রাজনীতি সম্বন্ধে অনুশ্রুতি ৪র্থখন্ড (১-৪০)

অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ডে “রাজনীতি” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৮২ – ২০৬ পর্যন্ত ১২০ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ০১ – ৪০ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

লোকরঞ্জনী চর্য্যানীতি 
স্বতঃস্রবা ব্যক্তিত্বে যা'র,
রাজনীতিজ্ঞ তা'কেই জানিস,
সাত্বত চর্য্যায় লক্ষ্য তা'র । ১।
রাজনীতির যা'রা বড়াই করে
অথচ জানে না ধৰ্ম্মনীতি,
অপকর্ষী সে-সব নেতার
অপদম্ভ ঘটায় ভীতি । ২।
মত যদি তুই বাস্তবতায়
সত্তাসিদ্ধ করলি না,
মত কিন্তু মতই র'ল
অর্থে তা'কে আনলি না । ৩ ।
থাকলে আদর্শে ব্যতিক্রম
জাতির ঘটায় মতিবিভ্রম । ৪ ।
নেতা যেথায় সাত্বত নয়,
সাত্বত স্বার্থ করেই ক্ষয় । ৫।
নেতার রইলে কু-ঊর্জ্জন,
ক্ষয়েই চলে দেশ ও জন । ৬।
আদর্শ না হ'লে মহৎ-শিষ্ট,
করেই জাতিকে কুট-নিকৃষ্ট । ৭।
শিষ্ট সঙ্গতিত সম্বৃদ্ধ না হ'লে—
সেই আদর্শে কুফল ফলে । ৮।
আক্রোশদুষ্ট আদর্শ যে ধরে,
জাতি ও জন সে ধ্বংস করে । ৯।
পালন-পোষণ-চৰ্য্যাবিহীন
আদর্শ দেশকে করেই যে দীন । ১০।
অসৎ ধাওয়া, অসৎ পাওয়া,
অসৎ করায় বাহাদুরি,
ছারেখারে দেশটা পোড়ে
সত্তা-বিভব হরণ করি' । ১১।
পূৰ্ব্বপুরুষে নাইকো শ্রদ্ধা
বাস্তুভিটায় নিষ্ঠা নাই,
কুলাচার যা'র ব্যতিক্রান্ত
দেশটা নষ্ট করে তা'রাই । ১২।
শিষ্ট কুলের ঐতিহ্য-সংস্কারে 
কৃষ্টি নয় যা'র গাঁথা,
নিয়ন্তা সে নয়কো কভু,
নয়কো স্বভাব-নেতা । ১৩।
ছোট যা'রা নীচু যা’রা
পরের ভাষা বলতে চায়,
বলা-করায় ক'রে তা'রা
আত্মপ্রসাদ পেতে চায়,

নিজের ভাষা, নিজের পোষাক
তৃপ্তিভরা কৃষ্টিযোগ,
সব যা'-কিছু উড়িয়ে দিয়ে
করতে চায় সে জীবন ভোগ । ১৪ ।
নিষ্ঠানিপুণ আনুগত্য-কৃতি
দেশসমাজে যতই হীন,
ঊর্জ্জীতেজা পরাক্রমে ।
সে-দেশ কিন্তু ততই দীন । ১৫ ।
পাগল বুদ্ধির অহমিকায়
অগ্রাহ্যই যদি করিস্ সবায়
ধৃতিই যে তোর শীর্ণ হবে,
ব্যক্তিত্ব কি তা'তে দাঁড়ায় ? ১৬।
লোকপ্রীতির বাহানা নিয়ে
সত্তাঘাতী অনুরাগ—
এমন যা'রা তা'দের কিন্তু
নষ্ট নিপুণ জীবন-যাগ । ১৭।
প্রধান হবার লোভ করিস্ না
ধৃতিপালী সবার হ’
যেমন পারিস্ তেমনি ক'রে
অসময়ে তা'দের ব' । ১৮।
লাখ করিস্ না, লাখ ধরিস্ না
করার চটক যতই হো'ক,
ভিত্তি-আচার না হ'লে সাবুদ
র'বে না অটুট সত্তাঝোঁক । ১৯।
আন্দোলন তুই যতই করিস্ 
মূলে রাখিস্ সবার ভাল,
ঐটি সিদ্ধ যেই না-হবে
সব বরবাদ, সব কালো ;
যে-আন্দোলন সবার ভাল
সেই তো সুষ্ঠু আন্দোলন,
বাচাবাড়ার সিদ্ধি যা’তে
সেই তো সবার উৎসারণ । ২০।
তোরই মতন দেখিস্ সবায়
তা'রাও খেয়ে বাঁচতে চায়,
বাঁচা-বাড়ার পোষণ দিয়ে
শীঘ্র দাঁড়া সার্থকতায় । ২১।
ধনী হোস্ আর দরিদ্রই হোস্ 
যা' কেনই তুই হোস্ না,
জীবন-বৃদ্ধির দিবিই পোষণ
বাঁচায় নিরোধ করিস্ না । ২২ ।
বাঁচা-বাড়ার জন্য যা'দের
নয়কো টাকা জীবনপালী,
শোষক হয় তো তারাই হবে
রেখে সবার পেটটি খালি । ২৩।
এমনটি কিন্তু কমই আছে
সেবার ভিতর নাইকো আয়,
বিনা সেবায় বর্দ্ধিত কে ?
সেবা বাঁচায় সব সবায় । ২৪ ।
বিক্ষোভ যেথায় যত সহজ
পারস্পরিক বোধ তেমনি ঢিলে,
বিপ্লবও চলে তেমনি সেথায়
সর্ব্বনাশে যায় অমিলে । ২৫।
অশিষ্ট আর অসমীচীনে
থাকই যদি একগুঁয়ে,
হিংসানিপুণ হ'তেই হবে
চলতেই হবে বিকৃতি নিয়ে,
ব্যষ্টি কিংবা সমষ্টিগত
উন্নতি কিন্তু হবে না,
ঘরে-ঘরে থাকলে বিরোধ
ব্যর্থ হবে বর্দ্ধনা । ২৬।
সুসংস্থিতির নাই সন্দীপনা—
সংগ্রহণী সম্বেগ, ধী,
দাসসুলভ মনোবৃত্তি—
সে-দেশের মানুষ এগোয় কি ? ২৭।
দাসত্ব যা'দের ভাববৃত্তি
গোলামি যা'দের আশা-আশ্রয়,
নিজের দেশকে করতে নষ্ট
আত্মঘাতী তা’রাই হয় । ২৮।
অসতের বিষ ছড়িয়ে পড়লে
ক্রমেই প্রাণন-ঊর্জ্জনা,
ব্যষ্টি-বন্ধন,—শিথিল হ'য়ে
উপচে ওঠে লাঞ্ছনা । ২৯ ।
মতের ঐক্য হয় না—
মানেই হ'চ্ছে—
দীর্ণ-দিগ্ধ স্বার্থচলন
এক পথেতে যায় না । ৩০।
জাহান্নমের যাত্রী যা'রা
দলে যতই হয় ভারী,
জাহান্নম-প্রবৃত্ত দেশকে ক'রে
ক'রে তোলে কদাচারী । ৩১।
সম্যক্ দেখা না থাকলে কি
সমালোচনা চলবে তোর ?
অন্ধ আঁখির দৃষ্টি কোথায়—
দক্ষ দেখায় হবে ভোর ? ৩২।
অন্ধের দৃষ্টি আঁধারই হয়
কানার দৃষ্টি একপেশে,
এমন জনার সমালোচনা
সার্থকতায় দাঁড়ায় এসে ? ৩৩ ।
ইষ্টনিষ্ঠ অনুগতির
কৃতি-আবেগ আর ঊর্জ্জনায়
দেখবি সঙ্ঘ, দেখবি সমাজ,
ব্যতিক্রমে কেউ না ধায় । ৩৪ ।
ওরে পাগল ! মেকীর পূজা
করবি বল্ আর কতদিন ?
মেকী খাদ্যে পেট কি ভরে ?
বাড়ে কি জীবন সমীচীন ?
হামবড়াই আর ঐ তর্জ্জমায়
নিজে তো নষ্ট হ'লিই হ'লি,
নষ্টামিতে পরকে আনতে
ঢালছিস্ যে বিষ অলিগলি ;
বুঝিস্ নাকি যাচ্ছিস্ গোল্লায়
ব্যতিক্রমে গোঁ ধ'রে,
ব্যতিক্রমে আসবে কি ক্ৰম ?
বাড়বে জীবন তাই ক'রে ? ৩৫ ।
যোদ্ধা জাতি চা’চ্ছ হ'তে
জন্মে এনে বিকৃতি,
কু-জনন কি শক্তি আনে ?
আনতে পারে কু-ধৃতি । ৩৬ ।
শাসন-সংস্থা যেমনই হো’ক্‌ 
যা'তেই মাথা ঘামাও না,
যৌন ব্যাপার শুদ্ধ না হ'লে
দেশের জীবন টিকবে না । ৩৭ ৷
ব্যষ্টি-চরিত্র যৌন জীবন
ব্যভিচার যেথা উচ্ছলা,
জনজীবনও সে-দেশে প্রায়ই
চরিত্রদোষে পিচ্ছলা ;
অন্তরালে অদৃষ্ট তখন
ভাসতে থাকে চোখের জলে,
আপদ্ তখন বিপদ্ নিয়ে
সবার পিছু-পিছু চলে । ৩৮ ।
শাসন ক'রো তায়,
রক্ষা, বহন, পোষণ ক'রে
রাখছ তাজা যায় । ৩৯ ।
শাসন যদি তুষ্টি না দেয়
তৃপ্তি না দেয় জীবনটায়,
সে-শাসনে কী হবে তোর !
মরবি শুধুই তেষ্টায় । ৪০।