ধর্ম্ম প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ড

অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ডে “ধর্ম্ম” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২১ – ২৬ পর্যন্ত ২৪ টি বাণী রয়েছে।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

নিষ্ঠাশিষ্ট সমীচীন যা'
সেইগুলি তোমার কৰ্ম্ম,
চর্য্যা-প্ৰীতি অনুচলনে
চলাই কিন্তু ধৰ্ম্ম । ১ ।
নিষ্ঠানুগ কৰ্ম্ম যেমন
ধৰ্ম্মও পাবে তেমনি,
আচার-ব্যাভার-চালচলনও
পেয়েও বসবে সেমনি । ২।
গেরুয়া প'রে বেড়ালেই
সন্ন্যাসী তুমি হবে ?
ইষ্টনিষ্ঠ সদাচারী— ।
সন্ন্যাসী তুমি তবে । ৩ ।
ইষ্টনিষ্ঠ আনুগত্য-কৃতি
শ্রমপ্রিয়তা যেইখানে,
সমীচীনভাবে সাত্বত গতি
সহজ-সুন্দর, সেইখানে ;
প্রীতিপূর্ণ দীপ্ত হৃদয়
অনুকম্পী চৰ্য্যা-আবেগ,
স্বভাব-সন্ন্যাসী সেই জনই হয়
লাগে না তাহার সন্ন্যাস-ভেক । ৪ ।
ধর্ম্মগুরুর ভান ক'রে তুই
ধাপ্পাবাজি করিস্ না,
ধাপ্পাবাজির ধাক্কায় প'ড়ে
অক্কার পথে চলিস্ না । ৫ ।
নিজ ও পরের স্বস্তি-নীতি
ভাঙ্গবি যতই অসৎ হ'য়ে,
আসবে আপদ্ তেমনতরই
দুঃখকষ্টের বোঝা ল'য়ে । ৬।
ধারণ-পালন কুশল-কলায়
প্রাপ্তি যাহার যেমনি হয়,
ঈশ্বরীয় বিভূতি তা'তে
তেমনতরই সজাগ রয় । ৭।
ধারণ-পালন-সঙ্গতি যেথা
স্বতঃসন্দীপনায় বয়—
মূৰ্ত্ত আধিপত্য সেথায়,
ঐশী বীর্য্য সেথায় রয় । ৮।
জীবনচর্য্যা সবার সেরা
ঈশ্বরই যা'র প্রধান পুরুষ,
সেই চৰ্য্যাই তো ধৰ্ম্মচর্য্যা—
বাঁচে বাড়ে সকল মানুষ । ৯ ।
ধৃতিপালী সম্বৰ্দ্ধনা
ঈশ্বরের সম্বেগ-দীপ—
আগ্রহ-কুশল কৃতিচৰ্য্যায়
এনেই থাকে স্বস্তি-টিপ । ১০।
সুখী হওয়া, সুখী করা,—
স্বর্গের সিঁড়ি তাই জেনো,
তৃপ্তি তোমার দীপ্ত হ'য়ে
ব্যাপ্তি পাবে,—ঠিক মেনো । ১১।
সু-কে যেমন করবি অর্জ্জন
হাতে-কলমে বুঝে-ক'রে—
স্বর্গও তোর তেমনি হবে,
কে তোমাকে রাখবে ধ'রে ? ১২।
ধরবি যেমন করবি তেমন
ধর্ম্মও হবে তেমনি,
ধৃতিবাঁধন তেমনি হ'য়ে
চলবিও ভবে সেমনি । ১৩।
ধৰ্ম্মই কিন্তু শিক্ষা-কেন্দ্র
ধৰ্ম্মই আনে উন্নতি,
ধর্ম্মাচরণ এনেই থাকে
শিষ্ট-সুন্দর পরিণতি । ১৪।
যেমন বৈধী নিয়মনে
বাস্তবতার গতিপথে
ধর্ম্মাচরণ যে-জন করে—
তেমনি সার্থক মনোরথে । ১৫।
শ্রেয়ার্থটির আপূরণে
শ্রমসুখের নন্দনা,
দীপ্ত করে তৃপ্তি দিয়ে—
সঞ্জীবনী বৰ্দ্ধনা । ১৬।
নিষ্ঠাপ্রতুল সদ্‌-দীপনায়
কৃতিচর্য্যী ব্যবহারে
ওঠ না জেগে স্ফীত হ'য়ে
চেতনদীপ্ত সম্প্রসারে । ১৭।
শুনবি আমার একটি কথা ? —
ওরে অবোধ ! ও বিধ্বস্ত !
পারস্পরিক ধৃতিচর্য্যাই
স্বার্থ জানিস্, হ' তা'য় লিপ্ত । ১৮।
ধৃতি-কৃতির ধরণ-ধারণ
ভালমন্দ যেমনতর,
ভজনযোগে ভগবানও
থাকেন সেথা তেমনতর । ১৯।
সকল ধর্ম্মের সেরা ধৰ্ম্ম—
পুরুষোত্তমে শরণ নেওয়া,
সর্ব্ব পাপের মোচন তা'তে
তা'তেই হবে সফল চাওয়া । ২০।
শিখা, উপবীত, দণ্ড তোমার 
যেমনতর যা' থাকুক না,
ভড়ংই হবে—না থাকলে তোর
ইষ্টনিষ্ঠা ঊর্জ্জনা । ২১।
জীবনশিখার স্মারক—শিখা
মস্তকে যা' ধারণ কর,
ইষ্টই জেনো তা'র নিয়ামক
পুত বন্ধনে যা'কে ধর । ২২।
জীবনশিখা ইষ্টে বেঁধে
দীপ্ত করে নিষ্ঠাবিভা,
শিখা রাখা, শিখাবন্ধন—
তাঁরই কিন্তু স্মারক আভা ;
শিখাকে তাই পুত ব’লে
অনেকে তা' মাথায় রাখে—
বন্ধনে তা'র স্মরণ এনে,
যা'তে নিষ্ঠা তাঁ'তে থাকে । ২৩।
যজ্ঞসূত্র বা যজ্ঞোপবীত
ভজনসেবার স্মারক যা',
শ্রমবিভার চর্য্যা নিয়ে
চলার কিন্তু স্মারক তা' ;
ব্যষ্টিসহ সমষ্টিটির
ভজনসেবার অনুনয়ন,
ঐ স্মারকে আনে জেনো
তোমার ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন । ২৪।
যজ্ঞোপবীত— ব্রহ্মসূত্র— 
বর্দ্ধনারই দীপক রাগ,
ব্যষ্টিসহ সমষ্টিটার
চর্য্যামুখর জীবনযাগ। ২৫।
ভক্তিনত অন্তরেতে
দণ্ড যা'রা ভিক্ষা নেয়,
নিষ্ঠানিপুণ কৃতিযাগে
উচ্ছলাতে যায়ই যায় । ২৬।
আত্মশাসন-নিয়মনার
দণ্ড নিয়ে দণ্ডী তুমি,
অসৎ-নিরোধ উদ্দীপনায়,
দণ্ডই তা'র স্মারক-ভূমি ;
নিজে বাঁচ পরকে বাঁচাও
আপদ-বিপদ্ দুঃখশোকে,
নিয়মনী দণ্ড তোমার
সবা'য় যেন রাখে সুখে ;
এই প্রতিজ্ঞার জ্ঞাপন-প্রতীক—
দণ্ড- শিখা, যজ্ঞোপবীত,
শ্রমসুখপ্রিয়তা তোমার
দেখে চলুক ও-সব রীত্
ও-সব যদি না-ই কর তুমি
স্মারক-প্রতীক ক'রবে কী ?
ক্রমে-ক্রমে অবশ শ্রমে
নিথর হবে সত্তা-ধী । ২৭ ।
অটুট-নিষ্ঠ ধী নিয়ে যা'রা
স্মারক-প্রতীক রাখে ধ'রে—
ঐ প্রতীকের সঞ্চারণা
জীবন-স্রোতকে দীপ্ত করে । ২৮।
সর্ব্ববিদ্যাবিশারদ যা'রা
এমনতরই বিপ্রকুল—
পুরোহিত কিন্তু তাঁ'রাই হ'তেন
দক্ষ বাস্তব জ্ঞানে বিপুল,
পরিবারের শিক্ষক তাঁ'রা
আচার-বিচার-বিজ্ঞতায়,
সন্তানতুল্য করতেন পালন
শিষ্ট অশেষ ঊর্জ্জনায় ;
প্রতি পরিবারেরই এমনতর
পুরোহিত বিপ্র যতেক জন,
প্রতিটি পরিবার নিয়ন্ত্রণে
কৃষ্টিপথে রাখতেন চেতন ;
ব্যষ্টিসহ পরিবারকে
শিক্ষায় দক্ষ ক'রে তা'রা,
শিষ্ট-বিজ্ঞ তুলতেন ক'রে
যজন-নিয়োজনের দ্বারা ;
চাকুরীজীবী কমই ছিলেন
লোকচৰ্য্যাই ছিল প্রধান,
জ্ঞান-বিজ্ঞানের আচার্য্য তাঁ'রা
ছিলেন তাঁ'রাই কৃষ্টি-আধান ;
শিক্ষা-দীক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞানে
আবার তোরা মানুষ হ',
কৃতিস্রোতা লোকসেবায়
সত্তা-স্বস্তি নিষ্ঠায় ব'। ২৯।
ধৰ্ম্ম মানেই সত্তাচৰ্য্যা
বল-বর্ণ-আয়ু নিয়ে,
বৈধী মত বিনায়নে
সার্থকতার দীপ্তি দিয়ে ;
সৃষ্টি-সহ ব্যষ্টি যত
রয় সকলেই ধর্ম্ম-বশে,
বেঁচে-বেড়ে থাকতে চায়ই
সিক্ত হ'য়ে জীবন-রসে । ৩০।

Loading