নারী প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “নারী” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২১১ – ২২১ পর্যন্ত মোট ৫৭ টি বাণী রয়েছে।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

কেশ, বেশ, বোধ, ব্যবহার — 
চারই মেয়ের অলঙ্কার। ১।
লজ্জা, সম্ভ্রম, সমীহ আর 
শিষ্ট আচরণ—
এ-সব জেনো মেয়েদের
উৎকর্ষী লক্ষণ। ২।
না বলিতে কাজ বুঝিয়া যে করে
নারীত্ব সেখানে জাগা,
সেবায় অলস, বুঝেও বোঝে না,—
স্ত্রীত্ব সেখানে ফাঁকা। ৩।
বিলাসিতার নাই বাহানা
মিতিচলন সাধ,
দেখিস্ চেয়ে সেই মেয়েরাই
বিভবে অগাধ। ৪।
স্নেহ, তুষ্টি, সেবা, সম্ভ্রম,
নিষ্ঠা, আচার, নিয়ম,
যে-মেয়েদের স্বভাবসিদ্ধ—
লক্ষ্মী অনুপম। ৫।
ধর্ম্মে-কর্ম্মে দৃপ্ততেজা
দীপ্ত সেবা-ব্যাভারে,—
সেই মেয়েরা স্বস্তিরই দূত,
হৃদয়ব্যথা হরে। ৬।
কথা বেচে গিন্নী হ'লি
করলি কি তা' কাজে ?
করায় ফলন না করবি যা'
হবেই সেটা বাজে। ৭।
ত্বারিত্যহীন কৃতি কিংবা
অব্যবস্থ ত্বরিত চলন—
এর কোনটাই নয় কিন্তু
গিন্নীপনার সুলক্ষণ। ৮।
গৃহকর্ত্রী মেয়েরাই হয়
জয়ে-জিতে' সব হৃদয়,
ধৃতিরূপী দুর্গারূপে
ঐ মেয়েই হয় সবার অভয়। ৯।
ঘরের যিনি গৃহলক্ষ্মী
তাঁ'রই কিন্তু সব,
সেবাতীর্থ হৃদয় যে তাঁর
নারায়ণই বিভব। ১০।
সব যা'-কিছু মনে আঁকা
চিহ্ন দেখে চেনে,
জ্ঞান-বোধনার ব্যবস্থিতি
গেঁথে রাখে প্রাণে ;
শ্রেয়নিষ্ঠ এমন মেয়েই
লক্ষ্মী মেয়ে হয়,
এমন মেয়ে থাকলে ঘরে
নাইকো কোন ভয়। ১১।
স্বামীর স্মৃতি অন্তরে যেন
সুজাগ্রত সদাই রয়,
তোমার কৃতি নৈবেদ্য হ'য়ে
সেবাচৰ্য্যায় তাঁ'কেই বয়। ১২।
স্বামীতে যা'রা শান্তমনা
অস্থিরতা তা'দের কমে
বোধ ও বিদ্যার ক্রমচাতুর্য্যে
বাড়েও তা'রা ক্রমে-ক্রমে। ১৩।
কাম-আনতি-অনুনয়ন
সমীচীন নয় সবখানে,
স্বামী ছাড়া শ্রদ্ধাচৰ্য্যী
কাম শ্রেয় নয় কোনখানে। ১৪।
শ্বশুরবাড়ী যে-মেয়েদের
অগাধ অটুট টান—
তারাই তো লক্ষ্মী মেয়ে
সেবাবিপুল প্রাণ। ১৫।
শ্বশুরকুলের গুণ-গরিমায়
নারী হ'লে দৃপ্ত,
তবেই পুরুষ শ্বশুরকুলের
গৌরব-অভিদীপ্ত। ১৬।
শ্বশুর-শাশুড়ী কিংবা স্বামীর
লাঞ্ছনায়ও অটল থাকে,
নিষ্ঠাপ্রতুল বিপুলপ্রাণা
জীবনজ্যোতি অটুট রাখে। ১৭।
বাপের বাড়ীর গৌরবেতে
যে-মেয়েরা মত্ত,
শ্বশুরবাড়ী আত্মনিবেশ
করাই তা'দের শক্ত। ১৮।
উপেক্ষা ক'রে স্বামিচৰ্য্যা
সন্তান-চর্য্যায় যা'রা পাগল,—
সে-মেয়েদের ভাগ্য বেতাল,
সন্তানদেরও রয় না আগল। ১৯।
স্বামীর কী দোষ—ধরিস্ নে মেয়ে।
বলিস্ নে তা'য় খোঁচা দিয়ে,
অন্তরে তা'র তৃপ্তি দিয়ে
শুধরে নিবি সব বিনিয়ে। ২০।
নিষ্ঠাপুত স্ত্রী যেখানে
স্বামীর গুণও অর্শে তা'তে,
স্বামী ও স্ত্রীর সংবেদনায়
একায়িত হয় যাহাতে। ২১।
কোপন-কোঁদল স্বভাব নিয়েও
পতিচর্য্যায় অটুট যা'রা,
তা'রাও কিন্তু পতিব্রতা
নিষ্ঠাশিষ্ট প্রায়ই তা'রা। ২২।
স্বামী ছাড়া সতী—
মূৰ্ত্ত দুৰ্ম্মতি। ২৩।
স্বামিসেবা নাই যে-স্ত্রীর
অন্য যা'রা আপন-জন,
অনুরাগ তা'দের ছন্নছাড়া
দরিদ্রতাই ওর লক্ষণ। ২৪।
স্বামী ছাড়া নিষ্ঠা-নেশা
করলে মেয়ে কা'রো প্রতি
বিপর্য্যয়ী ব্যতিক্রম তা'র
করেই নিরোধ শুদ্ধ গতি। ২৫।
নিষ্ঠা-নেশা অটুট হ'য়ে
স্বামীর পানে ছুটছে না,
এমন মেয়ের গর্ভে প্রায়ই
শিষ্ট ফসল ফলে না। ২৬।
আপন স্বামীকে লাগে নাকো ভাল
পরধ্যায়ী যা'র মন,
ব্যক্তিত্ব তা'র ব্যতিক্রমী
দীর্ণ হয় সে-জন। ২৭।
স্বামিস্বার্থের স্বার্থহারা
তেষ্টা অন্য পুরুষ লাগি',
সঞ্চিত তা'র কুৎসিত চলন
আনে বঞ্চনার বিভব মাগি'। ২৮।
পতির চাইতে প্রীতি ও সেবা
অন্য জনের উপরে প্রবল,
বুঝে রাখিস্ সেথায় কিন্তু
পাতিব্ৰত্য নেহাৎ দুৰ্ব্বল। ২৯।
স্বামী ছাড়া অন্য নিয়ে
ভোগ-বিভোরা যা’রাই হয়,
বুঝে রাখিস্ তা'রা কিন্তু
শিষ্ট স্বভাবের মেয়ে নয়। ৩০।
যতগুণই থাক না মেয়ের
সতীত্ব যা'র নাই,
কুলক্ষণা সেই-ই জানিস্
দুনিয়ার বালাই। ৩১।
ভ্রষ্টা নারীর নষ্টামিতে
উত্তেজনা যেমন খর,
নষ্ট করার সংক্রমণায়
তেমনতরই হয় সে দড় । ৩২।
মেয়ে-পুরুষের সংবেদনা 
প্রবৃত্তিকে টানেই প্রায়,
ও সম্বেগে অনেক সময়
ধর্ষিত হ'তে দেখা যায়। ৩৩।
বাপ-ভাই-স্বামী পর যাহাদের
আপনে অন্য ভাবে,
কটুবৃত্তি তা'র হৃদয়-বিছানো
বাজ পড়ে তা'র লাভে। ৩৪।
আত্মীয় সৎপুরুষ ছাড়া
অন্যের সহ কোনদিন
যেও নাকো,—ক'রো নাকো
ব্যক্তিত্বটা দৈন্যলীন। ৩৫।
সম্ভ্রমাত্মক দূরত্বটি
বজায় রেখে সমীচীন,
অনুকম্পী সেবা-চৰ্য্যায়
ধৃতিই বাড়ে চিরদিন। ৩৬।
উচ্ছৃঙ্খল আর অশিষ্ট যা'—
ধার ধেরো না, দূরেই থেকো,
সব অবস্থায় সব রকমে
আদর্শকে অটুট রেখো ;
আচার-ব্যাভার কথাবাৰ্ত্তা
চাল-চলন আর জীবনগতি,
এমনভাবেই রেখে চ'লো
হ'য়ে সতী মূৰ্ত্তিমতী। ৩৭।
অশিষ্ট বা ব্যতিক্রমী
যেমনতরই আচার হো'ক্,
দক্ষ-দৃপ্ত হৃদয়ে তা'র
রুদ্ধ ক'রো হৃদয়-রোম্। ৩৮।
একনিষ্ঠ একচর্য্যী
মেয়ে-পুরুষ যা'রাই হয়,
উচ্ছলাতে তা'রাই করে
দুনিয়াটার হৃদয় জয়। ৩৯।
পরিবার আর পরিবেশের
ইষ্টানুগ অনুধ্যানে,
উচ্ছলতা এনেই থাকে
সেবাসুন্দর দীপ্ত প্রাণে। ৪০।
সতীত্ব যা'র স্বভাবসিদ্ধ
চৰ্য্যাপটু মন,
জগদ্ধাত্রী মূৰ্ত্ত মেয়ে
সংসারের জীবন। ৪১।
স্বামীসহ সাত পুরুষের
কৃপা করি' আহরণ,
সতীত্বকে অটুট রাখো—
নিষ্ঠা-ধৃতি-আচরণ। ৪২।
সৎ-সন্দীপী সতীত্ব যেথায়
আচার-চরিত্রে উদ্ভাসিত,
তা'ই তো লোকের প্রাণন-স্রোতা
ব্যক্তিত্ব তো তা'তেই স্ফীত। ৪৩।
ছেলের চাইতেও স্বামী-প্রীতি—
সতী নারীর জীবন-নীতি। ৪৪।
নষ্টা হ’য়েও শ্রেয়নিষ্ঠা
অন্তরে-বাহিরে ফোটে যা'দের,
ভ্রষ্টা হ'লেও সুষ্ঠু মেয়ে
ব'লে-বুঝে রাখিস্ তা'দের। ৪৫।
ব্যতিক্রমদুষ্টা যা'রা,—
শ্রেয় যদি পুরুষ হয়,
তেমনতর শ্রেয়-পুরুষে
সুসঙ্গতি শোভা পায়। ৪৬।
দূরদৃষ্টের কশাঘাতে
পতিহীনা হয় যে-মেয়ে,
ব্রহ্মচর্য্য পালা-ই ভাল
ব্রাহ্মীতপা নিষ্ঠা নিয়ে। ৪৭।
জগৎপিতাই তোমার পিতা
স্বামীহারা যদিও হ'লে,
সেই ভাবেতেই তুমি দেখো
স্বামী আছেন তাঁ'রই কোলে ;
নিষ্ঠা-নিপুণ ধৈর্য্য ধ'রে
স্থিরচলনে সেমনি হ'য়ো,
অনুরাগী ভজনরাগে
জগৎপিতায় সদাই ব'য়ো। ৪৮।
ধৃতিচৰ্য্যায় ধৃতি-তপে
ধৃতিদীপ্ত অধ্যয়নে,
ব্যাপৃত রাখ জীবনটাকে
উন্নয়নী অনুধ্যানে। ৪৯।
নিষ্ঠা-ধৃতি-তপশ্চৰ্য্যায়
দীপ্তি আসে হৃদয়ের,
চৰ্য্যাপ্রতুল সেবা আসে
আসে চর্য্যা স্বজনের। ৫০।
তাই তো বলি মেয়ে আমার !
দেহে-মনে সৎচারিণী
হ'য়ে কর দুনিয়াটাকে
ধৃতি-প্রতুল উৎসারণী। ৫১।
লোকপালী লোকচৰ্য্যী
মায়ের মতন বিভব নিয়ে,
উন্নতিতে নিয়ন্ত্রিত
কর্ না সবে—আমার মেয়ে ! ৫২।
আশা দিও, ভরসা দিও—
সুচারু সুব্যবস্থায়,
যা'তে সবাই উচ্ছলাতে
অন্তরেতে তৃপ্তি পায়। ৫৩।
মা ও মেয়ের সন্দীপনায়
সবার সাথে কথা ক'য়ো,
তেমনি চোখে তেমনি মনে
করণীয় যা' তা'কে ব'য়ো। ৫৪।
সত্তাকে যা'রা বিশুদ্ধ রাখে
পূত-পূজ্য ঊর্জ্জনায়—
তা'রাই সতী, তা'রাই পূজ্যা,
রাখে ব্যক্তিত্ব বর্দ্ধনায়। ৫৫।
শ্রেয়ের প্রতি শ্রদ্ধাভরা
সেবা-যত্ন, স্বার্থে-স্বার্থী,
কর্ম্ম-কুশল তৎপরতা
ধর্ম্মাচরণ ধৃতি-অর্থী ;
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সব-কিছুতে
সুব্যবস্থ মিতি-চলন,
শাসন-তোষণ সঞ্জীবনী
সাধ্বী সতীর এই-ই লক্ষণ। ৫৬।
ত্রুটিদর্শী ভর্ৎসনাতেও
নিটোল অনুরাগ,
কৰ্ম্মনিপুণ অভিনিবেশে
দরদদীপ্ত যাগ ;
দোষত্রুটি যা'র নিখুঁত চলার
যোগায় সঙ্কেতবাণী—
এমনি ক'রে শুদ্ধ চলায়
তৃপ্ততপা প্রাণী;
আর্য্য-ঘরে এমনি মেয়ে
নিত্য আলো ধ'রে,
কৰ্ম্ম-ব্যজন সেবা-পূজন
সব নিয়মন করে ;
ধরিত্রীরই মূর্ত্তি তা'র
উমার দোসর মেয়ে,
ঐ দেখ্ না ঐ পথে যায়
ভজন-মন্ত্র গেয়ে। ৫৭।

Loading