ইষ্টভৃতি নিয়ে দীপরক্ষী ১ম খন্ড

ইষ্টভৃতি নিয়ে দীপরক্ষী ১ম খন্ডের ৩, ৪১, ১৫৩, ১৯৭ পৃষ্ঠায় আলোচনা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো দেয়া হলো।

১৮ই বৈশাখ,১৩৬০ (২রা মে, ১৯৫৩)

……
বিকালে শ্রীশ্রীঠাকুর যতি-আশ্রমের বারান্দায় এসে বসেছেন। কথাবার্তা চলছে।

শ্রীশ্রীঠাকুর—ঐ যে আছে, যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি, করলে কাটে মহাভীতি—মহাভীতি মানে সকলে ধ’রে নেয় মত্যুভয়। তাই ওখানে বদলায়ে কওয়া লাগবেনে, ‘বহুৎ ভীতি’। যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি, করলে কাটে বহুৎ ভীতি।

আমি—মহাভীতি মানে কী?

শ্রীশ্রীঠাকুর—মহাভীতি মানে বড়-বড় danger (বিপদ), বোমা পড়া-টড়া এই সব।

আমি—Accident (দৈব দুর্ঘটনা)-গুলো কি এর মধ্যে পড়ে?

শ্রীশ্রীঠাকুর সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়লেন।

৯ই আশ্বিন, শনিবার, ১৩৬০ (২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯৫৩)

……
জীবনদা—আমার সাথে এই যে ডাক্তার-দা এসেছেন, ইনি বলছেন, ইষ্টভৃতি রোজ না ক’রে মাসে কিছু টাকা দিলেই তো হয়।

শ্রীশ্রীঠাকুর—ইষ্টভৃতির ভয়ানক গুণ। ওটা আগন্তুক অনেক ব্যাঘাত ঠেকিয়ে দেয়। আমাদের গীতাতে আছে, ইষ্টকে না দিয়ে যে খায় সে চোর হয়। এমন-কি, আমেরিকান সাহেব জেমস্-ও বলেছেন যে, এইভাবে দেওয়ার action (ক্রিয়া) অসম্ভব। ওটা করাই লাগে। ইষ্টভৃতিটা তো চাঁদা নয়, গুরুকে যা’ দিত সেই বার্ষিকীও নয়। এর যে কী গুণ, তা’ ঠিকমত করলেই বোঝা যায়। যখনই চলার পথে কোন ভুল হয়, তখনই বুঝতে হবে ইষ্টভৃতিতে কোন গন্ডগোল আছেই। অত simplest (সরলতম) এবং strongest (সব থেকে শক্তিশালী) পথ আর নেই। ওটা দৈনিকই করতে হবে এবং ত্রিশ দিনের দিন পাঠিয়ে দিতে হবে।

জনৈক দাদা—আমি দৈনিক ইষ্টভৃতি করি বটে, কিন্তু ত্রিশ দিনের দিন পাঠানো হয় না।

শ্রীশ্রীঠাকুর—তাহ’লে ঐ জায়গায় আমার গণ্ডগোল আসার পথ খোলা থাকে। আর, মাথায় বিষয় ও ব্যাপারগুলির adjustment (নিয়ন্ত্রণ) ঠিকতম হয় না। আমার বাবা ব’সে আছেন দূরে। আমি যদি ত্রিশ দিনের দিন না পাঠাই তাহ’লে তিনি যে না খেয়ে থাকবেন, এইরকম চিন্তাটি ক’রে নিলেই হয়।

উক্ত দাদা—আমার এই ইষ্টভৃতি করা নিয়ে কত লোকে ঠাট্টা করে, নানারকম propaganda (প্রচার) করে।

শ্রীশ্রীঠাকুর—আমি খাই, আমি পায়খানায় যাই, এ সব জিনিস নিয়ে মানুষ যদি propaganda (প্রচার) করে তাহ’লে তো সে জীবনধারণের উপযোগী যা’ তাই propaganda (প্রচার) করছে। এইরকম করতে-করতেই তারা একদিন বুঝতে পেরে বলে ওঠে—’ও, ও-বুড়ো যা’ বলেছিল তা’ ঠিকই বলেছিল।’

উক্ত দাদা—দেশের অবস্থাই এমন হয়েছে।

শ্রীশ্রীঠাকুর—দেশ দিয়ে আমি করব কী? আমি নিজে কতখানি ঠিক হয়েছি তাই দেখা দরকার।

উক্ত দাদা—ঠাকুর যদি আমার মনের বলটা বাড়িয়ে দেন।

শ্রীশ্রীঠাকুর—এই পথে চলতে থাকলেই বল বাড়ে। ডাম্বেল হাতে ক’রে exercise (ব্যায়াম) করতে-করতেই গায়ের জোর বেড়ে যায়।
…….

৩০শে আষাঢ়, শুক্রবার, ১৩৬২ (১৫ই জুলাই, ১৯৫৫)

…….
শ্রীশ্রীঠাকুর—আমার কান মাঝে-মাঝে চুলকায়।

ডাঃ নাগচৌধুরী কান পরীক্ষার যন্ত্র আনিয়ে ভালভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের কানের ভিতর পরীক্ষা করলেন। তারপর আসনে বসলেন। ভারত সরকার ওঁকে বাগদাদে পাঠাচ্ছেন সে-কথা জানালেন এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেন।

শ্রীশ্রীঠাকুর—ওখানে যাচ্ছেন। নাম ঠিক রাখবেন, আর ঠিক রাখবেন ইষ্টভৃতি। ইষ্টভৃতির মত মালই নেই। কাঁটায়-কাঁটায় করবেন নিজের daily (প্রতিদিন) খাওয়ার মতন। আর, ঠিকমত পাঠাবেন। এর যেন কোন অন্তরায় না আসে। এই ইষ্টভৃতি নিয়ে যে আমার কত experiment (পরীক্ষা) হ’য়ে গেছে তার ঠিক নেই। কলকাতায় বোম পড়ল, দাঙ্গা হ’ল, কিন্তু তখন একটা সৎসঙ্গীও মারা যায়নি। অবশ্য সে-কথা কথা না। মরব না বা আমার কিছু হবে না, এইরকম কোন কামনা নিয়ে যেন কিছু করা না হয়। আমি ক’রে যাব, মনে করব—আমার ইষ্ট! তুমি খাও, খেয়ে তৃপ্ত হও।

২১শে ভাদ্র, বুধবার, ১৩৬২ (৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫)

……
বিকালেও শ্রীশ্রীঠাকুর কয়েকটি লেখা দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি লেখার আরম্ভে আছে一

প্রত্যহ ইষ্টভৃতি ক'রো
অতি প্রত্যুষে
বিনা সর্ত্তেই….

লেখার শেষে জিজ্ঞাসা করলাম-অতি প্রত্যুষে বলতে কি সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্বে’ বুঝব?

শ্রীশ্রীঠাকুর一হ্যাঁ, সেইজন্য ‘অতি’ বলেছি।

আমি一কিন্তু সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্বে হ’লে সেটা পূর্বদিনের মধ্যে গণ্য হবে না?

শ্রীশ্রীঠাকুর一না, ব্রাহ্মমূহূর্ত্ত’ অনেক আগেই আরম্ভ হয়।

আমি一অনেকে ঊষাপান করেন, সেটা ইষ্টভৃতি না ক’রে করা যায়?

শ্রীশ্রীঠাকুর一তা’一ইষ্টভৃতি ক’রেই করা ভাল! ইষ্টভৃতি ক’রে ফেললে মানুষ অনেকখানি vitally enriched (জীবনীশক্তিতে সমৃদ্ধ) হয়।
…….