নীতি প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড (১-৫০)

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “নীতি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৭ – ৩৭ পর্যন্ত মোট ১০৮ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ০১-৫০ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

হৃদয় খুলো গুরুর কাছে
যিনি স্বতঃই পূৰ্য্যমাণ,
কিংবা তোমার নেতার কাছে
যিনি তোমায় স্বার্থবান্;
কিংবা পিতামাতার কাছে
উদ্ভব তোমার যা'দের হ'তে,
এ বাদে ব'লো হিসাব ক'রে
নজর রেখে হিতী পথে। ১।
ভালবাসিস্ সবারে তুই
যত্ন করিস্ বিহিতভাবে,
মন্ত্রগুপ্তি নাইকো যা'দের
আস্থা রাখলে কষ্ট পাবে। ২।
দোষ যদি তোর থাকে কিছু
আগেই নিকেশ কর্,
দোষ নিয়ে তুই করলে শাসন
বাড়বে দোষের ঘর। ৩।
তোর কথায় তুই ফেঁসে না যাস্ 
বিহিত বলা বলিস্,
কৃতিমুখর চলন নিয়ে
শুভর পথেই থাকিস্। ৪।
তুই যদি কা'রো কথা শুনে
বিহিত চলায় নাই চলিস্
অন্য কেউ কি তোর কথাটি
শুনে চলবে যা'ই বলিস্ ? ৫।
শোনা কথায় সমীহ রাখিস্ 
বলে যদি তা' জ্ঞানী,
পরে সেটা মিলিয়ে দেখিস্
বাস্তবের না হয় হানি। ৬।
পরের মুখে শুনবি যেটা
লক্ষ্য রেখে তা'তে,
চৌকস মিল হ'লে পরে
দ্বিধা কি আর নিতে ? ৭।
ক্রোধ ক্রোধকেই ডাকে,
হিংসা ডাকে হিংসায়
নিন্দা নিন্দাকেই ডাকে
প্রশংসা প্রশংসায়। ৮।
ক্রোধ কৃতার্থ প্রীতি-চৰ্য্যায়
হিংসা অনুকম্পায়,
নিন্দা ব্যর্থ সদ্-ব্যাভারে
প্রীতি উচ্ছল নিষ্ঠায়। ৯।
অবস্থা, সময়, সুবিধা আর
উপযোগিতা নিয়ে,
সুসঙ্গতির সমাধানে
সিদ্ধান্ত আনিস্ ব'য়ে। ১০।
কী অবস্থায় কখন তুমি
চলবে-করবে কেমনতর,
বোধ-বিবেকী পরাক্রমে
তেমনি চলতেই থেকো দড়। ১১।
কী অবস্থায় কী করে কে
কী-ভাবে কী-কথায়,
বুঝে নিতে চেষ্টা করিস্
বিধানটি কী চায়? ১২।
অধিক হর্ষ, ক্রোধ বা বিষাদ
কিছুই কিন্তু নয়কো ভাল,
বিজ্ঞজনার এই অভিমত
ভেবে-চিন্তে সাম্যে চল। ১৩।
বাধা আটক সব খুলে দে
শ্রেয় যে-জন তাহার কাছে,
বোধি তোদের আসবে নেমে
কৃতী-শুভ দীপন-সাজে। ১৪।
সৎ উপদেশ দাওই যদি
দায়িত্বও কিছু দাও,
চৰ্য্যা-বিপুল কৃতী হ'য়ে
কৃতার্থতায় পাও। ১৫।
উপদেষ্টা উপদেশ দিয়ে
নিজেই ক'রে দিলে,
উপদিষ্টের কী হ'বে তা'য়
জ্ঞান কি তা’তে মিলে ? ১৬।
যুক্তি মানুষ দিক্ না যত
স্থির ও ধৈর্য্যে শুনিস্ তা'
নিখুঁত বিচারে করিস্ সেটা
বাস্তব দেখে বুঝবি যা'। ১৭।
যাই ভাব, যা'ই দেখ-শোন,
বুঝে দেখ তা' সমীচীন,
জীবনীয় কতখানি তা'
কতখানি জীবনহীন। ১৮।
মিষ্টি কথা ব'লো তুমি
স্নেহে সেবা দিও,
সৎ-পথেতে শ্রদ্ধার দান
পাও যেটি তাই নিও। ১৯।
যে-সাহায্য যা'র কাছে পাস্‌ 
কৃতজ্ঞতায় ভরিস্ বুক,
গুণ-স্তোতনায় দীপ্ত রাখিস্
হৃদয়ভরা পাবি সুখ। ২০।
তা'রে বাঁচাও আগে—
ধরে তোমায়, করে তোমায়
আপন অনুরাগে। ২১।
পাগলপারা রোখ নিয়ে তুই
সৎ-চলনে থেকে,
অনুকম্পী বিবেক নিয়ে
চলবি শুনে-দেখে। ২২।
দুঃখী যা’রা, ব্যর্থ যা’রা
অধঃপাতে যা'চ্ছে দুরে,
তা'দের ব্যথা বলার অবসর
সতর্কতায় দিবি ওরে। ২৩।
(তুই) গরব করিস্ যা'র—
তা'র গরবের সুবর্দ্ধনাই
সব গরবের সার। ২৪।
মিথ্যা যদি কইতেই হয়
কা'রো ক্ষতি নাই ক'রে,
সেথাও কিন্তু সাত্বত সব
শুভর পথে রং ধরে। ২৫।
মিতি-চলনে চলতে থাক
ধৃতিতে মন রেখে,
ধৃতিহারা মিতি-চলনে
ঠ'কেই থাকে লোকে। ২৬।
চলার পথে আসলে বাধা
ধাঁধার ঘোরে পড়িস্ না,
'সু' সেধে তুই চল্ রে চ'লে
কাটবে বাধা—ভাবিস্ না । ২৭।
সৎ-পথে তুই চলবি অটল
ইষ্টসেবায় থাক্‌ পটু,
সকল গরল-মুক্ত হ’বি
সুধা হবে সব কটু। ২৮।
কটু কথার কটু উত্তরে
অসদ্ বুদ্ধি বেড়েই থাকে,
হৃদ্য যা' তা' যুক্তিবাদে
সাম্যই অনেক করে তাকে। ২৯।
কড়া কথা তোকে বলে যদি কেউ
পারিস্ তো উত্তর দিস্ নে,
উত্তর যদি দিতে হয় দিবি
সুধী-সুন্দর আপ্যায়নে। ৩০।
কী করাই বা উচিত ছিল
কিসেই বা তোর হ'লো দোষ—
এটা যদি শুধরে না নিস্
জীবনভরই র'বে আপসোস। ৩১।
বোধটা আগে গজিয়ে নে তুই
ব্যাপার দেখে-শুনে,
কী করলে কী হয়— হিসাব কর্
অন্তরেতে গুণে । ৩২।
দেখে-শুনে বুঝ-পরখে
বাস্তবতায় বাজিয়ে নিস্,
পরখটা তোর নিখুঁত হ'লে
যেমনটি যা' তা'ই বলিস্ । ৩৩।
বোধ-বিচারে শিষ্ট হ'য়ে
দৃষ্টি তোমার চলুক ঠিক,
সব যা'-কিছুর নিয়ন্ত্রণে
ঠিক রাখিস্ তোর চলার দিক্ । ৩৪।
সুস্থ যখন শ্রেয় তোমার
বৈধী আচার সবই পালিস্,
অসুস্থ বা অপারগতায়
বিহিত যেমন তেমন চলিস্ । ৩৫।
আস্থা থেকেও মনে কা'রো 
কটু যদি থাকে,
বেশ ক'রে তা' এড়িয়ে চলিস্
পড়িস্ না তা'র পাকে। ৩৬।
সবার প্রতি আপ্যায়না
যত পারিস্ রাখিস্,
মনে রেখে সতর্কতা
বেঘোরে না পড়িস্। ৩৭ ।
চালিয়াতি চাওয়া দেখলেই
রুদ্ধ করিস্ দেওয়া,
বুঝেও কিন্তু বলিস্ না তা'
কূটফন্দীর চাওয়া। ৩৮।
খুঁজতে গেলে কা'কেও তুই 
ধীইয়ে নিস্ মনে—
কোথায় কাহার বসবাস
কিবা প্রয়োজনে,
প্রয়োজনের ক্ষুধা তা'র
কোথা আপুরিত হয়,
গালগল্প খেলাধূলার
কোথায় সমন্বয়,
খেলাধূলা, ব্যসন, খোরাক
কোথায় কাহার মেলে,—
এঁচে নিয়ে মনে-মনে
দেখ্ খুঁজে কী ফলে ! ৩৯।
ভেবে বুঝে দেখে-শুনে
বাস্তবতার পরিচয়ে,
ইষ্টরাগের বোধ-বিচারে
করবি তাহা দক্ষ পায়ে। ৪০।
আত্মগোপন করিস্ নাকো
অনৃতকে লুকিয়ে রেখে,
করবে ধ্বংস জীবনটা তোর
অন্তরে তা' পেকে-পেকে। ৪১।
স্বার্থলোলুপ বুদ্ধি যা'দের
পেলেও কিছু করে না,
যদি পারিস্ এমনি দিবি—
যেমন পাওয়া ঘটে না। ৪২।
সুবিধাবাদী হ'তে গিয়ে
অসুবিধায় ডাকিস্ নে আর,
স্বার্থলোভই জানিস্ কিন্তু
অসুবিধার কুটিল দ্বার;
পরকে ভেঙ্গে নেবেই কেবল
যেমনতর সুবিধা পাও,
একতিলও কা'কে দেবে না কিছু ?
সুবিধা কিন্তু হবে উধাও ;
চর্য্যানিপুণ অন্তর নিয়ে
ধৃতি-কুশল পরিচর্য্যায়,
স্বতঃস্রোতা যা'ই তুমি পাও,
শিষ্ট সুবিধা থাকেই তা'য়। ৪৩।
স্বার্থসুখের অর্থ তোমার
তৃপ্তি দিয়ে আমার বুকে,
দীপ্ত হ'য়ে না উঠলে তা'
রাখবে কি তা' আমায় সুখে?
তাই বলি তোমার স্বার্থ ও সুখ
অন্যকেও যেন করে সুখী,
চর্য্যা-চলন এমনি ক'রো—
আশপাশে কেউ না হয় দুখী। ৪৪।
বেসামাল আর বেকুব হ'য়ে
নির্ভরশীল হো'স্ নে ওরে,
চতুর চোখে দেখে-শুনে
যেমনি পাবি নিবি ধ'রে। ৪৫।
যা'-কিছুকে খারাপ ভেবে
করিস্ না তার সমাধান,
মেপে-চিনে বোধে বিনিয়ে
রাখিস্ চলায় তেমনি মান। ৪৬।
যতই পরের দোষ দিবি তুই
নিজের যা' দোষ এড়াতে,
পেয়ে বসবে সে-দোষ তোমায়
দেবেই না পা বাড়াতে। ৪৭।
সুজাগ্রত বিবেচনায়
সব জিনিসটি বুঝে-সুঝে,
ত্বারিত্যে তুই কাজে লাগিস্
বৈপরীত্যের সঙ্গে যুঝে। ৪৮।
যা' দেখবি তা' এক লহমায়
সবটা দেখার অভ্যাস কর্,
করার বেলায় বুঝে-সুঝে
তেমনি করার ধৃতি ধর্। ৪৯।
দৃষ্টি তোমার ফুটবে কিসে?
প্রাঞ্জলাতে উপচে থাক্,
দৃষ্টিটাকে বেশ বিনিয়ে
সৃষ্টি কর্ তুই দেখার তাক্। ৫০।

Loading