ধর্ম্ম নিয়ে অনুশ্রুতি ১ম (৪৬ -৭৩)

অনুশ্রুতির ১ম খন্ডে “ধর্ম্ম” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২৮২ – ২৯৮ পর্যন্ত মোট ৭৩ টি বাণী রয়েছে। নিচে ৪৬ – ৭৩ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

পূর্ব্বপুরুষ জাত-গরিমা 
জানিস যা'তে ছাড়তে হয়,
এমনতর ধৰ্ম্মবাণী
জগদ্গুরুর নিছক নয় । ৪৬।
পূর্ব্বপুরুষ চেতন-ধারা 
ধর্ম্মে যদি ছাড়তে হয়,
জোর গলাতে বলছি আমি
নিছক সেটি ধৰ্ম্ম নয়। ৪৭।
পারম্পর্য্যে ইষ্টজেরটি
যখনই যে ভাঙ্গল,
গণসমষ্টির ব্যষ্টিমূর্ত্তি
তখনই সে মারল। ৪৮।
পূর্ব্বতনে বাতিল  ক’রে
যারাই ছড়ায় ধৰ্ম্মজাল,
আর সবারে সাবাড় ক’রে
তা'রাই চায় থাকতে বাহাল। ৪৯।
পূর্ব্বপুরুষ ধরন-ধারণ
পূরণ-পথে নবীন গড়ন,
অভ্যুদয়ী চলন-চালন
ধর্ম্মেরই এই উৎক্রমণ। ৫০।
মতবাদে জাতের ফারাক
ইষ্ট-তফাতে বংশভেদ,
ধর্ম্ম-ধারার চলন-চালে
হয় না জানিস্ জাত-বিভেদ । ৫১।
ঈশ্বরেরই উপাসনায়
হিংসা-সাধন পশুবলি,
বিশ্বপ্রভু নেন না তাহা
যায় না তাঁ'তে সে-সকলই । ৫২।
জীবন-বৃদ্ধির আরাধনায়
অহিংসাভরা অনুষ্ঠানে,
রকমারি আবেগ-চলন
উদ্দেশ্য এক ভগবানে,
থাকেও যদি এমনতর
প্রকারভেদ সাধনার—
ধৰ্ম্মযুদ্ধের দোহাই দিয়ে
আনলে বিরোধ নরক তা'র । ৫৩।
হিংসা-দ্বেষী বৃত্তিবিধুর
পালন-পূরণ মিলন-হারা,
চতুর চালে ধর্ম্মনীতির
সমর্থনে দিয়ে কাড়া,
ভরদুনিয়ার প্রেরিতদের
কা'রও ভক্তি-অছিলায়
অন্য প্রেরিত-নীতির দলন
করতে যদি কেহ ধায়,
তা'রেই নিছক কাফের জানিস্
ধর্মদ্রোহের কারণ সেই;
তা'কে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া
অবজ্ঞা সে ঈশ্বরেই । ৫৪।
ইষ্টতীর্থ আরাধনার 
ম্লেচ্ছীদলন জানতে পেলে
প্রাণশক্তি বুদ্ধিশক্তি
শরীরশক্তি সকল ঢেলে—
নিপাত করি' সেই দলনে
ইষ্টতীর্থ-আরাধনার
গৌরব-স্তম্ভে অটুট ক’রে
অটল রাখলে প্রতিষ্ঠার,
ধৰ্ম্মযুদ্ধ তা'কেই বলে
এমন আহব করলে জয়,
শক্তরাগে বৃত্তিগুলি
ইষ্টস্বার্থে গ্রথিত হয়;
আবেগভরা ইষ্টটানের
আগলভাঙ্গা ঝটিত বেগে
অতিপাতকীও ঝলক-তপে
স্বর্গ লভে দীপক রাগে । ৫৫।
শিষ্য-গুরুর ভেদ গণে না
এক নজরে ভজে,
ধর্ম তাহার দ্বিধা হ'য়ে
দুর্ব্বিপাকেই মজে । ৫৬।
পূর্ব্ব ঋষি মানে যা'রা
এক আদর্শ ভিন্ন ধারা। ৫৭।
প্রেরিতে যে প্রভেদ করে
অন্ধ তমোয় সাবাড় করে। ৫৮।
ধৰ্ম্ম যেখানে বিপাকী বাহনে
ব্যর্থ অর্থে ধায়,
তখনি প্রেরিত আবির্ভূত হন
পাপী পরিত্রাণ পায়। ৫১।
আপ্তপূরণ ধারাটি তোর
বাতিল ক'রে অকৃতজ্ঞ,
সেই হৃদয়টি নিয়ে যাচ্ছিস্
প্রেরিতে ধ'রে হ'তে প্রজ্ঞ ?
কায়দা-কলম ভণ্ডামি তোর
খাটতে পারে মানুষের কাছে,
ভাবিস পাবি পাগল অজান
রেহাই বিধির বান্দার কাছে ? ৬০।
জগৎমাঝে যে জাত-সমাজ
উঁচু-নীচু যেই না জন,
পূরণ-প্রবণ— সাধু-প্রেরিত
নমস্য সবার তাঁ'রাই হন । ৬১।
ধর্ম্মের নামে দোহাই দিয়ে
হরেক রকম ভানে
সাধু সেজে অনেক পুরুষ
মেয়ে ভুলিয়ে আনে,
ধর্ম্মে কামবৃত্তি-সেবা
নেই কখনো জানিস্,
ফুসলানিতে দেখিস্ নারি !
কভুও নাহি পড়িস্ । ৬২।
প্রেরিতে বিভেদ নাই যাহাদের
রসুল ব'লে মানে,
উপকারীর স্বতঃই গোলাম
মরেও যদি প্রাণে,
শান্তিবাদী শান্তি-সন্ত্রী
দীপ্ত-পূরণপ্রীতি,
সন্ধ্যা পাঁচে উপবাসে
গায় ঈশত্বের গীতি;
সব প্রেরিতের পূরণ-মতের
সেবক-সাধক প্রাণ,
পূর্ব্বপুরুষ সূত্র-ছেঁড়া
নয়কো ইতর টান;
একেশ্বরে হৃদয় ঢালা
শান্ত মতিমান,
জনসেবী জীবন-উপাসক
তা'রাই মুসলমান;
এমনতর রেশও যেথায়
নয়কো বিদ্যমান,
রসুল-প্রেমের মুখোসপরা
শঠকপটী প্রাণ। ৬৩ ।
ধৰ্ম্ম ঘোষে বাঁচা-বাড়ায়
ভরদুনিয়ায় একই ধাঁজে,
বক্তা ঋষির পথটিও এক
বিভেদ শুধুই ব্যক্তিমাঝে;
ধর্মনীতি তাই রে সমান
যেথায় কেন যাসনে আরে,
দেশ-কাল আর পাত্র-ভেদে
পৃথক যা' তা' ব্যবহারে;
সেই দেশ আর সেই কালেতে
সেই অবস্থায় সেই আচার
ধৰ্ম্মপন্থী হয়ই জানিস্
পুষ্টি যা'তে বাঁচা-বাড়ার;
খটমটি ছাঁচে দিগগজী প্যাঁচে
ক'সনে রে আর বিভেদ-কথা,
অকাট্য একই ধর্ম্মে সবার
হ'য়েই আছে সার্থকতা। ৬৪।
পূরণ-গড়ন যুগের যা'-যা'
স্বতঃ গজিয়ে সংস্কারগুলি,
জন্ম নিয়ে সহজ করায়
পূর্ব্বতনে গেঁথে তুলি,
দীপন আলোয় জনপদের
আঁধার নিকেশ ক’রে দ্যায়,
বাঁচা-বাড়ার সামগানেতে
সংস্পর্শীদের সব নাচায়;
ঐ মানুষে আর্য্য সবাই
যুগাবতার ব'লেই গণে,
বিশেষ নতি তাঁ'কেই পূজে
প্লাবন আনে তাঁ'র যাজনে। ৬৫।
ইষ্টগুরু-পুরুষোত্তম
প্রতীক গুরু বংশধর,
রেত-শরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর। ৬৬।
একস্রষ্টা অদ্বিতীয় 
নাইকো যা'র মনে,
প্রেরিতকে অস্বীকারে
উপাসনা গণে;
পূর্ব্বতনে প্রেরিতদের
স্বীকারে নাই টান,
প্রেরিতে বিভেদ করাই যা'দের
স্পর্দ্ধী অভিযান;
হত্যা করি' পূজে ঈশ্বর
মাংসে উদর ভরে,
সেই প্রত্যয়ের নিছক টানে
যা'রা জীবন ধরে;
পূর্ব্ব-পূরণ বর্তমানে
শ্লেষের গাথা গায়,
প্রেরিত-তীর্থ অবজ্ঞাতে
দলতে থাকে পায়;
যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি
পড়শী-সেবা নেই,
ম্লেচ্ছ-কাফের তা'রাই জানিস্
শয়তানসেবী সেই । ৬৭।
একস্রষ্টা অদ্বিতীয়
যে-জন মনে জানে,
প্রেরিত প্রতীক তাঁ'রই পথ
গাঁথা যাহার প্রাণে;
পূর্ব্বতন প্রেরিতদের
স্বীকার-নতির টান,
প্রেরিত বিভেদ করে নাকো
এমনি মতিমান;
হত্যা করি' ঈশ্বরকে
করলে নিবেদন,
সেই রক্ত-মাংস তাঁ'তে
পৌঁছে না কখন;
প্রত্যয়টি এমনি যা'র
হৃদয়েতে গাঁথা,
পূর্ব্ব-পূরক বর্ত্তমানে
নতিতে হেঁট মাথা;
তীর্থে হৃদয় দীপনভরা
দীপ্ত অনুরাগ,
যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি
পড়শী-সেবী যাগ;
এমনতর প্রাণ যেখানে
সৎ-উপাসক সেই,
নতি চলে বিনয়-রাগে
শ্রেষ্ঠ তাঁহাতেই । ৬৮।
কুম্ভীরেরে বাহন ধ'রে
সর্পে ক'রে তুই আয়ুধ,
বৃশ্চিকেতে তৃণটি ভ’রে
ম্লেচ্ছ নীতি কর অবুধ । ৬৯।
দুঃখ-আঘাত-অবসাদে
ডরবি কেন আর্য্য ছেলে,
ফণীর মণি তুলতে কেন
পারবি না রে বুদ্ধি ঢেলে । ৭০।
পূর্ব্বতনে নতির ধারায়
পূর্ব্বকৃষ্টি-সম্পূরণে
ছিটিয়ে দিয়ে সে-সম্পদে
ধরেন যিনি উদ্বর্দ্ধনে,
তাঁ'কেই বলে পুরুষোত্তম
ভগবানের দোস্ত জানিস্,
তাঁ'রই নীতির কৃতঘ্নতায়
পিতৃপুরুষ কৃষ্টি ছাড়িস্ ?
ওরে বাতুল মত্ত পাগল
ম্লেচ্ছ বেবুঝ কাফের তুই !
কা'র দোহাইয়ে কী বলিস্ তুই
মিথ্যা ধ'রে চলছিস্ নুই';
ধৰ্ম্ম যেথায় বাঁচা-বাড়া
তার কি আবার বদল হয়?
চলন-গুণেই ক্রম-পূরণে
ঘোষেই ধর্ম বিধির জয়;
খেয়ালবশে মিথ্যে কথায়
দোহাই দিয়ে দোস্ত খোদার,
এমন বলা বলিস্ না রে
মুক্ত ক’রে দোজখ-দ্বার। ৭১।
আর্য্য তোরা ছাড়লি যেদিন
পর্য্যায়ী যুগ-পুরুষোত্তমে,
উৎসহারা খণ্ড ধ'রে
জীবন দিলি জাহান্নমে;
রক্তে আর্য্যমদির তা'রা
আজও জাগে স্তিমিত আঁখি,
এখনও নে প্রাণভরে ডাক,
চল্ সিধে চল্ সে-পথ রাখি';
খড়গ ধ'রে ফিরে দাঁড়া
বর্শা ধ'রে মুষ্টি-করে,
মেচ্ছ-বধির চলনা যত
বিদায় কর্ রে নিকাশ ক’রে;
ওই ওঠে দিন যদিও মলিন
মেঘলা যাবে ফুটবে দ্যুতি,
সেবার অনল উঠুক জ্বলি'
ইষ্টযজ্ঞে দে আহুতি;
ফের ওরে ফের্ ঈশানদেবের
ঐ শোনা যায় মন্ত্র হাঁক,
দুষ্ট যা' তা' চুরমারি' কর
অমর আকাশ দীপ্ত ফাঁক। ৭২।
পূর্ব্বতনে নতির ধারায়
পূরণ-স্থিতি গড়ন সাথে,
সমাধানে সমাহারী
বিধির নীতি নিয়ে মাথে;
জাতকে দিতে অমরণের
মন্ত্রমুখর অটুট আলো,
তাঁ'রই নীতির হোমটি তুমি
অন্তরেতে নিত্য জ্বালো;
বুঝে-সুঝেও যা'রা তাঁ'রে
ধরে না বা ধরতে নারে,
ম্লেচ্ছ তা'রাই মরণ-বধির
হানেই জাতে মরণ-কালো:
দুরে রাখিস্ সাবধানেতে
ধরিস্ আলো তা'দের পানে,
ভেঙ্গে যদি পারিস্ আনিস্
মৃত্যুঘ্নী তোর আহব-বাণে। ৭৩।

Loading