ব্যবহার প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড (১০১-১৪৭)

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “ব্যবহার” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৩৯ – ১৬৫ পর্যন্ত মোট ১৪৭ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ১০১ – ১৪৭ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

চাস্ নে কিছু লোকের কাছে
স্বার্থবাজির লোভ-লালসে,
পারগতায় যা' জোটে দিস্
নিস্ যা' দেয় সে ভালবেসে। ১০১।
যেখানেই কেন থাকিস্ না তুই
হো'স্ নাকো ভার কোনকালে,
যা'র বাড়ীতেই যাস্ না কেন
রাখিস্ তা'দের তৃপণ-তালে। ১০২।
অন্যকে যদি পুষিয়ে না দাও
কৃতি-চর্য্যার ঊর্জ্জনায়,
তোমায় পোষাতে পারবে কি তা'রা
ধৃতি-দীপ্তির সর্জ্জনায় ? ১০৩।
জীবন-স্বার্থ যা'রা রে তোর
স্বার্থলোভে তাড়িয়ে দিয়ে,
ভাবছিস্ হবে স্বার্থসিদ্ধি
বিভব-বৃদ্ধির মূল হারিয়ে ? ১০৪।
কৃতজ্ঞতা যেথায় থাকে
সুষ্ঠু-চর্য্যী ব্যবহার,
প্রীতির আবেগ উছল হ'য়ে
প্রাজ্ঞদীপন আসেই তা'র। ১০৫।
কেউ যদি কিছু দেয়ই তোমায়
তুমিও দিও সাধ্যমতন,
পরিচর্য্যী দেওয়া-নেওয়ায়
বৃদ্ধিই পাবে, করবে যেমন। ১০৬।
স্বস্তিহারা করবি যা'কে
শাস্তিও র'বে তেমনি মজুত,
স্বস্তিচর্য্যা এমনি করিস্
দেখিস্ না রয় একটু খুঁত। ১০৭।
সব সময়ে সাবধান থাকিস্—
ব্যবহারের বিড়ম্বনা
সতর্কতা উপচে যেন
বিকৃত কাউকে করে না। ১০৮।
নিষ্ঠা যা'দের ছেঁড়া-ছুটো
প্রীতিও তা'দের আবিল হয়,
নিদেশ-পালন প্রয়োজন পূরণ
করায়ও তা'দের হয় ব্যত্যয় । ১০৯।
চলন-বলন হবে কেমন
নিও সুঠিক ক'রে,
লোক-হৃদয় গলিয়ে দিও
সার্থকতায় ভ'রে। ১১০।
ব্যবহারে লুকিয়ে থাকে
কেমনতর কী মেকদার,
কৃতি-চলনে কেমন তুমি,
কর্ম্মে স্বরূপ কেমন তোমার ! ১১১।
তোর জীবনকে যেমন দেখিস্
অন্যের বেলায়ও দেখিস্ তাই,
জীবন-চৰ্য্যায় হ'য়ে বিজ্ঞ
দূর ক'রে দে অসৎ-বালাই। ১১২।
জীবনটাকে ভালবাসিস্
ভালও লাগে ভাবতে তা',
ঠিকই জানিস্ অন্যেও কিন্তু
নিজের বেলায় ভাবে তা'। ১১৩।
তুমি মিষ্টি কতখানি
জ্ঞানদীপ্ত কতটুক,
লোকে কেমন ভালবাসে
সেটি কিন্তু জানার তুক্ । ১১৪।
অন্তরে যদি ব্যথাই লাগে—
সক্রিয় সহানুভূতি আছে যা'র,
তাহার সাথে ব’সো-ব’লো
বিহিত ক'রো সেই ব্যথার। ১১৫।
সম্ভ্রম-শিষ্ট দূরেই থেকো 
গুরুজনা হ'তে,
অশিষ্ট-ব্যত্যয়ী হ'য়ো নাকো—
দেখো কোনমতে। ১১৬।
বড়র প্রতি শ্রদ্ধানতি
ছোটর প্রতি স্নেহ,
যেই হারালি অমনি রে তোর
রইলো না আর কেহ। ১১৭।
কোথায় কেমন চলতে হবে
বলতে হবে কী কোথায়,
করতে হবে কেমনতর—
দেখেই হিসাব করিস্ সেথায়। ১১৮।
বাস্তবতায় মিলিয়ে দেখিস্ 
মিল খায় কা'র সাথে,
করতে হ'লে করিস্ তেমনি
চ'লে সেম্‌নি পথে। ১১৯।
যা'কে যেমন বলতে হয়
করতে হয় যা' যেমনতর,
হিসাব ক'রে করিস্-বলিস
সাবধান থেকে তেমনতর। ১২০।
করলে বললে যেমন—কা'রো
কষ্ট কিংবা ক্রোধ হয়,
ক'রো-ব'লো হিসাব ক'রে
নয়তো তাহা ভালই নয়। ১২১।
কেমন কথায়, কেমন করায়
স্বস্তি পায় কে কত,
লক্ষ্য রেখে করবি রে তা'ই
যেমন পারিস্ যত। ১২২।
যেখানে যা'র যেমন লাগে
তেমনি ব্যবস্থিতি,
স্মরণ ক'রে আগেই তাহার
ক'রে নিও মিতি। ১২৩।
কী অবস্থায় কোন্ সংঘাতে
কখন কেমন লাগে তোমার,
বোধ-বিবেকে রেখে সে-সব
কেমন লাগে কা'র ক'রো বিচার। ১২৪।
খাওয়া-দাওয়া, চলা-বলা
বিবেক-সহ দেখে নিস্,
যে জায়গাতে যেমন খাটে
তেমনতরই ক'রে চলিস্। ১২৫।
ব্যবহার আর চাল-চলনটি
শিষ্ট-সুন্দর যদিও হয়,
ক্ষিপ্র-কুশল বুদ্ধিমত্তা
বিনে কিন্তু সার্থক নয়। ১২৬।
মুকুরের যত বেতাল গঠন
ঘটায় ব্যতিক্রম প্রতিবিম্বের,
তোমার ভাবে ভাবিত ক'রে
বিন্যাস কর ঐ মুকুরের। ১২৭।
নিগ্রহেরই ডামাডোলে
ব্যাপৃত হ'তে বাধ্য করিস,
ব্যবহার তোর এমনতরই
ভাগ্যকে তোর পায়ে দলিস্। ১২৮।
আপদ-বিপদ্ অপমানে তোর
প্রতিরোধে শক্ত হ'য়ে,
দাঁড়ান যাঁরা, তাঁ'দের তরেও
করবি তেমন হৃদয়-দিয়ে। ১২৯।
তোমার কষ্টের সুবিধা নিয়ে
স্বার্থ বাড়ায় যে-জন নিজের,
সাবধানে থেকো তা'-হ'তে তুমি
নষ্ট না হয় তোমার কাজের। ১৩০।
স্ত্রীর কাছে নয় শিষ্ট-স্বাধীন
সন্তানের কাছে তাচ্ছিল্য পায়,
ব্যবহার-অনভিজ্ঞ এমন ব্যক্তির
মনঃকষ্ট হয় পায়-পায়। ১৩১।
কা'র উপর তোর কী ধারণা
কথায়-কাজে-ব্যবহারে,
সাবধান হ'বি বুঝলে খারাপ
করবি ইঙ্গিত যা'তে সারে। ১৩২।
দেনেওয়ালা যে-জন তোমার
পানেওয়ালা তাঁ'র তুমি,
আচার-ব্যাভার-ঊর্জ্জনাকে
রাখবে তাঁহার তৃপ্তিভূমি। ১৩৩।
কৃতিদীপন আলোক-ছটা
সমাধানী দীপ্তি নিয়ে,
সবার জীবন আলো করুক
বাঁচা বাড়ার দ্যুতি দিয়ে
উজ্জীবনের উৎসর্জ্জনা
উৎকর্ষণের উচ্ছলায়,
খরস্রোতা চলল যে ঐ
উদ্দীপনার সচ্ছলায়। ১৩৪।
তোর গৌরবে গৌরবান্বিত
জানবি যত হবে লোকে,
দীপন-দ্যোতন পেয়ে তা’রা
উৎসারিত করবে তোকে। ১৩৫।
ছেলেপুলে আত্মীয়-স্বজন
নিজের বাড়ীর পরিবার,
পারস্পরিক বাঁধনে আন্
তৃপণ-দ্যুতি বুকে সবার। ১৩৬।
বিনায়নী অভ্যাস তোমার
কাজে-কর্ম্মে সদাচারে,
দেখলে জেনো ধ'রেই থাকে
তোমার সকল পরিবারে। ১৩৭।
জীবনদীপ্তি শুভ হ'লেই
তৃপ্তি আনে অনেকের,
তা' হ'তে আবার চারিয়ে চলে
ক্রমে ক্রমে সকলের। ১৩৮।
সাপের মুখের খুলতে যে বিষ
ধূৰ্ত্ত বেদে হ'তে হয়,
ইষ্টনিষ্ঠ-চালে পাকা
নইলে সে তো বেদেই নয়। ১৩৯।
ভাব-অভিব্যক্তি দেখবি কেমন,
দেখবি কেমন অন্তর-টান,
সেই হিসাবে ব্যবহার করিস্
নিয়ে অমন তীক্ষ্ণ জ্ঞান। ১৪০।
সম্ভ্রমাত্মক দূরত্ব কিন্তু
সবার সাথেই রাখা ভাল,
ঋত্বিক্, ইষ্টভ্রাতা যা’রা
তা'দের সাথেও তেমনি চ'লো। ১৪১।
শিষ্টনিষ্ঠা, আনুগত্য,
কৃতিসম্বেগ, সৎস্বভাব,
যা'দের যেমন দেখবে তেমন
তা'দের সাথে রাখবে ভাব। ১৪২।
মিতি চলায় চল তুমি
শিবসুন্দর সাজে,
তৃপ্তিভরা সম্ভার নিয়ে
চল প্রতিকাজে। ১৪৩।
সত্য বল প্রিয় ক'রে
অনুকম্পী রাগে,
অপ্রিয় সত্য ব'লে কেন
পড়বে দোষের ভাগে ? ১৪৪।
অপ্রিয় সত্য বলতে হ'লেও
সুখী-সুন্দর ভাবে,
ব'লো সেটা বললে কিন্তু
শুভই তা'তে হবে,
তাই ব'লে ব'লো না কভু
অসত্য প্রিয়ভাবে। ১৪৫।
অভিমানের ধার ধেরো না
হৃদ্য কথা ব'লো,
দরদভরা ব্যবহারে
সবারে নিয়ে চ’লো;
শাসন-তোষণ যা'য় কর না
হৃদ্যভাবে ক'রো,
তর্পণাতে এমনিভাবে
উন্নতিতে ধ'রো;
সাধ্যেতে যা' কুলায় তোমার
অবস্থা যা' বলে,
সেই চলনে চ'লো তুমি
যা'তে জীবন জ্বলে;
সবার জীবন ঐ ধরণেই
চলতে পারে যা'তে,
এমন ধান্ধা সদাই রেখো
বিবেচনার সাথে। ১৪৬।
যে-ই যা' বলুক তোমার কাছে
যেমন চলায় চলুক না,
প্রীতির তাকে সবায় দিও
প্রীতিমাখা বৰ্দ্ধনা ;
সত্য-মিথ্যা যা'ই বলুক যে
বলতে দিও সবটুকু তা'য়,
ঘুরিয়ে দিও সতের দিকে
হৃদ্য তোমার বিহিত কথায় ;
ইষ্টদাঁড়া ঠিক রাখিও
তা'কেই ক'রো বন্দনা,
ঐ পথেতে যেমন পার
ক'রো সবার নন্দনা ;
মঙ্গল-ঘট তুমিই সবার
তুমিই প্রীতির অর্চ্চনা,
হৃদয়মাঝে বুঝুক সবাই
তুমিই শুভের মূর্চ্ছনা। ১৪৭।