অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “কপট-টান” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১০০ – ১০৮ পর্যন্ত মোট ৩৯ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ০১ – ৩৯ বাণীসমূহ দেয়া হলো।
কাপট্য যে দাপট পায়ে
চলছে হৃদয় ছেয়ে,
স্বস্তি ওরে কোথায় পাবি ?
দীর্ণ হৃদয় ভয়ে। ১।
নিষ্ঠা নাইকো যা’র—
বিষ্ঠা-লোলুপ তা'রাই তো হয়
অসতে আব্দার। ২।
নিজের ধান্ধায় তুমি থাক—
লাভ, অলাভ বা অপচয়ে,
তোমার ধান্ধায় যে-জন থাকে
তা'র ধান্ধা এড়িয়ে ভয়ে ;
ধান্ধা বহার বান্দা তোমার
যতই দরদ থাক্ না তা'র,
তোমার ধান্ধা বইবে কি সে
ধান্ধা ব'য়ে চল কি তা'র ?
স্বার্থ-খোঁজে বেড়াও ঘুরে
পরের মর্ম্ম বুঝবে কি ?
নিজের বেলায় খুব তো হিসাব
পরের বেলায় অবিবেকী । ৩।
প্রাণন-অর্থ ব্যর্থ ক'রে
স্বার্থ খুঁজে চললি ঢের,
ইষ্টার্থকে ক'রলি ব্যর্থ,
ঘুচলো কি তোর ভাগ্য-ফের ? ৪।
আত্মস্বার্থে শকুন-দৃষ্টি
এমনতর লুব্ধ প্রাণ,
যতই ভঙ্গী দেখাক তা'রা
হয় না তা'দের ইষ্টে টান। ৫।
স্বার্থসেবার ইন্ধন ক'রে
প্রণয়-গীতি অনেক গাও,
নেবার বেলায় প্রিয়'র দরদ
দেওয়ায় দেও না একটু ফাও। ৬।
স্বার্থনেশায় ছিন্ন-ভিন্ন
নিয়ে শুধু পাওয়ার আবেগ,
লোক-দেখানো চালে চ'লে
ঠোকায় ফোটে ধাপ্পা-বেগ। ৭।
পেলি এত, দিলি কত ?
স্বার্থভরা হৃদয় তোর,
ফাঁকিবাজির দুষ্ট চাওয়া
দেবেও তেমন জনম ভোর। ৮।
স্বার্থপোষা কামের নেশা
নিষ্ঠাহারা চিরদিন,
যখন যেটায় লাগে ভাল–
ভোগনেশারই রয় অধীন । ৯।
অনেকই পাও, অনেকই নাও,
দেওয়ায় দিলে একটি ফুল,
পাওয়ার লোভে সদবৃত্তি সব
খোয়ালি কত, ভাঙ্গলি কুল । ১০।
ধাপ্পাবাজির খেলা নিয়ে
মশগুল তবু চোরের মত,
দিসনে কিছু, পাস্ যে কত !
হ’চ্ছ নিজে বজ্রাহত। ১১।
হাজার পেয়েও
পাসনি বলিস্
চোখটি কি তোর অন্ধ ?
পাবি কী তুই ?
পাওয়ায় যে ছাই,
হ'লি যে কবন্ধ। ১২।
অকৃতজ্ঞ যেই হ'লি তুই
বিশ্বস্তিকে করলি শেষ,
উন্নতিরও দফা-রফা,
বেতাল চলায় হ'লি নিকেশ। ১৩।
হীন মন তোর কিসে ?
যা'দের দিয়ে উপকার পেলি
অল্প-বিস্তর যাই না হো'ক,
কাজটি তোমার যেই ফুরালো
কৃতঘ্নতার ধরলো ঝোঁক,—
এই তো তা'রই দিশে। ১৪।
আসল কথায় যা'রই তুমি
সত্যি সহজভাবে,
তা'রই স্বার্থে সেই চাহিদায়
জীবনকে চালাবে ;
ব্যতিক্রমটি এরই যতই
দেখবে পদক্ষেপে,
ততটা তা'য় নও তখনো
বুঝবে অনুভবে। ১৫।
সন্ততিতে মমত্ব যা'র
ইষ্টানুগ-পন্থারোধী—
নিরয় তাহার হাতের গোড়ায়
হানায় হত করে বোধি। ১৬।
পূজার ঘুষে ইষ্ট পূজে—
ইষ্ট কোথায় তা’র ?
স্বার্থই ইষ্ট, তা'রই লাগি'
ঐ ভানই দরকার। ১৭।
ইষ্টসেবার বাহানা নিয়ে
টাকার দাবী যেই করে,
সন্দেহ তুই রাখিস্ সেথায়
কখন কেমন রূপ ধরে। ১৮।
প্রেষ্ঠ ব'লে বলছ যাঁ’রে
ধাপ্পাবাজি তাঁ'র সাথে —
আপদ-বিপদ কুটিল-কুভাব
কুড়িয়ে নেহাৎ নিচ্ছ মাথে। ১৯।
কুটিল চোখে ইষ্টে দেখে
চ'লে-ফিরে কুটিল পায়ে—
সৰ্ব্বনাশে ঝাঁপ দিবি ক্যান্
ঠেক্বি কেন জীবন-দায়ে ? ২০ ।
ভণ্ড নিষ্ঠা বাচক ভক্তি
শক্তি কোথায় তা'র?
নিজেকে নিয়ে মত্ত সে যে
সবেই অহঙ্কার। ২১।
নিষ্ঠাতে তোর থাকলে গলদ
এৎফাঁকে থাকে খামখেয়াল,
ইষ্ট দিয়ে কী হবে তোর
চলনই যে তোর ব্যর্থ ভয়াল। ২২।
গলতি নিষ্ঠার প্রথম লক্ষণ
নিজ চাহিদা প্রধান করা,
নিজ চাহিদা যা' সব ক'রে
পারলে ইষ্টচর্য্যা করা। ২৩।
নিষ্ঠাবিহীন প্রীতি যা'দের
স্বার্থপূজায় উচ্ছলা,
নাইকো প্রীতি একটু তা'দের
নিষ্ঠাও তা'ই চঞ্চলা। ২৪।
অর্থকরী ইষ্টচর্য্যায়
নিষ্ঠা-প্রীতির কমই দম,
স্বার্থপূজার অর্থ নিয়ে
আগ্রহ আনে ব্যতিক্রম। ২৫।
ফাঁকিবাজি ধাপ্পা দিয়ে
প্রিয়র থেকে নেওয়ায় সুখ,
প্রিয় তোমার কোথায় ক্রিয় ?
দীর্ণ করলি নিজের বুক ! ২৬।
ভালবাসার নাইকো তেজ
মাথা নেড়ে করে হুঁ,
প্রেষ্ঠ নেশার মিথ্যা ভড়ং
স্বার্থসেবার রং বহু। ২৭।
ভালবাসিস্ অনেক বলিস্
নিদেশ মেনে চলিস্ না,
ঠিকই জানিস্ প্রিয়কে তুই
স্বার্থ ছাড়া মানিস্ না। ২৮।
প্রণয় রে তোর ব্যবসাদারী
স্বার্থসেবায় সংক্ষুধ,
উন্নতি তোর হবে কিসে
প্রেয়ার্থেই যে অক্ষুধ। ২৯।
প্রিয়'র স্বপন দেখুক যতই
প্রিয়'র কথা বলুক না,
সক্রিয় দরদী না হ'লে
আস্থা তা'তে রেখো না। ৩০।
প্রীতির বাহানা করছ কেবল
দরদ তা'তে নাই,
ডুবলি যে তুই অতল জলে
ব্যর্থ জীবনটাই । ৩১।
প্রীতির ধাপ্পাবাজি নিয়ে
করতে বিভব আত্মসাৎ,
দুর্দ্দৈব যা' করছ সৃষ্টি—
তোমাতেও তা' হানবে ঘাত। ৩২।
প্রীতির নেশা নাই—তবুও
এমন যা'রা প্রীতি দেখায়,
নেবার ফন্দী ধুরবাজিতে
চলা-বলা সবই চালায়। ৩৩।
ধাপ্পাবাজি ফাঁকির ভড়ং
ভণ্ডচালের কুটিল ছল,
ক'দিন চলে তা' বল আর ?
নিয়েই যায় তা' রসাতল। ৩৪।
ফাটবে যখন ফুটবে যখন
ধাপ্পাদরদ আগুন হ'য়ে,
ফাল্গুন মাসের রং তামাসা
তখনও কি তোর চলবে বয়ে ? ৩৫।
অন্তরে তোর পুষলে বিষাদ
নিষাদ হ'য়ে লাগবে পাছ,
প্রেষ্ঠকে তোর ছিনিয়ে নেবে
থাকবি না আর তাহার কাছ। ৩৬।
লোভের বাণে নিঠুর টানে
শূন্য ক'রে হাদয় তোর,
মাতাল নিষাদ ব্যভিচারে
রাখলি না তুই প্রেষ্ঠে তোর। ৩৭।
ইষ্টার্থেরই আপুরণায়
যে-নেশাটি ছাড়লি না,
ব্যক্তিত্ব তোর সেই নেশাতে
সেটাও কি তুই বুঝলি না?
চর্য্যারত তা'তেই তুমি
তেমনতরই চলৎশীল,
তা'তেই তোমার র’বেই যে আঁট
অন্য কিছু তেমনি ঢিল। ৩৮।
স্বার্থসেবার ফন্দী নিয়ে
আত্মদানের অছিলায়
নানান ধাঁজের রূপ নে' চলে
স্বার্থপোষী উচ্ছলায়,
পুণ্যপ্রদীপ অন্তরে তা'র
অন্ধতমেই নিভে যায়,
ইতোভ্রষ্ট-স্ততোনষ্টে
জীবনটাকে সে-ই হারায়,
বৃত্তিই তা'র ধৃতি হ'য়ে
মৃতিপ্রবণ মর্ষণায়,
এলোমেলো হ'য়ে সে-জন
স্বস্তিটাকে হারায়ই হারায়। ৩৯।