বিধি প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ২য়(১-৫০)

অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “বিধি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২১১ – ২২৯ পর্যন্ত মোট ১০৪ টি বাণী রয়েছে ।
নিচে ০১ – ৫০ বাণীসমূহ দেয়া হলো।

বিধি হ'লো তা'ই—
যে-আচারে সুস্থ জীবন,
থাকে না বালাই। ১।
বিধি ততই বদলালো—
প্রকৃতির কৃতি-করণ
যেথায় যেমন পাল্টালো। ২।
পেতেই যদি চাও—
যা' হ'তে তুমি চা'চ্ছ পেতে
তৃপ্তি ঢেলে দাও। ৩।
প্রাপ্তিই যদি চাও,—
আপন হ'য়ে আপন ক'রে
তৃপ্তি প্রাণে পাও। ৪।
যে-চাহিদায় যেমন চলন
পাওয়াতেও আসে তেমনি বলন। ৫।
যেমন হবে কৃতি
পাবেও তেমনি মতি। ৬।
যা'কে যেমন মানবে
তা'কে তেমন জানবে। ৭।
আস্থা, কৌশল, চাপ,
তিনই বলের মাপ। ৮।
অগুণ যত বেড়ে চলে,
দরিদ্রতাও ততই ফোলে। ৯।
ভাবের অভাব যেই হ'লো,
অনটনও সেই এলো। ১০।
ভালই কর, মন্দই কর
যে-বিধিতে চ'লে,
তেমনতর ভাল-মন্দ
সেই চলনে ফলে। ১১।
মন্দবুদ্ধি হ'টবে যত 
সৎবোধনাও বাড়বে তত। ১২।
কোষ্ঠী ফলে ক'রলে,
ধর্ম ফলে ধ'রলে। ১৩।
মান না দিয়ে মান পেতে চায়
অপমানই তা'র পিছে যায়। ১৪।
না ক'রেও যে মজুরী খায়,
চৌর্য্য-দোষে তা'রে পায়। ১৫।
অপ্রত্যাশায় যেমন দান
দাতাও তেমনি পান প্রতিদান। ১৬।
চলতি পথে বাধা কিছু 
আনেই বিপদ প্রায়-ই পিছু। ১৭।
দেখবি-শুনবি চলবি-ফিরবি
যেখানে যেমন সাজে,
কথায়-কাজে মিল নাই যা'রー
সেটা কিন্তু বাজে। ১৮।
কথায়-কাজে মিল যেখানে
রকমারি বিচরণে,
সেটাই কিন্তু বাস্তবতায়
আসে বেশী নিদর্শনে। ১৯।
মনের হিসাব বোধের সাড়া
চলনায় যা'দের সমান গতি,
চিন্তা-ভাবে প্রয়োজনে
একই যেমন, তেমনি রতি। ২০।
বাস্তবেতে যেমন হবে
বিভবও হবে তেমনি,
ঐশ্বর্য্যের সাথে আধিপত্য এসে
ক'রবে তোমায় সেমনি। ২১।
দূরদর্শী সূচলনে
আপদ্-বিপদ্ কমই হয়,
করণীয় সিদ্ধ হ'য়ে
বিভূতিতে দীপ্ত রয়। ২২।
সব বিষয়ে অনুকম্পী
আগ্রহদীপ্ত আবেগ নইলে,
জানাই বল, শোনাই বল,
বোধ-বিপর্য্যয় ফলেই ফলে। ২৩।
বিপর্য্যস্ত যে-ধারণা
বিপর্য্যয় তা' টেনেই আনে,
ধরণ-ধারণ ঠিক রাখিস্ তাই
নইলে থাকবি ভ্রান্ত মনে। ২৪।
ভাব দিয়ে হয় কথার দাম
প্রয়োজনে কড়ি,
চোখের নেশায় কালো-কুৎসিত
হ'য়ে ওঠে পরী;
ভাববৃত্তি যেমন কৃতী
যেমন চলায় যেমন থাকে,
চলায়-বলায় ব্যক্তিত্বকে
ঘুরিয়ে নেয় সে তেমন পাকে;
ধরলি ভাবে যেমনটি যা'
চলনও হবে তেমনি,
ভাল-মন্দ যা'ই হোক না
চলবিও জানিস্ সেমনি;
ভাবটি তোমার অন্তরজোড়া
যেমনতর চ'লবে নেশায়,
চলন-বলন-ফলন তোমার
হবেও কিন্তু তেমনি দিশায় । ২৫।
দেওয়া-থোওয়া অনুচর্য্যায়
ভাববৃত্তি অটুট হয়,
নেওয়ায় কিন্তু বৃত্তি-সেবায়
হয়ই ছিন্ন, পায়ই লয়। ২৬।
লক্ষ্মীদেবীর তিরস্কারেও 
শুদ্ধিপথে যে-জন চলে,
সিদ্ধি আসে দীপ্ত প্রভায়
ঐশ্বর্য্য তা'র স্বতঃই ফলে;
ইষ্টানুগ সক্রিয়তার
উদাম চলা থামলো যেই,
লজ্জাশীলা ভাগ্যদেবী
হাত গুটিয়ে বসলো সেই:
যেমনতর আগ্রহ তোর
কৃতি-অনুরাগে,
ভাগ্যদেবী তেমনি ক'রে
অন্তরে তোর জাগে। ২৭।
শ্রেয়-বন্দনার নন্দনাতে
নন্দিত হয় পরিবেশ,
ধৃতি-কৃতি-চৰ্য্যা সহ
ব্যক্তিত্বেরও হয় উন্মেষ। ২৮।
বলি একটা আসল কথা—
শ্রেষ্ঠনিষ্ঠ চর্য্যারতি,
সেটার গোড়া কাটা গেলেই
কাটা যাবে সব নিরতি। ২৯।
স্বার্থ লাগি' প্রণয়ের ভান
সর্ব্বনাশে টানে,
নিষ্ঠাপ্রতুল প্রেষ্ঠচর্য্যা
লক্ষ্মী ঘরে আনে। ৩০।
চেষ্টা যা'দের নিষ্ঠা-আলোকে
দৃষ্টি দিয়েই চলতে চায়,
ব্যতিক্রম-দুষ্টি তা'দের
রুখতে নারে কৃতি-চলায়। ৩১।
সুকৃতিসহ পুণ্য যখন
দ্বন্দ্বে দীর্ণ হয়,
ত্রাসত্রস্ত পায়ই সে-দেশ
সঙ্কটে বিলয়। ৩২।
কৃতি যখন ধৃতিরই স্থাপক
প্রীতিসুন্দর বাস্তবে,
সত্য তখন শান্তিসহ
সেথায় শুধু সম্ভবে। ৩৩।
ক'রেছ কী, হবেই বা কী 
যা' ক'রেছ হ'য়েছ,
সুখ-সুবিধা অসুখ-বিসুখ
তেমনতরই পেয়েছ। ৩৪।
অন্তরেতে বিদ্ধ হ'য়ে
কৃতিকুশল সিদ্ধ যোগে,
যেমনতর যাই হয়েছ
পাচ্ছ কিন্তু তেমনি ভোগে। ৩৫।
অন্তর-বিদ্ধ যে-ভাব হ'ল
ফুটলো কাজে-কর্ম্মে,
তা'তেই যে তুই সিদ্ধ হ'লি
এলো জীবন-ধর্ম্মে। ৩৬।
চেষ্টা-যত্ন যেমন তোমার
মানসগতি যেমনতর,
কৃতিমুখর যা'তে তুমি—
হওয়া-পাওয়াও তেমনতর। ৩৭।
দাবীর তোড়ে জোর-জবরে
করেই বিরোধ সৃষ্টি—
কৃতিচর্য্যী অনুকম্পায়
হয়ই সোহাগ বৃষ্টি। ৩৮।
লোভের দায়ে পড়ে পায়ে
কৃতিদীপ্তি নাই কোনো,
নরকও তা'দের উপেক্ষা করে
এমনি বিবশ, ঠিক জেনো। ৩৯।
ভক্তি বনাম আসক্তিতে
চ'লবে ক'রবে যেমন পথে,
ফলও আসবে তেমনতরই
তেমনতর অবস্থাতে। ৪০।
ধরা বিনা করা কি হয়—
করা ছাড়া পায় কোথা ?
ধরা-করা-বিহীন পাওয়া
সে-পাওয়ায় নাই সার্থকতা;
করার পথেই হওয়া থাকে
থাকলে কৃতি-নেশা অঢেল,
উচ্ছলাতে উথলে ওঠে
হয় না অবসাদে ঘায়েল। ৪১।
সুপ্তিই যদি দীপ্তি হয়
ধৃতি তবে কোথায় ?
কৃতির সেবা না করিস্ তো
বৃদ্ধি যাবে বৃথায়। ৪২।
সুব্যাভারে শুদ্ধ অন্তর 
চৰ্য্যায় তৃপ্তি হয় মনের,
সৎ-আচারে ধৃতি বাড়ে
তপে শক্তি বাড়ে প্রাণের। ৪৩।
যে-ওজতে জন্ম তোমার
প্রকৃতিতে তা' থাকেই থাকে,
নিষ্ঠা-চেষ্টা-যত্ন-তপে
শুভর পথে বাড়াও তা'কে। ৪৪।
রণন যেমন বস্তু মতন
নানান খাঁজে বর্ণিত হয়,
রেত-রণনও তেমনতরই
রজকে তেমনি উচ্ছলয়। ৪৫।
স্বার্থ-স্বার্থ সবাই করে,
স্বার্থসেবা সবাই চায়,
স্বার্থের স্বার্থ নষ্ট ক'রে
আপন স্বার্থ টেকার নয়। ৪৬।
পরের স্বার্থ নষ্ট করাই
তোমার স্বার্থ পায়ে ডলা,—
যা'দের স্বার্থসেবায় হ'ল
অর্থান্বিত তোমার চলা;
পরের ক্ষতি ক'রে কেন
নিজের ক্ষতি আনবি ডেকে ?
বান্ধবতার চর্য্যা নিয়ে
প্রীতির সোহাগ আনরে হেঁকে;
আত্মস্বার্থ করতে সিদ্ধ
লোককে বেঁধে কাঠগড়ায়
যা'রাই চলে, ধরলে তা'দের
দুঃখ ফেরে পায়-পায়;
স্বার্থসিদ্ধির প্রীতি তোমার
স্বার্থ লাগি' সব পার',
স্বার্থই যদি অর্থ হ'লো
পরার্থ-ধার কী ধার' ?
পরার্থ যদি স্বার্থ হ'তো
স্বার্থ পেতো সলীল গতি,
বিভব তোমার বিভূতি হ'য়ে
রাখতো সতে অটুট মতি। ৪৭।
কষ্ট দিয়ে কা'কেও কিন্তু 
হয় না কা'রও শ্রেয়োলাভ,
কষ্ট দিয়ে কষ্টই পায়
সঙ্গে-সঙ্গে বাড়ে বিলাপ। ৪৮।
ফাঁকি দিয়ে আনন্দ যা'র 
দুঃখ দিয়েই তৃপ্তি,
আপসোসের অন্তর নিয়ে
শুভচর্য্যায় তা'র ইতি। ৪৯।
অবস্থা ও রকম দেখে 
চাহিদা দেখে অন্তরের,
চলিসও তুই যেমনি চালে
ফলও পাবি সেই তালের। ৫০।

Loading