ইষ্টভৃতি-মন্ত্র, ব্রতভঙ্গ

সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউস প্রকাশিত ‘উপাসনা’ পুস্তিকায় ২০-২১ পৃষ্টায় ইষ্টভৃতি প্রসঙ্গে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেগুলো নিম্নে দেয়া হল।

যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি

যাজন, যাজন, ইষ্টভৃতি—সৎসঙ্গী মাত্রেরই অবশ্য পালনীয় নিত্য ব্রত। সদাচারসম্পন্ন হইয়া নিষ্ঠা ও অনুরাগের সহিত ইষ্টের নামধ্যানপরায়ণ হইয়া চলা, অনুসন্ধিৎসু সেবা ও সাহচর্য্যের সহিত পারিপার্শ্বিকের ভিতর তাঁহার গুণানুকীৰ্ত্তন করা—আর, ইষ্টভরণের মধ্য-দিয়া নিজের সর্ব্বশক্তি ইষ্টে কেন্দ্রায়িত করিয়া সত্তাকে অটুট করিয়া তোলা—ইহাই যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি। কিন্তু সব কিছুরই মূলে থাকা চাই ইষ্টানুরাগ। অনুরক্ত হৃদয়ে তাঁহাকে অনুসরণ করিলেই মানুষ প্রকৃত মঙ্গলের অধিকারী হয়।

প্রতিদিন প্রাতে সৰ্ব্বকর্মারম্ভে শ্রদ্ধার সহিত ইষ্টভৃতির অর্ঘ্য নিবেদন করিবে। এই নিবেদিত অর্ঘ্য প্রতি ৩০ দিনে সদক্ষিণায় ও সংগঠনী ১২ পয়সাসহ ইষ্টসকাশে তাঁহারই নির্দ্দেশমত স্বহস্তে কিংবা স্বয়ং ডাকযোগে প্রেরণ করিয়া দুইজন ইষ্টভ্রাতাকে নিজ হইতে দুইটি ভোজ্য প্রদান করতঃ পারিপার্শ্বিকের সেবার জন্য কিছু অর্থ সংরক্ষণ করিবে।

ইষ্টভৃতি-মন্ত্র (সংস্কৃত)

জীবনং করুণাসিন্ধো ! জগতস্ত্বং জগৎপতে।
ভবতঃ কৃপয়া লব্ধং জীবনং সফলং মম ।।
প্রাগেব সর্ব্বকার্য্যেভ্যস্তবৈব ভোগ-তৃপ্তয়ে।
ইষ্টভৃতিঃ কৃতাস্মাভিঃ কৃপয়া গৃহ্যতাং প্রভো ।।

ইষ্টভৃতি-মন্ত্র (বাংলা)

জীব-জগৎ-জীবন-কারণ করুণাময় স্বামী!
তোমার দয়ায় লভেছি জনম, সকলি পেয়েছি আমি।
আজি এ প্রভাতে কৰ্ম্মারম্ভে তোমারি ভোগের লাগি’
ইষ্টভৃতির অর্ঘ্য দিতেছি-শ্রীচরণে কৃপা মাগি।

ইষ্টভৃতি-ব্রতভঙ্গে

অন্ততঃ একদিন হবিষ্যাশী হইয়া সম্পূর্ণ অনিবেদিত অর্ঘ্য অথবা অপারগপক্ষে যথাসম্ভব নিবেদন করিয়া পুনরায় ব্রত নিয়মিতভাবে পালন করিয়া যাইতে হইবে।

ইষ্টভৃতির নিবেদিত অর্ঘ্য অন্য কাজে ব্যয় করিলে বা হারাইয়া ফেলিলে, নষ্ট কিংবা অপহৃত হইলে—অনুতাপের সহিত খ্যাপনসহ ভিক্ষা করিয়া নষ্ট বা অপহৃত অর্ঘ্য সংগ্রহ করিয়া পরদিন হবিষ্যান্ন গ্রহণ করিয়া তৎপরদিন ঐ সংগৃহীত অর্থ মন্ত্র পাঠ করিয়া নিবেদনান্তর রাখিয়া দিতে হইবে।

হবিষ্যান্ন ব্রত

হবিষ্যের দিন সংযত ভাবে ইষ্টমন্ত্র জপ পরায়ণ হইয়া থাকা, ত্রিসন্ধ্যা স্নান করা, বৃথা বাক্যালাপ বর্জন এবং মধ্যাহ্নে হবিষ্যান্ন গ্রহণ করাই বিধি।

হবিষান্নে আতপ চাল, সৈন্ধব লবণ, মুগ বা মটর ডাল সিদ্ধ, তিল বাঁটা, কাঁচাকলা সিদ্ধ, পাকাকলা, ঘৃত, আম,দুধ, যব, হরীতকী ও আমলকী গ্রহণ করা যায়। দিনে একবার পরিমিতভাবে বিধিমত হবিষ্যান্ন গ্রহণ করিতে হইবে এবং তাহা ছাড়া নেহাৎ তৃষ্ণাবোধ করিলে অপরাগপক্ষে জল গ্রহণ করিতে পারা যায়।