ভক্তি প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “ভক্তি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৫৬ – ৬৬ পর্যন্ত মোট ৫৮ টি বাণী রয়েছে।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

ভক্তি কিন্তু জ্ঞানের আশ্রয়
ভক্তি ভজায় সব-কিছু,
সব-কিছুরই সঙ্গতি আনে
অর্থও চলে তা'র পিছু। ১।
ভক্তিযোগে আসেই কিন্তু
ভজন-যোগের খিদে,
ভজনযোগই কৰ্ম্মযোগ—
সার্থক হয়ই সিধে। ২।
ভক্তি-বাঁধন আসল বাঁধন
ভজনদীপ্ত কৃতি-রথে,
ধৃতি-আচরণ, চরিত্র-চলন
চালায় সবায় অমর পথে। ৩।
ভক্তিটাকে ছাড়িস নে তুই
পুষে রাখিস্ অনুরাগ,
জ্ঞানের তৃপ্তি ভজন-চলন
দীপ্ত করে জীবন-যাগ। ৪।
ভক্তি-প্রীতি-ভালবাসায়
নিষ্ঠা-রতির হয় না শেষ,
ঊর্জ্জীতেজা হৃদয়ে তো
রয় না চর্য্যার ক্লান্তি-লেশ। ৫।
ভক্তি-প্রীতির অবগাহনে
গহন আসে দৃষ্টিপথে,
সে-দৃষ্টিতে বোধ-পর্য্যায়ে
ধন্য হয় নর জীবন-রথে। ৬।
ভক্তি কিন্তু নয়কো অলস,
নয়কো অবশ, নিষ্ক্রিয়,
ইষ্টনিষ্ঠ ঊর্জ্জীতেজা
সেবা-নিপুণ ইন্দ্রিয়। ৭।
ঊর্জ্জীভক্তি উচ্ছলা যা'র
জ্ঞান-বিবেক আর নিষ্ঠারতি,
ধৃতি- সাহস উছল জ্ঞানে
উছল ক'রে রাখেই মতি। ৮৷
পরাক্রমেও মাধুর্য্য বয়
ভক্তি যেথা জেগে রয়,
মোহন দীপ্তি-বিকিরণায়
ধারণ-পালন-কৃতিময় । ৯।
ভক্ত যে হয়, শক্ত সে হয়
শ্রদ্ধানিপুণ নিষ্ঠাযোগে,
ঊর্জ্জীদ্যুতির স্ফূর্ত্তি নিয়ে
আপদ-বিপদ্ রোখেই রোখে। ১০।
নিষ্ঠাভরা ভজন ছাড়া
ভক্তি কভু রয় না,
সেবাদীপ্ত-চৰ্য্যাবিহীন
ভক্ত কৃতী হয় না। ১১।
অর্থলোভেই ভক্তি যা'দের
অর্থই যা'দের প্রিয়, প্রেষ্ঠ,
অর্থলোভেই যে দরদী —
নিষ্ঠাবিহীন সে নিকৃষ্ট,
তা'রা কিন্তু অর্থ হ'তে
একটুও যদি বঞ্চিত হয়,
কৃতঘ্ন হৃদয় করবেই তা'দের
অর্থদাতার অপচয়। ১২।
ভক্তি যদি নাই থাকে তোর
শক্তি পাবি কিসে?
ভক্তিহারা শক্তি জানিস্
স্থিতিকেই বিনাশে। ১৩।
ভেট দিলেই যে ভক্তি হ'ল
সেটা কিন্তু নয়,
অনুরাগী পরিচর্য্যাই
ভক্তি-উৎস হয়। ১৪ ।
ভজনসেবা না করিস্ তো
নিষ্ঠানিপুণ শ্রদ্ধা পেলে'—
ভক্তি কি তোর আসবে কভু
অন্তরেতে কোনকালে ? ১৫।
নিষ্ঠা-ভক্তি-কৃতিচৰ্য্যা
প্রেষ্ঠকেন্দ্রিক নয় যেখানে,
দুৰ্ম্মদ সেই দুৰ্ম্মতিতে
নিকেশ করে ধনে-প্রাণে। ১৬।
ইষ্টপূজার পূত আসন—
জীবনটারই পরম ধাম,
নিষ্ঠাপুত হ'য়ে তুমি
কৃতিতে হও পূর্ণকাম। ১৭।
ইষ্টনিষ্ঠা না থাকলে কি
আবেগ-ঊর্জ্জনার হয় উদয় ?
নিষ্ঠানুগত্য-কৃতিসম্বেগে
আবেগ-ঊৰ্জ্জনা আনেই জয়। ১৮।
ঊর্জ্জনা যদি থাকেই রে তোর
অস্খলিত নিষ্ঠারাগে,
ইষ্টানুগ কৃতি-স্ফীতি
সঞ্চারিবে তপের যাগে। ১৯।
জীবন-ধূপে মূর্চ্ছনা তোর
বহুক নিত্য গন্ধ ব'য়ে,
কৃতির ঢেউটি চলতে দে তোর
কৃতার্থতার ছন্দ ল'য়ে। ২০।
কৃতিহারা জ্ঞান বা ভক্তি
ভাবের লাড়ু ঠিক জানিস,
সেবাচর্য্যার কৃতি নিয়ে
সবই সার্থক, তা'ই মানিস্ । ২১।
শ্রেয়জনার নিদেশ-পালায়
ফুটলে আত্মপ্রসাদ বোধ,
আসে কৃতি, নিষ্ঠানুগতি
সংশয়েরই হয় নিরোধ। ২২।
যিনি তোমার মানের ধাতা
তাঁ' হ'তে অপমান লাখ শত,
উপচয়ে উপচে তোলে—
থাকলে তাঁ'তে সেবাব্রত। ২৩।
শোষণলোভে শিষ্য হ'য়ে
তোষণবাণী যা'ই বল না,
অপকর্ম্মের অন্তর-আঘাত
ভাঙ্গবে একদিন সেই ছলনা। ২৪।
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতি নিয়ে
ইষ্টকে তুমি জানবে যত,
ভক্তি-জ্ঞানের পাল্লা তোমার
বেড়ে উঠবে ক্রমেই তত। ২৫।
ইষ্টনিষ্ঠ কৃতিচৰ্য্যায়
জ্ঞান-বিজ্ঞান যেমন বাড়ে,
পিতৃমাতৃ-ভক্তিতেও জানিস্
ঐ চর্য্যারই ধৃতি বাড়ে। ২৬।
ইষ্ট জানিস্ পিতামাতার
শিষ্ট বেদন-বিগ্রহ,
তাঁহার প্রতি থাকলে নতি
নিরুদ্ধ হয় নিগ্রহ। ২৭।
শিষ্ট নেশায় ভাববৃত্তিকে
রঙিল ক'রে ইষ্টটানে,
আন্ না ওরে সার্থকতায়
পিতামাতার কৃপার দানে। ২৮।
পিতামাতা যুগ্মভাবে
ইষ্টে থাকেন রূপায়িত —
নিষ্ঠাচর্য্যার রাগদীপনায়
অন্তর হয় মুখরিত। ২৯ ।
পিতামাতার সংবেদন,
মূর্ত্ত স্বস্তি, মূর্ত্ত জ্ঞান,
ইষ্টেই যে মুখরিত—
বুঝবি হ'লে ইষ্টপ্রাণ। ৩০।
পিতা স্বর্গ, পিতা ধৰ্ম্ম,
পিতাই তপের নন্দনা,
পিতৃপ্রীতি চারিয়ে আনে
সব দেবতার বন্দনা। ৩১।
দেখ্ না তোরা পিতৃভক্তি
জীবন কেমন করে উছল,
ভরদুনিয়া পিতার তপে
বোধবিবেকে করে উজল। ৩২।
জগৎপাতার প্রতীক পিতা
ঐ পিতাতেই আত্মরতি,
থাকে যদি মলয়স্রোতা—
বাড়েই বুদ্ধি বিবেক-মতি। ৩৩।
আরাধ্যদেব পিতাকে তুমি
নিত্য কর নমস্কার,
জ্ঞানদাতা তিনিই জেনো—
শিবরূপেতে তিনি তোমার। ৩৪।
দীপ্ত যাহার পিতৃশ্রদ্ধা
নিনড় যাহার ভক্তি-দীপ,
নিষ্ঠারাতুল নন্দনাতে
উথলে ওঠেন স্বয়ং শিব। ৩৫।
জন্মদাতা পিতা যিনি
প্রণত হ'য়ে তাঁহার পায়,
সব দেবতার আধান তিনি
রাখ ধ'রে তা'য় নিশ্চয়তায়। ৩৬।
পিতাই জেনো স্বর্গ তোমার
ধৃতিসত্তা পিতাই যে,
সব তপেরই গোড়া পিতা
সার্থকতা তাঁর মাঝে। ৩৭।
পিতার পূজায় সত্তা-পুরুষ
অন্তরে তোর স্থিতি পান,
আশিস্-কুশল কৃতি-দীপনায়
করেন তিনি স্বস্তি-দান। ৩৮।
পিতৃপ্রীতি ঊর্জ্জী যাহার
কৃতিমুখর ধৃতি নিয়ে,—
স্বর্গ-আশিস্ আপনি ঝরে
দীপন-দীপা বোধ বিনিয়ে। ৩৯।
পিতৃসেবায় ব্রতী যে-জন
সত্তাবিবেক বুদ্ধি নিয়ে,
জীবনধারার ঊর্জ্জনা তা'র
ফোর্টেই অঢেল আলো বিছিয়ে। ৪০।
পিতার প্রতি শ্রদ্ধাতে হয়
বোধকৃতি সূক্ষ্ম কূট,
হৃদয়টাকে কৃতি-প্লাবনে
করেই জীবন উজল স্ফুট। ৪১।
অস্তিত্বটা গজিয়ে উঠুক
ঐ পিতারই ধন্য-বরে,
বৃদ্ধি আসুক, বোধি আসুক,
স্বস্তি আসুক দেহের ঘরে। ৪২।
সূক্ষ্ম চলুক বিবেক-বুদ্ধি
দূরদৃষ্টি সূক্ষ্ম হো'ক্,
পিতৃপ্রসাদ জীবনটাকে
শুদ্ধ করুক বাড়িয়ে ঝোঁক। ৪৩।
পিতৃনিষ্ঠা, শিষ্টাচার আর
শুভসুন্দর ব্যবহার,
নিয়ন্ত্রিত করে জীবন
নিয়ে অশেষ উপচার। ৪৪।
পিতার প্রতি নিষ্ঠা র'লে
থাকলে শিষ্ট ঊৰ্জ্জনা,
বোধ-বিবেকের সঙ্গতিতে
অসতের হয় বর্জ্জনা। ৪৫।
স্থিতিমুখর মায়ের আশিস্
কৃতিমুখর বাপে টান,
পিতামাতার স্বস্তিবাদে
কৃতার্থতায় ভরে প্রাণ। ৪৬।
নিষ্ঠা-কৃতি মায়ের প্রসাদ 
বোধ-দীপ্তি পিতৃ-তপে,
তাঁদের ইচ্ছা আপূরণায়
থাক্ লেগে তুই সাধন-জপে। ৪৭।
পিতামাতায় নিষ্ঠা-ভক্তি
ইষ্টনিষ্ঠা গজিয়ে তোলে,
তপের নেশায় দীপন-রাগে
জীবন জানিস্ কৃপায় দোলে। ৪৮।
পিতামাতা হরগৌরী
তোর সত্তাতে একায়িত,
আরাধনার উচ্ছলাতে
রাখ্ ক'রে তুই স্বস্তিগত। ৪৯।
পিতামাতা যেমনই হো'ক—
ভক্তিপূজার নিয়ন্ত্রণে
একায়িত শিষ্ট কর
নিবিষ্টতার চর্য্যা-দানে। ৫০।
পিতামাতার শিষ্ট নেশায়
ইষ্ট-আসন যা'দের পাতা,
অটল-নিটোল হ'য়ে তা'রা
জীবন কাটায় ধ'রে ধাতা। ৫১।
পিতামাতায় যা'র শ্রদ্ধাভক্তি
সাম্যস্রোতা উজ্জ্বলা,
বোধবিবেকের ঊর্জ্জনা তা'র
সঙ্গতিশীল সচ্ছলা। ৫২।
জীবনস্রোতটি তরতরে তোর
রাখবি ক'রে যতই তেজাল,
পিতামাতার প্রসাদে হবে
ইষ্টনিবেশ ততই ঝাঁঝাল। ৫৩।
পিতামাতার নিষ্ঠানিটোল 
পরিচর্য্যী উপাদান,
স্বস্তি-সহ বোধ-বিবেকের
সূক্ষ্ম দৃষ্টি করেই দান। ৫৪।
পিতামাতার স্থিতি যতই
করবে তুমি পরিবেশে,
পরিবেশের পিতামাতাও
উচ্ছলায় তোয় ধরবে এসে। ৫৫।
পিতামাতার প্রিয় তুমি
যতই হবে ঊর্জ্জনায়,
দুনিয়াটাও তেমনি ক'রে
তুলবে তোমায় বর্দ্ধনায়। ৫৬।
পিতায় শ্রদ্ধা, মায়ে টান
সেই ছেলেই হয় সাম্য-প্রাণ। ৫৭।
পিতৃগণকে প্রণাম কর
পূর্ব্ব-পূর্ব্ব পরাৎপর,—
অন্তরেরই দ্যুতিলোকে
ধৃতি যাঁদের নিরন্তর ;
সত্তা-ধৃতিই ভোগ্য যাঁ'দের
কাম্য ফলের অভিদাতা,
ঈপ্সিত যা' কৃতিতপে
সেই প্রদানের পরম কর্ত্তা;
সকল বাঁধন মুক্ত ক'রে
প্রণাম কর্ রে, কর্ প্রণাম—
জীবন-পথের যাঁ'রা সূক্তি
যাঁরা তোদের তীর্থধাম। ৫৮।

Loading