প্রবৃত্তি নিয়ে অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ড

অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ডে “প্রবৃত্তি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১২৩ – ১৩৩ পর্যন্ত ৬২ টি বাণী রয়েছে।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

নিষ্ঠা-আবেগ-আনুগত্য
ইষ্টের প্রতি বাড়ছে যেমন,
প্রবৃত্তিদের উদ্বেজনা
অন্তরে তোমার কমছে তেমন । ১।
নিষ্ঠাবিহীন অবিশ্বাসী
ব্যক্তিত্ব খোঁজে প্রবৃত্তি-ফাঁসি । ২ ।
স্বার্থঝোঁকা যেমন বাঁক,
বোধ-বিকাশের তেমনি ফাঁক । ৩।
ইচ্ছা ক'রে দিলে তুমি
তৃপ্ত হ'য়ে যা'র উপর—
তা'র নমুনা না দেয় যদি
অন্তরই তা'র ধূলি-ধূসর । ৪।
আপৎকালে যা'কে দিলে
ক'রতে আপদ উদ্ধারণ,
নিদর্শন তা'র দেয় না যে-জন
ধড়িবাজিই যে তা'র চলন । ৫।
কাপট্য যা'র অন্তরে রয়
প্রীতির ভাবটি যা'ই দেখাক,
কাজে-কর্ম্মে কপট সে যে
যতই ছাড়ুক প্রীতির বাক্ । ৬।
ব্যভিচার আর বিকৃতিরই
অধিষ্ঠিতি যেথায় যেমন,
বিকার আসে ক'রতে শিকার,
ভাঙ্গন-বুদ্ধি হয়ই তেমন । ৭।
অনাচারী অত্যাচারীর
নীচ ব্যাভারে সত্তা-পোষা,
ভগবানকে ঘৃণ্য ক’রে
বৃত্তি-ভোগে তাঁ'কে দোষা । ৮।
বৃত্তিনেশার স্বার্থ নিয়ে
ভ্রান্ত-ব্যস্ত যা'রা সদাই,
তা'দের হ'তে সজাগ থেকো
ভুলো না দেখে ভান-বড়াই ৷ ৯ ৷
কামলুব্ধ লোলুপতা 
স্বার্থনেশার দৃপ্ত টানে,
নষ্ট করে জীবনগতি
প্রেষ্ঠনিষ্ঠায় আঘাত হেনে । ১০।
স্বার্থনেশায় পরার্থকে
বাতিল ক'রে যে-জন চলে,
ঠিক জানিস তুই ঐ চলনে
বিষাক্ত আনে, কুফল ফলে । ১১।
স্বার্থলোলুপ হৃদয় হ'লে
বোধ-বিবেকও ভোঁতা হয়,
কুবুদ্ধি আর ধাপ্পাবাজি
নষ্টামিতেই নিকেশ পায় । ১২।
স্বার্থফন্দীতে করবি যা'-সব
বুদ্ধি তা'তে খুলবে কম,
ধাপ্পাবাজীর প্রয়াসেই তোর
নষ্ট ক'রবে শৌর্য্য-দম । ১৩।
অসূয়া যা'দের অন্তরে রয়
ভাব ও দৃষ্টি তেমনি চলে
শিষ্ট সম্বিৎ তাল ছেড়ে তা’রা
আপন গণ্ডীর পানেই চলে । ১৪।
লুব্ধ অলস কায়দাবাজের
বোধ-বিবেকের এমনি খাত—
অশিষ্টতায় চ’লেই থাকে
পাওয়ার কিস্তি করতে মাৎ । ১৫।
অশ্রেয়কে যা'রা শ্রেয় ব'লে ধরে
তা'রই প্রসাদে পুলকিত হয়,
যেমন যে হউক হৃদয় তাহার
অশ্রেয়-আঁধারে ডুবিয়া রয় । ১৬।
মন্দ যা'-সব চাপা দিয়ে
অন্তর-পোষা ক'রে রাখা—
ভ্রষ্ট বুদ্ধ পুষে' রেখে
সত্তাতে তা'য় করা পাকা । ১৭।
অসৎ-বিদ্ধ শাতন-প্রভাব
নিয়েই যা'রা মুহ্যমান,
অশিষ্টকে শিষ্ট বলে
তেমনি করে আখ্যা দান । ১৮।
মন্দে প্রবল প্ররোচনা 
শ্রেয়নিষ্ঠা মুহ্যমান,
শিষ্ট নেশা নাইকো সেথায়
হৃদয়ে নাই ঊর্জ্জী টান । ১৯।
উদ্বেজনী উদ্দীপনা
অনর্থই করে সৃষ্টি,
ধৃষ্টচালী রকম-সকম
অশুভই করে বৃষ্টি । ২০ ।
অত্যাচার, অনাচার আর
কৃতিবিমুখ বন্দনা,—
জীবনদীপী চলার পথে
সত্তা-রসদ-ধর্ষণা । ২১।
জাহান্নমে যাবেই যদি
ঐ দেখ তা'র পথ সোজা
অবৈধ অনুচলনের
মাঝে-মাঝে ফতোয়া গোঁজা । ২২।
ব্যতিক্রমী দুষ্ট চলন
নিঃস্ব করে দিনকে দিন,
জীবন-দীপন খিন্ন হ'য়ে
সর্ব্বনাশে হয়ই লীন । ২৩।
ব্যতিক্রমী কথা ও কায়দা
আচার-ব্যবহার যা’-কিছু,
শুনলে-ধ'রলে-ক'রলে সে-সব
অসৎ ছুটবে তোর পিছু । ২৪।
ব্যতিক্রমে গজিয়ে ওঠে
এমনতর যা'-কিছু
ব্যতিক্রমদুষ্ট হ'য়েই চলে—
ভাঙ্গন ধরে যা'র পিছু । ২৫।
ব্যতিক্রমের দুষ্ট চলন
মুহ্য করে চেতন-দীপ,
নষ্ট করে জীবন-চলনা
প্রাণন-প্রদীপ হয় নির্জীব । ২৬।
সাত্বত যা' তা'র ভাঙ্গনে
অস্তিত্বটাও পড়ে ভেঙ্গে,
বেতাল-বেভুল চলন নিয়ে
ওঠে রাঙ্গিয়ে সেই রঙ্গে । ২৭ ।
প্রবৃত্তি-নেশায় লোভের দায়ে
অঘটন করে দুষ্টজন,
অসৎ-চলায় সাবুদ হ'য়ে
ভাগাড়ে টানে সৎ-জীবন । ২৮।
দুষ্ট নেশা যা'দের যত
অশিষ্টতায় তা'দের রোখ্,
এমনি ক'রেই আনে ডেকে
ক্রমে আরো দুঃখশোক । ২৯ ।
দুষ্ট দিশায় দোষ-দৃষ্টি
যা'দের যতই চলে অটুট
ভগবানের বিভা তা'দের
হ'য়েই থাকে আঁধার কূট,
স্বার্থসেবা সন্দেহ আর
কায়দাবাজি অনুচলন,
অন্ধতমের উতল ধান্ধায়
তা'দের সত্তার হয় বলন । ৩০।
দোষ দেখবার প্রবৃত্তিটাকে
উসকে দিয়ে দুষ্ট হওয়া—
নয় সমীচীন, সেটা কিন্তু
অলক্ষ্যে জাহান্নমেই যাওয়া । ৩১।
নিরাকরণ-বুদ্ধি নিয়ে
ক'রে আরোগ্যের অভিপ্রায়,
দুষ্ট যা' তা' দেখে নেওয়া—
সেটা দোষদর্শিতা নয় ;
সার্থকতা আসবে কি তোর
বৃত্তিমুখর এই চলনে ?
তৃপ্ত হ'বি, অঢেল হ'বি
কৃতিমুখর তাঁ'রই গানে । ৩২।
গুরুজনের তিরস্কার যা'
বেচাল ব'লে ধরিস্ না,
আহাম্মকী অহঙ্কারের
নষ্টামিতে ঢুকিস্ না । ৩৩ ।
গুরুজনের তিরস্কারে যে
বিচলিত বা বিকৃত হয়,
নিষ্ঠাধৃতি কেমন ধাঁচের—
তা'রই মাপ, তা'র পরিচয় । ৩৪।
প্রতিষ্ঠা-বাহাদুরির তরে 
মানুষ করে অনেক কিছু
নিষ্ঠানিপুণ আনুগত্য ছেড়ে
ফেরেই অবাস্তবের পিছু । ৩৫ ।
জংলী কুকুরের লক্ষণই এই—
নিষ্ঠা নাই তা'র অন্তরে,
মাংসলোভে খুঁজে বেড়ায়
এদিক-সেদিক্‌ কন্দরে । ৩৬ ।
নষ্টামি তো জাল পেতেই রয়
করতে নষ্ট সজ্জনে,
ভ্রষ্ট পথে ছিঁচড়ে নিয়ে
লোভ দেখায়ে শুধু টানে । ৩৭ ।
পুরুষের কাছে মেয়ের দঙ্গল
মেয়ের সঙ্গে পুরুষ,
ব্যভিচার তা'তে বাড়েই বাড়ে—
কুল, জাতি ও বর্ণসহ
ধ্বংসে তা' পৌরুষ । ৩৮।
নামে সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীর
রুদ্ধকামের বোধাগ্রহ—
কু-আচারে দেশ-সমাজের
করেছে বিষম কী নিগ্রহ ! ৩৯।
অসৎ ব্যাভার নয়কো ভাল—
যত ক্ষমা যেই করুক না,
অসৎ-বৃত্তি গ’র্জে উঠে
আনেই কিন্তু লাঞ্ছনা । ৪০।
জীবন-স্রোতটা ভাটিয়ে দেয় যা'
বৈধী চলন ব্যত্যয় ক'রে,
ধৃতী-আচার ব্যতিক্রম যা'য়
জীবন-বিভব তা' নষ্ট করে । ৪১।
স্বাধীন হ'য়েও পরাধীন যা'রা 
প্রবৃত্তি-ধৰ্ম্মই সার-সুন্দর,
আত্মঘাতী নয় কি তা'রা ?
জীবন-চর্য্যাও খিন্নকর । ৪২।
আবেগের বেগ যেমনই থাকুক 
নিষ্ঠানুগতি-কৃতি নিয়ে—
স্বভাবে যদি ব্যতিক্রম থাকে
চলেই ও-সব সে-পথ দিয়ে । ৪৩ ।
ইষ্টনিষ্ঠা নাইকো যাহার 
প্রবৃত্তি-নেশায় মশগুল্,
অপকর্ম্মের নেশায় সে-জন
হ'য়েই থাকে স্বতঃ-আকুল । ৪৪।
ইষ্টরাগে ফাটলধরা 
স্বার্থবুদ্ধি হ'লে
ফাটলধরা ঐ বুদ্ধিটাই
বিপথ বেয়ে চলে । ৪৫ ।
ইষ্টনিষ্ঠায় নাই ঊর্জ্জনা
আনুগত্যে নাই পরাক্রমে,
কৃতিসম্বেগ ঢিলেমিলে—
উন্নতি তা'র হয়ই কম । ৪৬ ।
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতি
যেথায় যেমন উল্টো চলে,
প্রবৃত্তিও তদনুপাতিক
তেমনি টানে জোরে বলে । ৪৭।
উর্জ্জনাশীল উৎসারণায়
যা'দের নিষ্ঠা ভেঙ্গেই যায়
না বেড়ে,
বৃত্তিবশী উদ্দীপনা
আধিপত্য ক'রেই চলে
না ছেড়ে । ৪৮।
ষড়রিপুর প্ররোচনা
ভাঙ্গতে পারলে নিষ্ঠা-ডোর,
তেমনতরই হীন ব্যক্তিত্ব
অন্তরেতে আছে তোর । ৪৯।
নিষ্ঠায় ভাঙ্গন ধরলেই কিন্তু
শিষ্টাচারটি ব্যাহত হয়,
স্বল্পকালেই চললে অমনি
ব্যতিক্রমের দিকেই ধায় । ৫০।
ইষ্ঠার্থে তুমি আনতিহারা
অশিষ্ট তোমার পরাক্রম,
বুঝে নিও অন্ধ সেথায়
নিষ্ঠানুগ কৃতির দম । ৫১ ।
দেখছ যখন ইষ্টনিদেশ
পালায় আসছে গাফিলতি,
তখনই বুঝো ধরছে ঘুণে
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতি । ৫২।
ইষ্টনিদেশ-ব্যতিক্রমী
কথা-কায়দা, চাল-চলন—
শুনলে-করলে সায় দিলে তা'য়
নিষ্ঠাতে তোর ধ'রবে ভাঙন । ৫৩।
ইষ্ট কিংবা শ্রেয়নিদেশ
অগ্রাহ্য যেই করলে তুমি,
নিছক জেনো—অন্তর তোমার
হামবড়ায়ের বৃত্তিভূমি । ৫৪ ।
গুরুগৌরবী পরাক্রমটি 
ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা লাগি'
জাগেনি যা'র অন্তরে—তা'র
চলেই শাতন প্রভুত্ব মাগি' । ৫৫।
অহঙ্কারীর দুর্ব্বলতা
দুর্ব্বল করে ধীয়ের গতি,
দুর্ব্বল করে শিষ্ট চলন
দুর্ব্বল করে চর্য্যারতি । ৫৬ ।
অভিমান বা আত্মম্ভরিতা 
যতই তোমার থাক্ না,
কিছুতেই বা কোনমতে
যা'কে ছাড়তে পার না,—
নিষ্ঠা তোমার সেইখানেতে
তেমনতরই রূপ ধ'রে
জীবনও তোমার করে নিয়ন্ত্রণ
যেথায় যেমন তেমনি ক'রে । ৫৭।
প্রেষ্ঠগর্ব্ব না থাকলে তোর
গৌরব হবে কিসে ?
শ্রেয়ার্থবাহী এ গৰ্ব্বই কিন্তু
দিগদর্শনের দিশে । ৫৮ ।
প্রবৃত্তিঘোরে অহং নিয়ে
অন্তর-গর্ব্বে দাঁড়িয়ে রয়,
একটু ব্যতিক্রমে কিন্তু
বিপর্য্যয় তা'র হয়ই হয় ।
সওয়া-বওয়ার বালাই যে-সব
ধারতে চায় না তাহার ধার,
প্রবৃত্তি তাই বিপর্য্যয়ে
ব্যতিক্রমটি আনেই তা'র । ৫৯।
অজ্ঞতার ক্ষুব্ধ অহঙ্কারে
বিজ্ঞ অছিলায়
ধূলিসাৎ করে যবে মহর্ষিগণেরে,
বিধাতার বিকট অবজ্ঞা
আনে ক্রমে বজ্র-নিপীড়ন,
যা'র ফলে জনগণ হাহাকারে,
মর্ম্মান্তিক ক্রন্দনের অশ্রুরাশি দিয়ে
সিক্ত করে ধরণীরে—
অন্তর-কন্দরে । ৬০ ।
প্রবৃত্তি অসৎ যেমনই হোক না
লিপ্সা-উপভোগে লাগাস্ না,
প্রেষ্ঠ-সম্বর্দ্ধনী লোকহিতী সেবায়
অশুভ নিরোধে লাগাস্ তা' ;
প্রবৃত্তিগুলির এই চর্য্যায়
স্বস্তি-আশিসে হ'বি ভোর,
প্রবৃত্তির অধীন হ'বি নাকো,
স্বস্তিতে র'বে সত্তা তোর । ৬১।
প্রবৃত্তির সুনিয়ন্ত্রণে
প্রেষ্ঠচৰ্য্যায় লাগাও তা',
যা'তে তাঁহার স্বস্তি বাড়ে
বাড়ে সত্তার দৃঢ়তা ;
এমনতর করতে করতেই
দেখতে পাবে ক্রমে ক্রমে,
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতি
সত্তায় তোমার আসছে নেমে ;
অস্খলিত নিষ্ঠা আর
অনুগতি, কৃতি-আবেগ,
নেমে এলেই দেখবে ক্রমে
উন্নতিরও বাড়ছে বেগ ;
ব্যক্তিত্বটা এমন হবে—
ইষ্টার্থ ছাড়া স্বার্থ নেই,
ইষ্টার্থটাই সব দিক্ দিয়ে
তোমার স্বার্থ, জীবন-খেই ;
যে-দাঁড়াতে দাঁড়িয়ে তুমি
বিন্যাস-বিভূতি করবে লাভ,
ধী-টাও তোমার তেমনি হবে
কৃতির সাথে হবে ভাব ।
স্বার্থ-প্রবৃত্তি-চৰ্য্যাবৃত্তি
অটুট চলায় চলতি হ'য়ে,
পরিবেশকেও তোমার চর্য্যায়
ক্রমে ক্রমে আনবে ব'য়ে ;
ইষ্টনিষ্ঠা, অনুগতি,
কৃতি-সম্বেগ, ধৃতি নিয়ে
চৰ্য্যানিপুণ স্বস্তি-সহ
পরিবেশটা ফেলবে ছেয়ে ;
ধৰ্ম্ম-অর্থ-জ্ঞানদীপনা
সার্থকতায় তোমায় ধ'রে
শিষ্ট প্রভাব-বিভায় তোমার
সত্তায়-আভায় উঠবে স্ফুরে । ৬২।

Loading