শ্রীশ্রীঠাকুরের অষ্টোত্তর শতনাম

অষ্টোত্তর শতনাম

পুরুষোত্তম বন্দনা
রচয়িতা
গোবিন্দ দেব মজুমদার

নম: অনুকূল নম: বিশ্বের ত্রাতা ১
নর দেহে নারায়ণ প্রেমের দেবতা ।

লোক রুপে লোকাতীত পতিত পাবন। ৩
কাঙ্গাল ঠাকুর প্রভু, বিপদ ভঞ্জন ।। ৫

ভুবন মোহন, তুমি চারু কলেবর । ৭
তব আগমনে ধন্য বিশ্ব চরাচর ।।

ধরা অন্ধ কারাগারে-ভ্রাতায় ভ্রাতায়,
কলহ বিরোধ দ্বন্দ্বে দিবস কাটায়,
এলে প্রভু কণ্ঠে লয়ে প্রেম স্নিগ্ধ বাণী ।
প্রেমিক পাগল এলে, এলে চক্রপাণি ।। ৯

আর্য্যভূমি ভারতের কৃষ্টি উদ্বোধন,
ঋষি বাক্য-প্রতিষ্ঠায় তব আগমন,
বর্ণাশ্রম ঋষিবাদ শ্রেষ্ঠ সবাকার।
নব অর্থে বিশ্ব লাগি করিলে প্রচার।।

অধম তারণ, প্রভু, ব্রহ্ম সনাতন। ১১
সর্ব্ববেত্তা, সর্বময়, ভয় নিবারণ। ১৪

যজন যাজন আর নিত্য ইষ্টভৃতি
দশের কল্যাণ সেবা আত্ম সম প্রীতি
দেশের মঙ্গল তরে নিবেদিতে প্রাণ,
শিখাইলে নরদেব সর্ব শক্তিমান ১৬

সদাচার সৎনীতি শ্রেষ্ঠ আলোচনা
ইষ্ট স্বার্থ প্রতিষ্ঠায় দুরন্ত কামনা।
করিয়া পাওয়ার যুক্তি দেখালে ভূবনে
জীবনই তোমার বাণী কহে সর্বজনে।

আর্যশ্রেষ্ঠ, শুভ্রকান্তি, প্রেমিক সুন্দর। ১৯
তব প্রেমে মুগ্ধ আজি সর্ব চরাচর।।

মানবের তরে তব চিন্তা নিরন্তর,
করিল তোমারে প্রভু এ বিশ্বে অমর।
সদগুরু তুমি দেব দীনের দয়াল। ২১
প্রেমময়, মৃত্যুঞ্জয়, সুন্দর ভয়াল ।। ২৪

মৃত্যুপথ যাত্রিগণ না দেখি উপায়,
মৃত্যু হতে প্রাণ তরে তব নাম লয়।
রাধাস্বামী, নিরঞ্জন, বিশ্বগুরু তুমি। ২৭
তব পদধুলি চুমি ধন্য ধরা ভূমি।

ভোগের মাঝেতে ত্যাগে, ত্যাগ মাঝে ভোগ,
কর্মের মাঝেতে ধর্ম, ধর্মে কর্মে যোগ।
শিখাইলে হে দরদী আপনি আচরি। ২৮
মিত্রে পরিণত তব প্রেমে যত অরি।

দীননাথ, প্রেমসিন্ধু, কৃপার সাগর।। ৩১
ঘুচাইছ মানবের ব্যাথা নিরন্তর।
মানবের তরে তব যত আকুলতা,
করিল তোমারে প্রভু জগতের পিতা। ৩২

বিশ্বনাথ, নরোত্তম, দেব অন্তর্যামি। ৩৫
মিত্র নারায়ণ সখা, ত্রিলোকের স্বামী।। ৩৮,
সংসারের সার তুমি সর্বদর্পহারী। ৪০
পশুপতি, দয়ানিধি, নৃসিংহমুরারী।। ৪৩

অনঙ্গ মোহন হরি, অভীষ্টপূরণ। ৪৬
বিঘ্ননাশ, জ্ঞানাতীত, কৃতান্ত নাশন।। ৪৯

অচিন্ত্য, অতুল তুমি প্রান প্রিয়তম। ৫২
মহাদেব ভয়হারী চির অনুপম।। ৫৫

আদিনাথ, কৃপাসিন্ধু, ভবভয়হারী। ৫৮
পুরুষোত্তম প্রভু ভবের কান্ডারী।। ৬০

ভাষাতীত তেজোময়, সর্বজ্ঞানসার। ৬৩
সর্বহিতময় ইষ্ট,প্রেম পারাবার।। ৬৬

মহাযোগী, কর্মবীর জীবনবিজ্ঞানী। ৬৯
আদর্শ পুরুষ শ্রেষ্ঠ, সত্যের সন্ধানী।। ৭১

নরসূর্য, যোগীশ্রেষ্ঠ, দেবেন্দ্র মাধব। ৭৫
সর্ব যজ্ঞেশ্বর প্রভু ভকতগৌরব।। ৭৭

প্রাণেশ্বর, প্রাণাধিক, প্রাণময় তুমি। ৮০
রাতুল চরণ স্পর্শে ধন্য আর্যভূমি।।

দেবেশ, দেবাধিদেব প্রণব বিহারি। ৮৩
আশুতোষ, পরমেশ, বৃত্তিজয়কারী।। ৮৬

সহস্রাক্ষ জ্যোতিৰ্ম্ময়, মহাশক্তিধর। ৮৯
পরব্রহ্ম, জগন্নাথ, শ্রেষ্ঠ, মহেশ্বর।। ৯৩

ভাবময়, বোধাতীত, প্রেমানন্দময়। ৯৬
যুগের সারথি, শ্রীশ, অব্যয়, অক্ষয়।। ১০০

চিন্ময়, সচ্চিদানন্দ, নটবর। ১০৩
তারক ব্রহ্ম, হৃষিকেশ মানব-ঈশ্বর।। ১০৬

শ্রীমধুসুদন, প্রভু নরনারায়ণ। ১০৮
ধরাতলে নররূপে করি আগমন,
জুড়াইলে জগতের যত পাপ জ্বালা,
তব নাম স্পর্শে সর্প হয় পুষ্পমালা।

ঘাতকের মহাখড়গ হয় প্রেমবাঁশী,
স্নেহডোরে পরিণত হলো তীক্ষ্ণ কাঁসী।
নন্দন কানন তুল্য, হয় কংস কারা,
সাহারায় বহি চলে মন্দাকিনী ধারা।

ভেলা বাহি পারযোগ্য প্রশান্ত সাগর,
খঞ্জজন ছুটে চলে পর্বত প্রান্তর।
মুকের মুখেতে ছুটে অনর্গল ভাষা,
অন্ধব্যাক্তি দৃষ্টি লভি পুরাইছে আশা।

কলি যুগে শুধু মাত্র এই নাম সার,
মহা দুর্বিপাক হতে পাইতে নিস্তার ।
অষ্টোত্তর শতনাম করিলে স্মরণ,
জীবন সফল হবে ফিরিবে মরণ।

অমৃতের বাণী নিয়ে এলা ধরাপারে,
আত্মসম প্রেমপ্রীতি, সর্বজীব তরে,
ইষ্টরূপে অনিষ্টের মাঝে ধরা দাও,
ঈশ্বর মানব মাঝে নির্দেশিয়া যাও।

উদিত হইলে নব অরূণের মত।
ঊষালোকে লুপ্ত আজি অন্ধকার যত।
ঋষিবাদ নবরুপে করিলে প্রচার,
বেদতন্ত্র পুরণের যত কিছু সার।

একতার বাণী দিলে মানবের মুখে,
ঐক্যমন্ত্রে সর্প দোলে, নকুলের বুকে।
ওষধিতে পরিণত কর বিষতরু।।
ঔদার্য্যের রসে সিঞ্চি দাও হৃদি মরু।

কৰ্ম্মই সবার শ্রেষ্ঠ শিখাইলে সবে
খলতা যে তব স্পর্শে গলায় নীরবে,
গলিত তোমার প্রেমে হিমালয় শিলা,
ঘটাইছ অসাধ্যরে ধন্য নরলীলা।

চন্দ্র সম তব প্রভা হৃদি স্নিগ্ধকারী।
ছন্দ তব লীলা রঙ্গে উঠিছে ঝঙ্কারী,
জগতের প্রাণকেন্দ্র,জীবন সবিতা
ঝঙ্কারিত তব কন্ঠে নব যুগ গীতা।

টানিয়া আনিছ বুকে পাপী তাপী জনে।
ঠেলিয়া ফেলিছ পাপ সুন্দর চরণে,
ডমরু বাজিছে তব সৃষ্টির গানে,
ঢালিলে অমৃত ধারা মানব পরাণে।

তাপিত জনের প্রাণ জুড়াইয়া দিলে,
থামিছে মরণ ব্যথা তব নাম নিলে,
দলিয়া যতেক পাপ তাপ শত জ্বালা।
ধরিত্রীরে নবরুপে করিলে উজ্জ্বলা।।

নবারুণ সম স্নিগ্ধ প্রসন্ন আনন,
পরম পুরুষ রূপে দিলে দরশন,
ফলালে অমৃত ফল বিষ বৃক্ষ আজ,
বধ্যরে ক্ষমা করি রাখ হৃদি মাঝ।

ভয়ার্ত তোমারে স্মরি লভে প্রাণে বল,
মৃত্যুর দ্বার রোধি দাঁড়ালে অটল,
যম আজি ফেরে তব সুতীক্ষ্ণ আদেশে,
রক্তক্ষয় বন্ধ তব অমর নির্দেশে।

লভিল অমিয় শান্তি তাপিত মানব,
বঞ্চিত তোমায় লভি পাইল যে সব,
শক্তিধর, মহাঋষি, মহাদেবোপম,
ষড় রিপু আজ্ঞা পালে নিজ ভৃত্যসম।।

সদগুরু, ইষ্টদেব, পুরুষোত্তম্,
হৃদয় দেবতা ওগো লহ গো প্রণাম।

Loading