ্গলা মল । ৩৪ ।
অসৎ ক্রিয়া বন্ধ রেখে
সৎ শুভকে আগলে ধর,
সাবধানেতে শিষ্ট থেকে
সৎ দীপনী যা'-সব কর্ । ৩৫।
স্বার্থপর আর দুষ্টুবুদ্ধি
যা'রা—তা’রাই শাতন হয়,
ছেদ, পতন আর পাতনের কিন্তু
তা'রাই জানিস্ চায় জয় ;
সাপুড়েই যদি চাস্ হ'তে তুই
বিষদাঁত তা'র রাখিস্ ভেঙ্গে —
চাল-চলন ও চরিত্রটার
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে রঙে । ৩৬।
শুভটাকে ঢাল করিস্ তুই
অশুভের সনে খেলার বেলা,
কুশলীকৌশলী সৎ নয়নে
দেখে-শুনে করিস্ খেলা । ৩৭ ।
ঊর্জ্জীতেজা বজ্র যখন
বিপুল গৰ্জ্জমান,
বিদ্যুৎচালী ব্যবস্থায় তো
হয় তা'র প্রয়াণ । ৩৮ ।
বীর্য্যতেজা পরাক্রম যেই
অসৎ-নিরোধ করল না,
নিরোধ-শক্তি অসৎকে তোর
বিদায় করতে পারল না । ৩৯।
নিষ্ঠা-আনুগত্য-কৃতির
দীপ্ততেজা আসনখানি,
ভক্তি অধিষ্ঠিত র'লে
অসৎ-নিরোধ করেই,—জানি । ৪০ ।
অসৎ-নিরোধ প্রস্তুতিটা
সব সময়ে অটুট রেখো,
যেথায় অসৎ করবে নিরোধ
সজাগ চোখে চেয়ে দেখো । ৪১।
দুষ্ট কিছু দেখলে আগেই
রেখো নিরোধ-প্রস্তুতি,
তা'র দমনে ডেকে এনো
স্বস্তিসহ সঙ্গতি । ৪২ ।
বিক্রম আর ঊর্জ্জনাকে
উপযুক্ত প্রস্তুতিতে,
তৎপর রেখো সব সময়েই
অসৎ স্তব্ধ হয় যা'তে । ৪৩ ।
অসতেরই আক্রমণে
শক্ত করিস্ প্রতিরোধ,
উদ্দীপনী উর্জ্জনারই
প্রস্তুতিতে কর্ নিরোধ । ৪৪ ।
পরাক্রমী বীর্য্যটাকে
এমনি ক'রে সাজিয়ে রাখিস্—
দেখলে কারো নির্য্যাতনা
শিষ্ট বেগে নিরোধ করিস্ । ৪৫।
পরাক্রমী সম্বেগ নিয়ে
শিষ্ট সুযুক্ত ঊর্জ্জী কথায়
অসৎ-নিরোধ চলবি ক'রে—
সৎসন্দীপী তৎপরতায় । ৪৬ ।
প্রস্তুতি ও সাবধানতা
চলার সাথে সর্ব্বাঙ্গীণ
অটুটভাবে বিনিয়ে রেখো—
সত্তা তোমার না করে ক্ষীণ । ৪৭।
অনুকম্পাই দুর্ব্বলতা
যা'রাই ভেবে আছে ভোর,
তা'র সমীচীন নিয়ন্ত্রণে
বুঝিয়ে দিও তা'র কত জোর । ৪৮।
অনুকম্পী অনুচৰ্য্যায়
পরিবেশ-বাঁধন শক্ত যেমন,
ব্যতিক্রমী দুষ্ট চলা
ততই জানিস্ হয় নিয়মন । ৪৯।
দুষ্ট দৃঢ় অসৎ হ'লে—
যখনই সেটা পাবি টের,
দূরে রাখিস, তফাৎ থাকিস্
শুভচর্য্যায় রাখিস্ জের । ৫০।