বিধি প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ২য়(৫১-১০৪)

অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “বিধি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২১১ – ২২৯ পর্যন্ত মোট ১০৪ টি বাণী রয়েছে ।
নিচে ৫১ – ১০৪ বাণীসমূহ দেয়া হলো।

জানার ধাপে উঠবি যত
সহজ হবে ততই চলা,
সহজ হবে চলন-ফেরন
সহজ হবে বুঝ-বলা। ৫১।
সংশুদ্ধ হ' নিজে আগে 
অন্যেও কর্ তেমনি,
পারস্পরিক অনুকম্পা
ফলও দেবে সেমনি। ৫২।
দিগবলয়টা যেমনতর
তোমার কাছে দেখছ যা'—
বলয় থাকলেও অন্যের কাছে
তেমনতর হয়তো না। ৫৩।
ভাবিস্ নে সব সমান হবে
সমান বুদ্ধিমান,
জন্ম-কর্ম যেমন হবে
তেমনি তো আধান। ৫৪।
বিষয়টাকেও ক'রলি বিলীন
কৃতজ্ঞতাও দিলি বিদায়,
গরব-চলার চ'লতে গিয়ে
হারালি যে চলার উপায়। ৫৫।
অসতের ভেতর থাক যদি
অসৎ হ'য়েই উঠবে,
সতের কাছে অসৎ গেলে
সৎ-পোষণাই জুটবে। ৫৬।
মামার বাড়ী উদাম ঝোঁক
লঙ্ঘি' বাপে, খুড়ো-জ্যাঠায়,
পরিণামে বিচ্ছিন্নতায়
ঋদ্ধি যা' তা' আপনি হারায়। ৫৭।
শ্বশুরবাড়ীর ন্যাওটা হ'য়ে
যে ছেলেরা চলে,
দেখতে পাবে অচিরেতে
অধঃপাতেই ঢলে। ৫৮।
বিপাক আসে কিসে?
যেখানে যেমন চলতে হবে
হারালে তা'র দিশে। ৫৯।
প্রকৃতির যে অনুশাসন
ছিঁড়েকুড়ে, না মেনে তা',
করবি যেটা তাইতে বিপদ্
র'বে না তা'য় সার্থকতা। ৬০।
ইষ্টার্ঘ্যটি গায়েব ক'রে
ধরলি রে তুই যেমন চলন,
বুঝিস্ না কি ঐটি ধ'রে
ব্যাধের মত আসছে শমন ?
ইষ্টে বিশ্বাসঘাতী হ'লে
দগ্ধ-বেচাল জীবনখান,
আপদভরা দাউ-দহনে
খাক্ হয়ই সে ধৃষ্টপ্রাণ। ৬১।
পয়সা নিয়ে ইষ্টসেবা
পালন করতে পরিবার,
বোধবিদ্যা নিকাশেই ধায়,
ব্যর্থ জীবন হয়ই তা'র। ৬২।
স্বার্থপোষণ যা'কে দিয়ে
তা'র পোষণে নাই রতি যা'র,
আকাশ ফুঁড়ে দেবতা এলেও
রাখতে নারে জানিস্ তা'র;
খাচ্ছ যাহার, নিচ্ছ যাহার
যা' হ'তে তোমার বর্দ্ধনা,
চর্য্যাতে তা'র মুহ্য হ'লে
থাকবে কোথায় রক্ষণা ?
সে-গাছ কভু আর পাবে না
গোড়া কেটে যা'র খাচ্ছ ফল,
পাওয়ার আশা পড়ল ভাটায়
আর কি হবে উজান জল ? ৬৩।
আইন-কানুন নীতি-নিষেধ
যাহাই কিছু বল না,
সত্তাধৃতি যা'য় না আনে
বর্দ্ধনাও তা'য় আসে না। ৬৪।
মিথ্যা কিংবা সত্তাখর্ব্বী
আবৃত্তি নিয়ে থাক যদি,
পেয়ে বসবে সেটাও তোমায়
ক্ষয় নিয়েই তো নিরবধি;
বর্দ্ধনায় যে খর্ব্ব করে
আসলেও সে যায় নেমে,
শক্তি তা'দের অবশ, অলস
উদ্দীপনা যায় থেমে। ৬৫।
কাল নিয়ন্তা দেখবি যেথায়
ব্যতিক্রমদুষ্ট উন্নতি,
সম্বোধনাবিহীন চৰ্য্যা—
দুঃস্থিতিই হয় পরিণতি। ৬৬।
দোষ ও ত্রুটির গান গেয়ে তুই
লোকের হৃদয় ভাঙ্গিস্ না,
হাল-হামেশা করলে এমন
অনুকম্পা পাবি না। ৬৭।
সন্দেহশীল মনটি নিয়ে
চিন্তা-চলন আরো কথা,
আঁচা তোমার হবে না ঠিক
হবে ব্যাহত, হবে বৃথা। ৬৮।
ব্যতিক্রমদুষ্ট মন নিয়ে যা'রা
সাত্বত সংস্কার ভাঙ্গে,
সন্তান-সন্ততিও তেমনি ক'রে
তা'দের রঙেই রঙে। ৬৯।
তোমার সত্তা আহত যেথায়
অন্যেও তা'তে আহত হয়,
সত্তা-হনন অনাচারে
পদে-পদেই কিন্তু ভয়। ৭০।
অলস করায় ব'সে পাওয়ায়
অজ্ঞ-স্থবির বাচক জ্ঞানী,
অপটুত্বে সর্ব্বস্বান্ত
হ'য়ে ওঠে ভাগ্যধ্যানী। ৭১।
হাওয়াবাজি কল্পনাতে
নিশ্চয় ক'রে ধরবি যা'য়,
দুঃখ ছাড়া পাবি নাকো,
বাস্তবে তা'র ঠাঁই কোথায় ? ৭২।
ভ্রান্তি জানিস্ ক্লান্তি আনে
ক্রান্তি হারায় নিঝুম হ'য়ে,
দৃষ্টি-আলোক শিষ্ট-পথে
যায় না কিন্তু সহজ ব'য়ে। ৭৩।
নষ্টামি আর পাগলা চালে
চলবি যতই নিত্যদিন,
খর্ব্ব হ'বি, দীর্ণ হ'বি
ক্রমে-ক্রমেই হ'বি হীন। ৭৪।
বাহাদুরির বহন নিয়ে
থাকলে মেতে নিত্যদিন,
জ্ঞান-গবেষণ মুহ্য হবে
ব্যক্তিত্বটাও হবে ক্ষীণ। ৭৫।
শুধু সাহায্যে যতই চলবে
ততই হবে অপটু,
পারার শক্তি পয়মাল হবে
জীবনটাও হবে কটু। ৭৬।
'না' যা'তে হয় সেই চলনে
চললে কি আর হওয়ায় পাবে?
না-এর সাথে সব যা'-কিছু
কোথায় কখন ভেসে যাবে। ৭৭।
অদৃষ্টেরই অন্তরালে ভাববৃত্তিদ্যুতি
ব্যক্তি-ধীকে নাচায় যেমন তালে,
তেমনি নাচে ভর-দুনিয়া
চলে তেমনি চালে। ৭৮।
ধাপ্পাবাজি, জুয়াচুরি
অসৎ পথে চলবি যত,
অদৃষ্ট তোর ভাগ্যদেবী
বিধ্বস্তিতে মজবে তত । ৭৯।
নিষ্ঠাবিহীন শিষ্টাচারে 
হয় না কা'রো উন্নতি,
ধাপ্পাবাজির মকস নিয়ে
না হয় দ্যোতন-সংস্থিতি। ৮০।
করলে অকৃতজ্ঞ ব্যাভার
দুষ্কৃতিই হবে দূষক,
দুষ্কৃতি আর দূরদৃষ্ট
হবেই যেন শাসক। ৮১।
আপন দোষে ভোগে মানুষ
মুখ্যতঃ তা' হয়,
পরের দোষে ভোগে মানুষ
গৌণ ভোগ তা'য় কয়। ৮২।
সুখী হ'তে আসলি ভবে 
ঐ কামনা করলি কত,
সুখী কা'কেও করলি নাকো
কাম্য যা' তা' করলি হত। ৮৩।
প্রকৃতি যা'র যেমনতর
জীবন-সম্বেগ যা'র যেমন,
এই দুনিয়ায় সেই মানুষটি
প্রতিষ্ঠাও পায় তেমন। ৮৪।
আগ্রহেরই অন্তরালে
উদ্দেশ্যটি থেকে,
চালায়, বলায়, ঘোরায়, ফেরায়
অদৃষ্টকে ডেকে। ৮৫।
তুই যা' করিস্, ধরিস্ যা' তুই
পাসও তেমনি তাহার ফল,
ঐ তো বিচার ভগবানের—
আকাশে ওঠে সাগর-জল। ৮৬।
ভাল যে-সব ক'রে থাকিস্
অন্তরে যে স্মৃতি পায়,
জীবন-ধৃতিও তেমনি ক'রে
তেমনতরই তা'তে ধায়। ৮৭।
আত্মগৌরব করিস্ নাকো 
পরের গৌরব কর্ বেজায়,
ইষ্টানুগ পরচর্য্যায়
থাকলে থাকে সব বজায়। ৮৮।
ঊর্জ্জনাতে সৎচলনটি
উছল তো'তে যতই হবে,
বিহিতভাবে আগ্রহটা
সার্থকতায় নিয়ে যাবে। ৮৯।
ভজন-বুদ্ধি সবারই আছে
অল্প-বিস্তর যা'র যেমন,
যা' ভজে যে, যেমন ক'রে,
ভাগ্যলিখা তা'র তেমন। ৯০।
দৃপ্ত যদি নাই র'লি তুই
শুভপ্রসূ নিষ্পাদনে,
তৃপ্তি রে তোর আসবে কোথায়—
মুগ্ধ হ'য়ে ভজন-গানে ? ৯১।
শ্রদ্ধা যদি থাকতই তোমার
স্বভাবে ফুটে উঠলে তা',
সব বিষয়ের তাল নিয়ে
ব্যক্তিত্বে ফুটত সততা। ৯২।
সু-কে যা'রা যেমন ভজে 
সেবা-অনুরাগে যত্ন ক'রে,
চর্য্যানিপুণ সদবোধি তখন
সৌভাগ্যকে আনেই ধ'রে। ৯৩।
ধারণ-পালন করিস্ যদি
'সু'কে সমাদরে,
সুধা পাবি, চলবি সুধায়
জীবন ধন্য ক'রে। ৯৪।
শাসন যদি তুষ্টি না দেয়
পোষণ পাবে কোন্ পথে?
তুষ্টি-পুষ্টিই শাসনের ফল
নিষ্ঠা ফোটে যা'য় সৎ-এ। ৯৫।
নিষ্ঠা-উতল আবেগ-আনতি 
অনুগতি নিয়ে,
যত্নসহ উদভাবনায়
অর্থ ওঠে জীঁইয়ে। ৯৬।
আদর ক'রে কেউ যদি দেয়
স্নেহ-সম্ভ্রম-প্রাণে,
তৃপ্তিভরে নিও সেটা
দিও-ও তেমনি টানে। ৯৭।
যে-নিষ্ঠাতেই নিষ্ঠ থাক
ভাব-দেবতা হন রঙিল,
চলবেও তুমি সেই পথেতে
গতিও হবে রূঢ়-সলীল। ৯৮।
নিষ্ঠাবিহীন অনুরতি
ইষ্টে হোক্ বা প্রেষ্ঠেই হোক্,
না থাকলে সেথা নিদেশ-বহন
আনে উচ্ছৃঙ্খল পাগল রোখ্। ৯৯।
তৃপ্তি দিলেই তৃপ্তি আসে
ধৃতিচর্য্যায় ধৃতি,
যেমনভাবে যা' করবি তুই
ফলেও তেমনি কৃতি;
তৃপ্তি তুমি পেতে গেলেই
তৃপ্ত কর তাঁ'রেই আগে,
যাঁ'র তৃপণায় তোমার ভিতর
নিটোল হ'য়ে তৃপ্তি জাগে। ১০০।
তা'ই তো ভাল পেলাম যা' তা'
তাঁ'র দয়া যা' দিল,
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
বুঝলি না—দিন গেল। ১০১।
ধন্য যিনি, পুণ্য যিনি
দেখলে তাঁ'কে করলে সেবা,
চললে যে তাঁ'র নিদেশ-মতন
উথলে ওঠে তাঁ'রই বিভা। ১০২।
ইষ্টেতে তোর প্রতিষ্ঠা হ'লে
ফলবে মেওয়া পায়-পায়,
উচ্ছলি' তোর সত্তা ফেঁপে
রিক্ত হবে বেঘোর দায়। ১০৩।
ঈশ্বর সবায় ধ'রেই আছেন
ধারণ-পালন-উৎসবে,
জন্ম যেমন তেমনি হ'য়ে
জীবনবৃদ্ধি-বৈভবে। ১০৪।

Loading