বিজ্ঞান নিয়ে অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ড

অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ডে “বিজ্ঞান” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২৩৯ – ২৪৬ পর্যন্ত ৪২ টি বাণী রয়েছে।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

নিষ্পাদনী ছন্দে চলাই
কৃতিসেবার ভজন-গান,
বিভূতি যা'র সঙ্গে ফেরে
উছল ক'রে জ্ঞান-বিজ্ঞান । ১ ।
বস্তু-জানায় জ্ঞান নিহিত,
বিহিত জানা বিজ্ঞান,—
সংবিধানী বিনায়নায়
ক্রিয়াসহ বিদ্যমান । ২।
কোথায় কেমন কৃতি নিয়ে
জীবনস্রোতের স্পন্দনা
কেমন ক'রে ওঠে-নামে,—
তা'ই বিজ্ঞানের বন্দনা । ৩ ।
তীক্ষ্ণ-কঠোর দৃষ্টি দিয়ে
বোধ-বিবেকের সন্দীপনায়
বাস্তবে যা' দেখিস্ ও-তুই !
আন্ তাহাকে নিরূপণায় । ৪ ।
নিটোল যখন নিরূপণা
বাস্তবে ফোটে সব মিলিয়ে,
ব্যবস্থা তেমন করবি সেথায়
বিবেচনার ধী-টি দিয়ে । ৫ ।
খোঁজার আবেগ, খোঁজে চলা,
খোঁজার চক্ষু, খোঁজার ধী—
ধ'রে দেবে অনেক-কিছু
এগিয়ে চলার যা' বিধি । ৬।
রূপ দেখ গুণবিধান নিয়ে
সঙ্গে নিয়ে, সঙ্গতি,
প্রীতিনিষ্ঠায় এমনি ক'রেই
নিয়ে এসো সুধৃতি । ৭ ।
একটা ক'রে হয়নি সৃষ্টি
সৃষ্টি কিন্তু বহুর পাকে,
ধাতা-মেঘের পালন-রাগে
সৃষ্টি-বৃষ্টি হ'য়েই থাকে । ৮।
কত রকমে এক ফল হয়
রকম-বৈশিষ্ট্য কোথায় কেমন,
ধীইয়ে নিয়ে সে-সব বিষয়
পারিস্—করিস্ তা'র নিয়মন । ৯ ।
স্পন্দই তো সবার আধান
শব্দে বিকাশ স্পন্দই হয়,
বিশেষ স্থলে বিশেষ রকম
বিনায়নে মূৰ্ত্তি পায় । ১০
যে-প্রকৃতি যেমন স্পন্দে
থাকে-বাড়ে বিশেষ হ'য়ে,
ব্যষ্টিবিশেষ তেমনি ক'রেই
চলে-ফেরে প্রকৃতি নিয়ে । ১১।
স্পন্দনাটার সংবেদনা
যেমনতর যেথায় হয়,
শব্দটাও তো মূৰ্ত্তি নিয়ে
বিশেষ হ'য়ে তা'তেই রয় । ১২।
বৈশিষ্ট্যটা যে-প্রকৃতির—
স্পন্দ-আধান শব্দগতি,
তেমনি ক'রেই বিকাশ পেয়ে
নিয়ে চলে জীবন-দ্যুতি । ১৩।
স্পন্দনারই বিশেষত্ব
যেমন যেথায় থাকে আবেগে,
জীবন-ধারাও তেমনি হ'য়ে
চলতে থাকে দীপন-বেগে । ১৪।
বিধান-স্পন্দনা দেখে-শুনে
খুঁজে পেতে দেখে চল,
বিনায়নার বিভা নিয়ে
সঙ্গতিটার বাড়া বল । ১৫।
বস্তুগুলির জীবন-স্পন্দন
নিহিত থেকে বস্তুতেই,
বাড়ায়-কমায় তেমনতর
বস্তুগত স্পন্দনেই । ১৬।
স্পন্দনার তোড় যেথায় যেমন
শব্দ-বিকাশও তেমনি,
প্রকৃতিও হয় তেমনতর
বৈশিষ্ট্যও হয় সেমনি । ১৭।
ঊর্জ্জী সাম্য স্পন্দনাটা
চললে হ'য়ে স্বতঃস্রোতা,
জীবনও হয় তেমনতরই
স্বতঃ-সাম্য খরস্রোতা । ১৮।
যে-শব্দটা যা'কে বুঝায়
সেই পদার্থ সেইটা,
পদার্থে আছে গুণ ও ধৰ্ম্ম—
পদার্থ-মৰ্ম্ম যেইটা । ১৯।
ধাতু মানেই ধাত কিন্তু
যে-ধাত যা'কে ধারণ করে,
ধাতে কিন্তু স্পন্দনা রয়,
নন্দনা দেয় তেমন তা'রে । ২০।
মাটিতেও তো স্পন্দন আছে,
খনিতেও আছে তেমনি,
যেমন খনি স্পন্দনও তেমনি
বিভব-বৃত্তিও সেমনি । ২১।
স্পন্দনবোধী যা'রা যেমন
ধরতেও পারে তেমনি তা’রা,
ধ'রে-ক'রে উৎসারণায়
আনতে পারে তেমনি সাড়া । ২২।
খড়ের কুটো নিয়েও যদি
ধৃতি-কৃতির সুসন্ধিৎসায়
বিচারণী বিবেকে চলে,—
করার মত ফলও পায় । ২৩ ।
সাড়া ধড়ার যন্ত্র যদি
বিশেষ যা' তা' ধরতে পারে,
সেই স্পন্দনই বুঝিয়ে দেবে
কোথাতে কী রকম ফেরে !
স্পন্দন যা'তে যেমন আছে
তেমনি সাড়া তা'তে দেয়,
সাড়াদক্ষ হ'লে পরেই
কে কেমন তা' বুঝে নেয় । ২৪ ।
জন্ম মানেই জ'মে ওঠা
উপাদানের সংহতি,
সে সংহতি-জীবন-উৎস
ব্যক্ত হ'য়ে হয় ব্যক্তি ;
ব্যক্ত যা' তা'র অন্তরালে
থাকেই জীবন-স্পন্দনা,
যে-স্পন্দনা বাড়িয়ে তোলে,
আনেই জীবন-নন্দনা । ২৫।
স্পন্দন-বিভার অনুগতি
অঢেলস্রোতা শব্দ-ঢেউ,
স্পন্দনেরই মূর্ত্তি শব্দ
শব্দ-ধারাই প্রাণন-ঢেউ । ২৬।
স্পন্দনাটা যেথায় যেমন
মূৰ্ত্তিও তেমনি গ'ড়ে ওঠে,
গড়ার রাগে তেমনি বাগে
উপাদানও তেমনি জোটে । ২৭ ।
স্পন্দন-তরঙ্গ যেমনতর
উপাদানের আকর্ষক,
উপাদান তো তেমন ক'রেই
মূর্ত্তনারই সন্দীপক । ২৮ ।
যেথায় যেমন যে-স্পন্দনে
সত্তাটির হয় অবস্থিতি,
সেই স্পন্দনা আয়ত্ত ক'রে
আন জীবনের সুসংস্থিতি । ২৯ ।
স্পন্দনাটার ভাঁটায়ই হয়
বার্দ্ধক্যেরই আগমন,
অমনি ক'রেই ক্রমে ক্রমে
অস্তিত্বটার হয় বিলোপন । ৩০ ।
স্পন্দনাটা যতই কমে
নিথরও হয় ব্যক্তিত্ব তেমন,
অবসাদের অবগাহনে
নিঃশেষ হ'য়ে যায় সে তখন । ৩১ ।
সব যা'-কিছুর মূলে স্পন্দন
জীবন-প্রভা যা'কে কয়,
স্পন্দনবিহীন অস্তিত্বটা
কোথাও কিন্তু দেখা দায় । ৩২।
শরীর-প্রাণের সঙ্গতিতে
ধৃতি যেমন বিকাশ পায়,
কৃতি-আবেগও তেমনতরই
সোজা কিংবা বাঁকা ধায় । ৩৩ ।
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতির
চালচলনও যেমনতর,
বিধান-সংহতির তালে-বেতালে
সন্দীপিতও তেমনতর । ৩৪ ।
রেতঃ কিন্তু সক্রিয়ই থাকে,
ডিম্বকোষ রয় সুপ্ত,
এ দু'য়ের সঙ্গমে শরীর
জীবনে অভিদীপ্ত । ৩৫ ।
ডিম্বকোষে রেতঃধৃতি
যা'র বিভাজনে দেহ ও প্রাণ,
ধ'রে রাখে বিহিত চলায়
বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিষ্ঠান । ৩৬ ।
রেতঃতে জানিস্ থাকেই থাকে
স্বভাব-শক্তির উদ্দীপনা,
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতির
তেমনি থাকে সম্বন্ধনা ;
এ-সবগুলির সঙ্গতিতে
চলৎ থাকে জীবনস্রোত,
প্রকৃতি পায় তেমনতরই
তা'রই মতন জীবন-দ্যোত । ৩৭ ।
সব-কিছুরই জীবন আছে
নিয়ে তা'দের থাকার দ্যুতি,
বিশেষ বৈধী বিনায়নে
হয়ই বিশেষ পরিণতি ;
সমাবেশ যদি করতে পার
বিধান-বস্তুর এমনতর,
এতেও জীবন পেতে পার
হ'লে সমাবেশে সুতৎপর ;
সমাবেশটা করলে এমন
বৃদ্ধও যুবা হ'তে পারে,
জেনে-শুনে বিধায়নায়
সুসঙ্গত করলে তা'রে । ৩৮।
প্রাণনধারার সঙ্গে যেমন
শারীর সম্বন্ধ ওতপ্রোত,
ঐ সঙ্গতির ভাব-দীপনাই
নিষ্ঠা ব'লে অভিহিত ;
ঐ স্রোতেই শরীর-সঙ্গতি
যেমনতর সন্দীপিত,
তা' হ'তেই কিন্তু অনুগতি-বিধান
হ'য়েই থাকে সুসম্ভূত । ৩৯ ।
প্রাণন-স্পন্দন জীবনধারা
আছে তোমার বুঝতে পেলেই,
ধারণ-পালন-শক্তি-সত্তা
এটাও কিন্তু ধরতে পাবেই ;
ধারণ-পালন-সম্বেগই ঐ
জীবনীয় গতি-স্পন্দন,
যা'র চলনে তোমার জীবন,
যা'য় দাঁড়িয়ে তোমার বর্দ্ধন । ৪০ ।
কারক গ্রহ তারা-চন্দ্ৰ
যখন যেমন শুভ রয়,
তেমনি দিনে কাজ আরম্ভে
প্রায়ই জানিস্ শুভ হয় । ৪১।
জ্যোতির্ব্বিজ্ঞান শিখতে গেলে
গ্রহের ভাতি বিভূতি সব,
কোথায় কেমন করছে ক্রিয়া
দেখ বোঝ কর অনুভব ;
অনুভূতির সুসমাহার
ব্যষ্টি-সমষ্টি সব নিয়ে,
বিশেষে বা হ'চ্ছে কেমন
সমষ্টিটার সব বিনিয়ে ;
সমষ্টিগত ব্যষ্টি যা’-সব
কখন বিভব কেমন হয়,
কখন কেমন রূপে দাঁড়িয়ে
কী বৰ্ত্তনায় কোথায় ধায় !
বিশেষ জ্ঞানে এমনি হ'য়ে
বিশেষত্ব নাও খুঁটে,
ব্যক্তিত্ব তোমার বিজ্ঞ হ'য়ে
শিষ্টভাবে উঠুক ফুটে । ৪২।
শ্রেয়নিষ্ঠ ভক্তিটি নিয়ে
চললে বিজ্ঞান ঐ পথে,
সব-সমাহারী সঙ্গতি নিয়ে
সাৰ্থক হ'য়ে ওঠে তা'তে ;
প্রতিটি ব্যষ্টি-সৃষ্টির সাথে
সঙ্গতিশীল মন্দে-ভালয়,
সংহতি নিয়ে সংযত প্রাণে
দাঁড়া না বিজ্ঞান সেই আলোয় !