প্রজনন প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “প্রজনন” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২৩৫ – ২৪৪ পর্যন্ত মোট ৫১ টি বাণী রয়েছে।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

অভ্যাসেরই ঝরণা হ’তে
জন্মে সংস্কার,
সন্তানেতে বংশক্রমে
তা'রই তো সঞ্চার। ১।
পিতা ব'য়েই এলো যে তোর
অস্তিত্বেরই জীবন-ধারা,—
মাতা সেটা মূৰ্ত্তি দিল,
সত্তা হ'ল জীবন-ঘেরা। ২।
পিতামাতার মূর্ত্তনা যে
একায়িত তোর জীবনে,
ঐ নিয়েই তো সত্তা রে তোর
ফুটছে নিত্য তোর বিধানে। ৩।
স্বামীতে স্ত্রীর নাইকো নিষ্ঠা
স্ত্রীতে স্বামীর নাইকো টান,
এমনতর চলন যা'দের—
শ্রদ্ধাহারা হয় সন্তান। ৪।
সম্মিলনী জনন-ক্রিয়ার
ঊর্জ্জী-আকুল অভিসারে,
সাম্য হ'য়েও উদাম সম্বেগ
পূত ভ্রূণে নিবাস করে। ৫।
জন্ম নেবার পথই যা'দের
দুষ্ট ব্যতিক্রম,
নীচমনা তা'রা হ'য়েই থাকে
জেনেও করে ভ্রম। ৬।
শিষ্ট নিয়ন্ত্রণে কর
জন্মটাকে শক্তিমান্,
ভেঙ্গে-চুরে আপদগুলি
ক'রে ফেল মুহ্যমান। ৭।
বোধবিবেকী পরাক্রম
কু-জননে পায়ই ক্ষয়,
ব্যক্তিত্বটার ঊৎসর্জ্জনা
ক্রমে-ক্রমে হয়ই লয়। ৮।
কায়াতেই যে বস্তু-বিকাশ,
রেতঃ-অনুগ হয় কায়া,
রজঃ তাকে রঞ্জিত ক'রে
পরিমাপনে আনে মায়া। ৯।
রজঃ মানেই ঐ রঞ্জনা
যে-গর্ভে রেতঃ থাকে তাই,
গর্ভ-দানাই রঞ্জন-দ্যুতি
রঞ্জে রেতঃ বিধানটাই । ১০।
রঞ্জনাই তো বস্তুবিকাশ
গঠিত হয় যা'য় দেহ,
চিৎ ও সৎ-এর সম্বেদনায়
গ'ড়ে ওঠে চেতন-গেহ । ১১।
আনন্দ আছে, তাইতো বাড়ে
রেতঃ-অনুগ সমীচীন,
নয়তো বৃদ্ধি যায় গো থেমে
রেতঃ-দ্যোতনা যেথায় হীন। ১২।
জনন-বিভ্রাট যেই এলো রে
ক্রমে-ক্রমে রাষ্ট্র ছেয়ে—
লাখ ঐশ্বৰ্য্য থাক্ না কেন
আপদ্ সেথায় যাবেই বেয়ে। ১৩।
রাষ্ট্র-পূজার অর্ঘ্য জানিস্
সুজননের সুসন্তান,
যে-ঐশ্বর্য্যে দেশবাসী সব
আপদ হ'তে পায়ই ত্রাণ। ১৪।
রেতঃ ও রজের এমনি আধান
উছল হ'য়ে স্থির ও চরে,
চর-প্রাধান্যে স্থির প্রাধান্য
চরের দ্যোতন থাকে স্থিরে। ১৫।
স্থির ও চরের মিলন যেমন
আবেগ নিয়ে থাকতে ধ'রে—
যা'তে যা' প্রধান সৃষ্টিও তেমনি
রূপায়িত তেমনি ক'রে। ১৬।
স্থির ও চরের সাম্য যেথায়
নপুংসক-সৃষ্টি সেথায় হয়,
ব্যতিক্রমে স্ত্রী-পুরুষ জন্মে
চলনও তা'দের তেমনি রয়। ১৭।
রেতঃ কিন্তু নারী-গর্ভে
সক্রিয়-সজাগ চেতন রয়,
রেতঃ-রজের মিলন-বীজে
সৃজনক্রিয়া উপজয়। ১৮।
অপকৃষ্ট রেতের জন্ম
যতই তীব্র ঝাঁঝালো হোঁক্‌,—
ভঙ্গপ্রবণ হ'বেই তা'রা,
র’বেই প্রতিলোমের ঝোঁক। ১৯।
রেতঃ মানে বীর্য্য জানিস্
স্পন্দিত যা'র অভিযান,
যে-স্পন্দনার অনুকম্পনে
গতিদীপ্ত থাকে প্রাণ। ২০।
রেতঃ-ঋতের আদিম বিকাশ
শব্দ-দীপন-সংঘাতে,
সৃজন-ধৃতি উঠলো জেগে —
সুপ্ত দীপ্ত হয় যা'তে। ২১।
স্বতঃদ্রুতির ক্ষরণে যেথায়
সাত্বত ধৃতি-উৎসৃজন,
রজঃ-বীর্য্যের মিলন-ধারায়
করছে সৃষ্টি আর পালন। ২২।
উৎকর্ষী রেতঃ অপকৃষ্ট রজে—
রেতঃ-বীর্য্যের খাঁকতি হ'লেও
অপকৃষ্ট রজঃ উৎকর্ষে ধরে
সব মিলিয়ে খাটো হ'য়েও। ২৩।
যে-পর্য্যায়ে জন্ম যা'দের
ধৃতি যা’দের যেমনতর,
ধী-ঊৰ্জ্জনাও তেমনি তা'দের
কর্ষণাকৃষ্টও তেমনতর। ২৪।
এক পর্য্যায়ে ভালমন্দ
সবই আসে ধাঁজমতন,
কোথাও সেটা তীক্ষ্ণই হয়
কোথাও একটু হীন গঠন। ২৫।
বিশেষ দ্যোতন-অধিকৃতি—
সমাহারী মেলন-তালে
সার্থকতার সন্দীপনায়
জ'ন্মে থাকেন মায়ের কোলে। ২৬।
ভাঙ্গন-গড়ন যতই চলুক
অবাধস্রোতা এ দুনিয়ায়,
বীজ-ঐশ্বর্য্য ঠিক রাখিস্ তুই
রুখবে না তোয় লাঞ্ছনায়। ২৭।
বর্ণজাতির ব্যতিক্রমটা
যতই করবি গভীরতর,
বীজও হবে তেমনি দুষ্ট
বৃদ্ধিতেও হবে ফল ইতর। ২৮।
বীজ যদি তুই রক্ষা করিস্
সুপ্ত হ'য়েও বেঁচে থাকে,
বহুকালের পরেও আবার
চৰ্য্যা দিলেই পাবিই তা'কে। ২৯।
বীজদেহেতে সংস্থিতি তা'র
যেমনতর লুকিয়ে রয়,
গজালে সে সে-সব গুণের
হ'য়েই থাকে অভ্যুদয়। ৩০।
সুস্থ সাবুদ বীজকে রাখিস্
ব্যতিক্রমে করিস্ না নষ্ট,
ব্যতিক্রমহীন রাখিস্ তাকে
আবার পাবি তেমনি স্পষ্ট। ৩১।
কৃষ্টি পুষ্ট যতই রাখবি
স্বস্থ-দীপ্ত বীজকে ক'রে,
শীর্ণ হ'লেও হবি না দীর্ণ
ক্ষয়ে কমই ধরবে তা'রে,
গজিয়ে তা'কে তুলবি যেমন
সংস্কৃতিতে ক'রে দড়,
গজালে আবার তেমনি পোষণে
সেটাও জানিস্ হবে বড়। ৩২।
জাতি জন্মে বীজপ্রভাবে
বীজই সবার সত্তাজীবন,
বীজশুদ্ধিই জীবনশুদ্ধি
দেশ-সমাজের তা' সুরক্ষণ। ৩৩।
নিষ্ঠানিপুণ কৃতি-রাগে
ঊর্জ্জী দীপ্ত যতই হ’বি
বীজও হবে সেই ধরণের
ফলও কিন্তু তেমনই পাবি। ৩৪।
রজোবীজের অন্তঃস্থিত
জনি-সঙ্গতির সংবেদনায়,
ব্যক্তিত্বটার বিকাশ আনে
জ্ঞান-গরিমার সংযোজনায়। ৩৫।
রজোবীজের সঙ্গতিশীল
গুণ-গরিমা উছল যত,
ভ্রূণের আধার তেমনি তাহার
ধৃতি-সম্বেগও তেমনি তত। ৩৬।
পূত মানুষ জন্মে কিন্তু
গুণান্বয়ে ভ্রূণ যেমন বাড়ে,
সেই ভ্রূণেরই অন্তঃস্থলটি
ভগবত্তা তেমনি ধরে। ৩৭।
কোন্ লোকটি কেমনতর
জনন-দীপ্তি দেখে বুঝিস্‌,
সুষ্ঠু কুলে সুজন সৃষ্টি—
এটাও কিন্তু ভেবে দেখিস্ । ৩৮।
স্ত্রী-পুরুষের ঊর্জ্জনাটা 
যেথায় যেমন আকর্ষণী,
সৃজনদ্যুতির সৃষ্টিও তা'ই
তেমনতরই বিবৰ্দ্ধনী। ৩৯।
পুরুষ-নারীর আকর্ষণটা
যেখানে যেমন হয় প্রবল,
তেমনতরই মূর্ত্তনা হয়
তেমনতরই হয় ফসল। ৪০।
ব্যতিক্রমী মিলন যেথায়
স্ত্রী-পুরুষের যৌনক্রীড়ায়,
সংস্কারও তেমনতরই
দুষ্ট হ'য়ে থাকে ব্রীড়ায়। ৪১।
সংস্কারের মেরুদাঁড়ায়
যে ধাঁজে যে গ'ড়ে ওঠে,
স্বভাবতঃ সেইটি তা'র
জন্মজাত বর্ণ বটে। ৪২।
দত্তক নিস্ নে স্বগোত্র ছাড়া,—
বংশ হবে লক্ষ্মী-ছাড়া,
বংশের ধারা ভেঙ্গেই যাবে,
বিকৃতিতে খাবি খাবে। ৪৩।
ব্যভিচার আর ব্যতিক্রমের
আইন-কানুন করবি যত,
বীজরক্ষণী সংসাধনাও
ততই হবে নষ্টে হত। ৪৪ ।
বিসদৃশে করলে বিয়ে
অসৎ কিন্তু তা'তেও হয়,
যতই শুদ্ধ-শান্ত থাক্‌ না
আনেই কুল আর দেশের ক্ষয়। ৪৫।
ব্যতিক্রমদুষ্টা না হ'লে স্ত্রী
সদৃশ শিষ্ট হ'লে স্বামী,
পূর্ব্বপুরুষের গুণগাথায়
হয়ই সন্তান ঊর্দ্ধগামী। ৪৬।
বিক্ষেপ-ব্যতিক্রমদুষ্ট
কুল যদি কা'রো না-ই হয়,
কুলতাৎপর্য্য সম্ভারে আসে
আত্মমর্য্যাদা ঠিকই রয়। ৪৭।
সঙ্কর হ'লেই জননস্রোতের
ভিন্ন ধারার সঙ্গতি,
এক-সাথেতে এসে করে
জীবনটারই মিশ্র গতি ;
অনুলোমেই কও আর প্রতিলোমেই কও
এই মিশ্রণ তা'র সব জায়গায়,
বীজানুগ তাৎপর্য্যেতে
ডিম্বকোষ মিলিত হয় ;
বীজ কিন্তু সক্রিয় হয়
ডিম্বকোষে বিনায়নে—
তেমনতরই গঠন-বিধান
স্বতঃদীপ্ত প্রণয়নে। ৪৮।
রেতঃ-স্বভাব যেমনতর
ডিম্বকোষের যেমন ধৃতি,
সন্তানও পায় তেমনি আবেগ
তেমনই হয় তা'র নিষ্ঠা-কৃতি। ৪৯।
স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই হো'ক
বা উভয়ের মধ্যে কোন একজন,
ব্যতিক্রান্ত হ'লে—হয় সন্ততির
তেমনি আবেগ, তেমনি মন। ৫০।
ডিম্বকোষে পিতার জনি
যেমন চলে বিভাজনায়,
রেতঃ-অনুগ বিন্যাস পেয়ে
শরীর সংগঠিত হয়;
সংগঠিত ঐ বিধানটাতে
জাতিবর্ণের যা' সঙ্গতি,
তেমনতর হ'য়ে বাড়ে
জাতক-জনার জীব-প্রগতি। ৫১।

Loading