কর্ম্ম প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৪র্থ (১-৫০)

অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ডে “কর্ম্ম” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১০৪ – ১২২ পর্যন্ত ১১৪ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ১ – ৫০ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

সৎকর্ম্ম মানেই জানিস্ 
বাঁচে বাড়ে যে-চৰ্য্যায়,
যেমনতর ব্যবহারে
উচ্ছলিত করে তা'য় । ১ ।
দক্ষতা আছে, ত্বারিত্য নাই—
করে ব্যর্থ, আনে বালাই । ২।
ত্বারিত্যবিহীন দক্ষতা
আনেই কিন্তু ব্যর্থতা । ৩।
কৃতঘ্ন যা'র কাজ—
সম্বৰ্দ্ধনী উন্নতিতে
পড়েই যে তা'র বাজ । ৪।
দক্ষতা তোমার থাক্ না হাজার
ত্বারিত্য যদি না-ই র'লো,
নিষ্পাদনও তেমনি হবে—
সার্থকতায় কী বলো ? ৫।
দক্ষতা তোমার অনেক আছে
প্রয়োজন কা'রো মিটল না,
ত্বারিতাহীন সে-দক্ষতায়
কী হবে কা'র, ভাব না ? ৬।
দক্ষতায় যা'র নাই ত্বারিত্য
ক্লীব দক্ষ সে ঠিক জানিস,
ধীরস্রোতা জ্ঞান-দীপনা
নিথর চলায় চলেই দেখিস্ । ৭।
সময়ের সীমা বুঝে নিও
প্রয়োজনের সীমা ঠিক ধ'রে,
করতে হবে কী—সেই হিসাবে
নিষ্পাদন ক'রো ঠিক ক'রে । ৮।
কৃতি-সুন্দর ক্ষিপ্ত হ'বি
ধরবি, যে-সব কাজে,
নিষ্ঠানিপুণ দক্ষ হ'বি,—
নইলে হ'বি বাজে । ৯।
ক্ষিপ্র চিন্তা, ক্ষিপ্ৰ কৰ্ম্ম—
সঙ্গতিশীল সুসন্ধানে,
কাজগুলি সব কর নিষ্পাদন
দক্ষ-ক্ষিপ্ৰ সন্দীপনে । ১০।
ক্ষিপ্রকৰ্ম্মা হ'য়ে চলিস্‌
সঞ্চারণ করিস্ ক্ষিপ্রকৃতি,
শিষ্ট-পুষ্ট ধৃতি ক'রে
কৃতিপূর্ণ রাখিস্ প্রীতি । ১১।
কাজ তোমাকে পোষণ করুক
ত্বরিত দক্ষ তৎপরতায়,
তেমনি তা'কে বিনিয়ে নিও
স্বতঃসিদ্ধ দক্ষতায় । ১২।
বিহিতভাবে করবে যেমন
ত্বরিত করার ঊর্জ্জনায়,
বিভবও বাড়বে তেমনতর
বিধিমত উচ্ছলায় । ১৩।
বোধবিদ্যা থেকেও যা'দের
করায় অবসাদ,
উৎক্রমণী অনুনয়ন
সাধেই তা'দের বাদ । ১৪ ।
ব্যতিক্রমী কৰ্ম্ম ক’রে
পাওয়ার চর্য্যা হয় না সফল,
করতে হবে সেই নিয়মে
যা'তে তুমি না হও বিফল । ১৫।
ভুলও যদি হয় করতে কিছু,—
আনতে তাহার সমাধান,
ততক্ষণ তা' ছেড়ো নাকো
শুদ্ধ না হ'লে তা'র বিধান । ১৬।
সমীচীন নয় যেখানে যেটা
গায়ের জোরে ক'রো না,
অশিষ্ট অসৎ যা'-কিছু তা'র
প্রশ্রয় দিতে যেও না । ১৭।
যা'তে নিষ্ঠা না থাকে তোর
কিংবা ভঙ্গপ্রবণ হয়,
পারগতা তা'য় হারিয়ে যাবে
ব্যর্থতারই হবে জয় । ১৮।
সৎ যা' বুঝিস্‌ না করলে তা'
বাস্তবতার সন্দীপনায়,
ক্রমে-ক্রমে কাপুরুষতা
ডুবিয়ে দেবে ব্যক্তিত্বটায় । ১৯।
শুভ কৰ্ম্মে শুভই আসে
কপালেও রয় ঐ শুভ,
ধৃতিপোষণ স্মৃতি আনে,—
এটা কিন্তু জেনোই ধ্রুব । ২০ ।
ভাল-মন্দ যা'ই কর না
মস্তিষ্কে তা' মজুতই রয়,
নিষ্ঠানিপুণ কৃতি-আবেগে
করবে যেটা সেটাই হয় । ২১।
মন্দ ক'রে ভাল হবে
আগলে নেবে শুভ তোমায়,—
সেটা কিন্তু ভেবোই নাকো,
বাস্তবে তা' নয়ই নয় । ২২ ।
শুভকর্ম্মে আসেই শুভ,
মন্দে কিন্তু মন্দই হয়,
বিধির বিধান এমনতর
কপাল জুড়ে সেটাই রয় । ২৩।
কেউ যদি তোমার ভালও করে
তুমি মন্দ করলে তা'র
শুভ কিন্তু মন্দে মিশে
করবে তোমায় ছারখার । ২৪।
কেউ যদি তোমার মন্দ করে—
ঠেকিয়ে সে-সব করলে ভাল,
ভাল করার বহর তোমার
ঘুচিয়ে দেবে সকল কালো । ২৫।
যে-জন তোমার করছে ভাল
হৃদয় দিয়ে প্রাণপণে,
তা'র মন্দ করলে তোমার
দুর্গতি রুখবে কোন্ জনে ? ২৬ ।
অভ্যাসবশে যা' পেয়েছ
করবেও তা' তুমি হামেহাল,—
যদি তোমার না থাকে করার
নিয়মনী শক্ত হাল । ২৭ ।
কোন্ জিনিসটি রাখলে কোথায়
কাজের সুবিধা হয়—
বুঝে-সুঝে তেমনি ক'রো
নইলে অকাজ হয় । ২৮।
প্রয়োজনের আগেই যেন
প্রস্তুতি তোর বজায় থাকে,
যা'র অভাবে আপদ-বিপদ
ধ'রেই থাকে পাকে-পাকে । ২৯।
গাফিলতি বা অলসবুদ্ধি
রাখিস্ নাকো তুই করায়,
তড়িৎ-ঘড়িৎ স্থিরচর্য্যায়
অটুট আয়ত্ত করিস্ তা'য় । ৩০ ।
অলস বোধের দিও না প্রশ্রয়
শরীর যদি ভাল থাকে,
স্বাস্থ্যটাকে নিটোল রেখো,
নিরুদ্ধ ক'রো না করাটাকে । ৩১।
সাহায্য নিও না ততক্ষণ
যতক্ষণ তুমি পারো,
নেহাৎ যদি অশক্ত হও
নিও—যখন নারো । ৩২।
সাহায্যের তোয়াক্কা করবি যত
পারগতাও কমবে তত,
বোধবিচার আর কলকৌশলে
বাড়বে শক্তি, করবে যত । ৩৩।
মনে-মুখে এক হ'য়ে
কৃতি-কুশল হয় যেমন,
নিষ্পাদনাও তেমনিভাবে
উদ্‌যাপিত হয় তেমন । ৩৪ ।
আবার বলি শোন্ ওরে শোন্ —
যা' করতে যা'-যা' লাগে
সেই তা' নিয়েই লাগবি কাজে,
নইলে কাজটা হবেই বাজে—
ভুলিস্ নাকো তা' কখন । ৩৫ ।
যেমন ক'রে করলে যা'-সব
শিষ্ট-সুন্দর সুষ্ঠু হয়,
আপদগুলি এড়িয়ে সে-সব
সার্থকতায় এনোই তা'য় । ৩৬।
করবি কী কাজ—নে বুঝে তুই
খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে সব-কিছু,
নিষ্পন্ন কর সুন্দরভাবে
বোধবিবেকের চ'লে পিছু । ৩৭ ।
যে-কাজেতেই হও না ব্রতী
উপায়টাকে ছেড়ে দিয়ে,
খরচ-বরচ লাখ কর না
যাবেই সেটা ব্যর্থ হ'য়ে । ৩৮ ।
সিদ্ধান্তকে ঠিক ক'রে নিস্
দেখে-শুনে-বুঝে,
সেই তালেতে কাজ ক'রে যা
ধী-এর চ'ক্ষে সুঝে । ৩৯ ।
নিষ্ঠাবিহীন কৃতি যেথায়
চলা-বলায় আবোল-তাবোল,
সন্দীপনী কৃতি এলেও
আনে বিভ্রাট, হট্টগোল । ৪০।
নিষ্ঠা যদি না থাকে তোর
ধরবি যেটা পারবি কম
অটুট নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতি
যা' ধরে—তা'ই নিয়ে উদ্যম । ৪১ ।
‘পারি যেন' বলিস্ কেন ?
ঝাঁপ দিয়ে পড় পারার কাজে,
পারগতাই পারিজাত আনে,
না করলে তা' হয়ই বাজে । ৪২।
পারতে হ'লেই নিষ্ঠা লাগে,
ধী-সহ লাগে কুশল বোধ,
কলকৌশল বিনিয়ে সেটা
নিষ্পাদনে করবি শোধ । ৪৩।
‘পারি যেন' বলার চাইতে
পারার স্রোতে ঝাপিয়ে পড়্,
করায় পারা উঠুক ফুটে—
নিষ্পাদনে শ্রেয় ধর্ । ৪৪।
কৃতিপথে ব্ৰতী হ'য়ে
করলে করার উপাসনা,
শিষ্ট নেশার নিবিষ্টতায়
হয়ই সিদ্ধ সে-সাধনা । ৪৫ ।
'পারি যেন' বললেই কিন্তু
দ্বিধাবিদ্ধ রয়ই মন,
বীর্য্যহারা আবেগ তা'তে
ধুঁকেই ওঠে অনুক্ষণ । ৪৬ ।
ধর, কর, পেরে ওঠ,
পারগতার পুরস্কার—
উদযাপনে সিদ্ধ হ'য়ে
লাভ ক'রে নাও দয়া তাঁ'র । ৪৭।
বজ্রদ্যুতির গভীর সুরে
আলোকদ্যুতিত্ কাঁপিয়ে মন,
নির্ভীক হ'য়ে পড়্ ঝাঁপিয়ে
সিদ্ধ করতে তোর সাধন,
গ'র্জ্জে উঠুক বুকের আগুন
ভরা ফাগুনের ঘূর্ণি নিয়ে,
ওঠ্ না বুকে সাহস বেঁধে
দৃপ্ত বেগে ফিনিক্ দিয়ে,
অসৎ যা'-সব দূর ক'রে দে
সজাগ রেখে সৎ-এর ঘর,
ধৃতির সুরে কৃতি নিয়ে
সত্তাটাকে উসকে ধর্ । ৪৮।
করবি যেটা মাথায় সেটা
বুঝে-সুঝে বিনিয়ে নে,
কৃতিপথে যেমন লাগে
তেমনি তা'কে ধরিয়ে দে । ৪৯।
'কিন্তু' বুলি ছেড়ে দিয়ে
হওয়ার ধারায় দেখ চ'লে—
পারগতা আসে কিনা
অমনতর সাবুদ হ'লে ! ৫০।

Loading