প্রবৃত্তি নিয়ে অনুশ্রুতি ২য়

অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “প্রবৃত্তি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৯১ – ২০১ পর্যন্ত মোট ৬৩ টি বাণী রয়েছে ।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

সব হারালে তখন—
প্রেষ্ঠ-নেশায় নিষ্ঠাহারা
স্বার্থলোলুপ যখন। ১।
প্রবৃত্তি তোর যেমনতর
অন্তরও তোর তেমনি,
চলা-ফেরা-বলা-করা
হয়ই তাই তোর সেমনি। ২।
মায়ের ভাঁওতায় ছেলে পাতিয়ে
মত্ত যা'রা তা'ই নিয়ে,
কাম-ডাইনী ঐ আড়ালে
রুধির চোষে ছোঁ দিয়ে। ৩।
শ্রদ্ধা যদি নাই থাকে তোর
আনতিহীন জীবনতাল,
প্রবৃত্তিপর স্বার্থগৃধ্নু
অকৃতজ্ঞ তোর কপাল। ৪।
বলায়-করায় যা'ই ভাল তোর
কুপাণ্ডিত্যের মোহে ঘিরে,
করলি না তা' ভ্রান্ত-স্বার্থে
খাচ্ছিস্ লোপাট ঘুরে-ফিরে। ৫।
অসৎ-পথে চলা-বলা
অসৎ-করা দেখতে মজা,
এই ধরণটি মরণপন্থী
এটিই বুঝিস্ অসৎ-ভজা। ৬।
সৎকে যা'রা বিদায় দিয়ে
অসৎ পথে চলতে থাকে,
অসতে হয় সর্ব্বহারা
পড়েই নানা দুর্ব্বিপাকে । ৭।
প্রবৃত্তি যা'য় বৃদ্ধি পায়
নষ্ট করে প্রকৃতি,
তা'তেই মানুষ আলসে বেহাল
চালকই তা'র দুষ্কৃতি। ৮।
ইচ্ছাস্রোতা প্রবৃত্তি তোর
চলবে যেমন যেই পথে,
সত্তা-সম্বেগ সেই তালেতে
চলবেই জানিস্ সেই সাথে। ৯।
কটুদৃষ্টি নিয়ে যদি 
নিন্দা নিয়েই থাকিস্ মাতি',
প্রকৃতি কিন্তু দেবেই দেবে
নিখুঁতভাবে নিন্দাখ্যাতি । ১০।
প্রবৃত্তি-লুব্ধ হ'বি যতই
বোধও হবে তেমনি ক্ষীণ,
ইষ্টনিষ্ঠ অটুট চর্য্যায়
বাড়েই বুদ্ধি দিন-দিন। ১১।
শ্রেয়-বনামে অশ্রেয়কে
শ্রেয় ব'লে জাপটে ধরে,
প্রবৃত্তিরই দাউ-দহনী
তর্জ্জনা তা'য় নিকেশ করে। ১২।
স্বার্থ কিংবা অন্তর-বিক্ষেপ
নিষ্ঠাকে টলিয়ে দিয়ে,
বিপর্য্যয়ে চললেই বুঝিস্
ভঙ্গুর নিছক তা'রই হিয়ে। ১৩।
লোভই যা'র হয় ভাগ্যনিয়ন্তা
অর্থ, মান, যশ আর খ্যাতি,
ব্যক্তিত্ব-বিভা ডোবেই যে তা'র,
নষ্ট করে চর্য্যা-ধৃতি। ১৪।
লোভের স্বপন-বিহ্বল হ'য়ে
সঙ্ঘ-সমাজ টুকরো করে,
সর্ব্বনাশা এই স্বভাবটি
জাতি-সম্পদ্ মারেই মারে। ১৫।
বৃত্তি-তৃষ্ণ বেল্লিক যত
উচ্ছৃঙ্খলও তেমনি সে,
দুঃখ-ধোঁকা মন্দ চলন
সৌভাগ্যকে ক্রমেই নাশে। ১৬।
লোভের দায়ে লোলুপ হ'য়ে
তাঁ'কে ভাঙ্গিয়ে খাবে যত,
অধঃপাতের ধাপ ভেঙ্গে তুমি
প'ড়বে নীচে তেমনি তত। ১৭۱
প্রবৃত্তিতে চুমুক দিয়ে
দ্রোহী ইষ্টপ্রাণ,
ধর্ম-কর্ম্ম যা'ই না করুক
নিরয়েই তা'র স্থান। ১৮।
হামবড়াইয়ের দম্ভ নিয়ে
অহং বেড়ায় গর্ব্ব ক'রে,
আশীর্ব্বাদের বর্ষা এলে
রোধেই ব্যর্থ দর্পভরে। ১৯।
যোনিযোগে ঢুকলে পাপ,
রোখাই কঠিন তাহার দাপ। ২০।
প্রবৃত্তি যা'র ঘৃণ্য 
মানসিকতাও তা'র জঘন্য। ২১।
স্বার্থবান্ লোভের দায়ে 
কুকাজ করে যা'রা,
ঐ পথেতেই স্বভাব গড়ে
হয়ই ছন্নছাড়া। ২২।
সৎ-আচার্য্যে ধাপ্পা দিয়ে 
সিদ্ধি কি কেউ পায় ?
লাখ গুরু সে করুক না কেন
জাহান্নমেই ধায়। ২৩।
যা' যা' তোমায় পেয়ে ব'সে
করায় তোমায় যেমন কাজ,
সেইটি জানিস্ গ্রহের লীলা
সু কিংবা কু তাহার সাজ । ২৪।
অভিমানে ভ্রান্তি আনে
আনে বিষাক্ত ব্যবহার,
মৈত্রীভাব বৃত্তিটারে
সেই বিষেতেই করে সাবাড় । ২৫।
খেলি কতই করলি কত
বিধির পথে চললি না,
বিধিহারা ব্যতিক্রমের
রেহাই পেতে পারলি না। ২৬।
মানুষে কি হয় রে প্রেম?
প্রেমই তো হয় টাকায়,
নইলে কেন ঘুরবে মানুষ
এমনতর ফাঁকায় ? ২৭।
ধনের লোভে মন দিয়ে তোর
ইষ্টনেশায় পড়লো বাজ,
নিষ্ঠাহারা মক্ষিকা তোর
উন্নতিটির সারলো কাজ । ২৮।
গুরুর দায়ে দায়ী হ'লি না
দায়ী হ'লি তুই প্রবৃত্তির,
অনাসৃষ্টি হানলো বাধা
সুষ্ঠ সুখ-সঙ্গতির । ২৯।
মান-বড়াই আর অহঙ্কারের
আধিপত্য ল'য়ে,
শ্রেয়ের পথে চলবি কি তুই
অমন আতুর হ'য়ে ? ৩০।
দুৰ্ম্মতি যেই ধরলো,
প্রেয়-নিদেশ অবজ্ঞাতে
দুর্ভোগে সে চললো । ৩১।
তোমার স্বার্থে দরদী পেলে
তা'র সাথে তোর বেজায় ভাব,
দ্বন্দ্ব তখন সেইখানেতে
খর্ব্ব যেথায় তোমার লাভ। ৩২।
স্বার্থসেবা উদাম যত
উজিয়ে চলার আকুল রাগ,
খতম হবে তেমনি জানিস্
খতম হবে দ্যোতন ফাগ। ৩৩।
কোপন স্বভাব রুখবি যত
দীপন দৃষ্টি রুখবে তোর,
কোন্ বেঘোরে পড়বি কখন
নিজেই হ'বি নিজের চোর। ৩৪।
লক্ষ কু-এর মহড়া দিয়ে
কাটাচ্ছ কাল—রাত্রদিন,
'ভগবানের নাইকো বিচার'—
তবুও বল,—এমনি হীন ? ৩৫।
কাম-কল্লোলে কাটলো জীবন
তোমার কামনার কেউ কি তিনি ?
লাখ কামনায় অঞ্জলি দাও
না চিনেও তাঁ'য় বলিস্ —চিনি ? ৩৬।
প্রবৃত্তিই তো প্রভাব আনে
সক্রিয় তা' যেমনি,
চৰ্য্যা-নিপুণ বর্দ্ধনাতে
সর্জ্জনাও তা'র তেমনি। ৩৭।
কুজাত ধনে মন যাহাদের
বৃত্তি-লোভী চাল-চলন,
নষ্ট তা'রা স্পষ্ট কথায়
স্বধর্ষিত তা'দের জীবন। ৩৮।
প্রবৃত্তিতে যা'র আঁট যেমন
ব্যক্তিত্বের বাঁধ যেমন যা'র,
স্বর্গ-নরক যা' হয় গতি
প্রাপ্তিও হয় তেমনি তা'র। ৩৯।
স্বার্থলোভে ঘুরিস্-ফিরিস্ 
বুক-ফুলানো গর্ব্ব নিয়ে,
ইষ্টার্থটা স্বার্থ নইলে
কী হবে সে গরব দিয়ে ? ৪০।
অশ্লীল বা অশুভ যা'
লোলুপ তা'দের আকর্ষণ,
লোলুপ ক'রে নিঝুম টানে
অপলাপই করে বর্ষণ। ৪১।
অহঙ্কারের কাছে ধরা
দিস্ নে রে তোর ঊর্জ্জী কৃতি,
যা'তে তোমার বইবে জীবন
বইবে উছল তোমার ধৃতি। ৪২।
তোমার যেমন প্রয়োজন
সবার জেনো তেমনিতর,
দুইটা দিক্ না দেখে-শুনে
স্বার্থলোভে হোস্ না দড়। ৪৩।
ইষ্টনিষ্ঠ বৃত্তি থাকুক 
ভাব চলুক তোর তেমনি ব'য়ে,
কৰ্ম্মে ফুটুক বাস্তবতায়
তদনুগ মূর্ত্তি নিয়ে। ৪৪।
বৃত্তি-রঙ্গিল যেমন হবে
ভাবও চলবে সেই পথে,
কর্ম্মও হবে তেমনতর
পাবিও ফল সেই মতে । ৪৫।
চাহিদাটা যেমনতর 
সেইতো বৃত্তি অন্তরে,
ভাব-অনুগ কৰ্ম্ম আসে
বাস্তবেও সে তা'ই করে। ৪৬।
প্রবৃত্তিগুলির নিয়ন্ত্রণেই
স্ব-টি তোমার উঠছে ফুটে,
প্রবৃত্তি অধীন যতই হবে
স্ব-টি তোমার নেবেই লুটে। ৪৭।
চিত্তবৃত্তির হয়ই নিরোধ
যুক্ত হ'লে গুরুর সাথে,
বৃত্তির ঘোর যতই ভাঙ্গে
ধী-ও গজায় ততই মাথে। ৪৮।
শ্রেয়র থাকায়, চলায়, বলায়
মনের নানা অবস্থায়,
নিয়ন্ত্রণশীল অনুচর্য্যা
না করলে কি বোধ গজায় ? ৪৯।
ভয় কিন্তু অন্তঃস্থ ভাব
লুকিয়ে থাকে, যায় না,
ইষ্ট-ভাবীর হ'লে ভাবুক
কুভাবটি স্থান পায় না। ৫০।
ধরণ-ধারণ যেমন তোমার
সু ও কু-এর তালে চলে,
গ্রহও তোমার তেমনতরই
সু ও কু-এ তেমনি ফলে। ৫১।
নিজের স্বার্থ ব্যর্থ হয় হোক্ 
ইষ্টার্থটি বেশ বুঝে নিস্,
চারু-চৰ্য্যায় সুব্যবস্থায়
সেগুলিকে সমাধা নিস্;
ঐ পথে তোর স্বার্থগুলি
বাড়বে দেখিস্ সেজেগুজে,
আসবে তোমার সত্তাতে তা'
সুসমীচীন দক্ষ বুঝে। ৫২।
লোভ আছে যা'র যে-জিনিসে
তা'র প্রীতিও থাকে তা'তে,
তা'রই চর্য্যায় প্রীতি আসে
লোভ আছে যা'র যা'তে। ৫৩।
ইষ্টনিষ্ঠ ভাববৃত্তির
উল্টো গেলেই মন,
হোক না যা' তা'
ইষ্টার্থেতেই করবি নিয়োজন। ৫৪।
তা' ক'রো না, যা'তে তোমার
ইষ্টনিষ্ঠা যায় ক'মে,
সেটি হ'লে জেনে রাখিস্
বর্দ্ধনা তোর যাবে দ'মে । ৫৫।
চিন্তা-চলন যেমনই হো'ক
সাজিয়ে নিও এমন ভাবে,
সঙ্গতিরই তালে-তালে
ইষ্টার্থ যা'য় জেগেই রবে। ৫৬।
মন্দ মনে আসে আসুক
আমল দিস্ নে তা'র,
ভাল কিছু এলেই মনে
ক'রবি তা'র সুসার। ৫৭।
ঘোঁট-পাকানো মনটা যে তোর
বৃত্তি-ঘণ্টে হোস্ নাকাল,
শ্রেয়োনিষ্ঠ হ' ওরে তুই
তা'তেই যা' সব কর্ সামাল । ৫৮।
বেপরোয়া চলিস্ যদি
চল্ না ও-তুই তাও ভাল,
ইষ্টনিষ্ঠ পরোয়া রেখে
দূর ক'রে দে সব কালো। ৫৯।
সব প্রবৃত্তি সুস্থ থাকুক
শক্ত-সবল কাজের বেলায়,
ইষ্ট-নিষ্ঠ প্রকৃষ্ট হোক
তৎপর হোক তা' তাঁ'রই সেবায়। ৬০।
আচার্য্য-চৰ্য্যা অটুট থাকুক 
হর্ষণারই উৎসবে,
যা'ক চ'লে যা'ক তমস্ দূরে
প্রাজ্ঞ-ধৃতির উদ্ভবে। ৬১।
প্রবৃত্তিকে দিস্ নে বলি 
দে বলি তা' ইষ্ট-পুজায়,
জীবন-বৃদ্ধি স্বস্তি পাবে
রেহাই পাবে মূর্খ মরায়। ৬২।
প্রবৃত্তি সব সংযমে রাখ
কু যেটা তা'র ধারিস নে ধার,
সংযত প্রবৃত্তির সুব্যবহারে
উৎসারণা পাবি অপার। ৬৩।

Loading