চরিত্র প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড (৪১-৮২)

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “চরিত্র” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৬৬ – ১৮১ পর্যন্ত মোট ৮২ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ৪১ – ৮২ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

অহঙ্কারী যে গর্ব্বিত যে
আত্মম্ভরী হামবড়ায়ে—
অশিষ্ট তা'র অনুচলন,
স্বার্থ-অন্ধ সব বিষয়ে। ৪১।
মর্য্যাদাহীন যেমন যে-জন
ব্যক্তিত্বেরই সত্তাটায়,
পরিবেশও তেমনতরই
অমনি কুটিল মৰ্য্যাদা দেয়। ৪২।
অন্তরেতে কূটভরা যা'র
ভাল বললেও বোঝে কূট,
যতই ভাল কর নাকো তা'র
বুঝেই থাকে সবই ঝুট। ৪৩।
অসৎ স্বভাব মৰ্য্যাদা পেলে
আস্কারা কিন্তু তা'তেই পায়,
স্বার্থসহ সংঘাত হ'লে
তারা কিন্তু অসতে ধায়। ৪৪।
অন্তর-চাহিদায় একটি রকম
বাইরে বিকাশ অন্য,
ভন্ডগতি নিয়েই তা’রা
চায়ই হ'তে ধন্য। ৪৫।
আত্মমৰ্য্যাদা নাইকো যা'দের
ব্যক্তিত্বটা বিশৃঙ্খল,
ব্যক্তিত্বেরও ধৃতি সেথায়
করেই জানিস্ টলমল। ৪৬।
আত্মমর্য্যাদা নাইকো যা'দের
নাইকো সতের ঊর্জ্জনা,
ব্যর্থ মানুষ তা'কেই জানিস,
মর্য্যাদা শুধু জল্পনা। ৪৭।
ভাল দেখে যা'র নাইকো প্ৰত্যয়
বদমনা তুই তা'কেই জানিস,
যতই করুক তেমন জনা—
কুৎসিতত্ব আছেই মানিস্ । ৪৮।
মধুমক্ষী মধুই আনে
খেয়ে বেড়ায় ভ্রমর,
গুবরে পোকা গোবরেই থাকে
পছন্দও করে গোবর। ৪৯।
নীচের সাথে গতি যা'দের
নীচতা যা'দের লাগে ভাল,
দুর্ম্মতি যা’দের এমনতর
ভালই লাগে আঁধার-কালো। ৫০।
নীচমনা ছোট যা’রা
স্বার্থেই তা'রা লুব্ধ হয়,
উন্নতদের দৃষ্টি প্রায়ই
প্রেষ্ঠচর্য্যায় মত্ত রয়। ৫১।
শ্রেয়নিষ্ঠা ব্যতিক্রমদুষ্ট
বিপর্য্যয়ে চলে যা'রা,
একটুখানি বেফাঁস হ'লেই
ধাক্কা খেয়ে পড়ে তা'রা। ৫২।
দ্যুতিহারা শ্রেয়নিষ্ঠা
অনুগতি অবশ-অলস,
সম্বেগহারা কৃতি নিয়ে রয়
নিদেশ-পালায় রয়ই বিবশ;
এমন যা'দের দেখতে পাবি—
স্বার্থপর ও নিষ্ঠাহারা,
ইষ্টসান্নিধ্য হাজারই পা'ক্‌
হওয়া-পাওয়ায় বঞ্চিত তা'রা। ৫৩।
প্রীতির ভাবে নাই পরাক্রম
নাইকো আনুগত্য-কৃতি,
নাই যেথা একনিষ্ঠ প্রাণ,
নাইকো দীপ্ত বোধ ও ধৃতি,
নাইকো শ্রদ্ধা, নাইকো ভক্তি,
নাইকো নিষ্ঠা-অনুকম্পা,
আস্থা কিন্তু রেখো না তা'য়
মিথ্যা চটুল জগঝম্পা। ৫৪।
অনুগ্রহ-অবদানকে উপেক্ষা ক'রে
স্বার্থগীতি যা’রাই গায়,
কুটিল বাঁকে পাওয়ার কথাই
বলেই যা'রা লাঞ্ছনায়,—
নীচ-হৃদয়ই অমনি করে,
স্বার্থ-বাঁকটি অমনি ধরে,
অকৃতজ্ঞ অনুচলনে
ব্যক্তিত্বটা তা'দের ধায়। ৫৫।
তোমার ব্যথার উদ্বেলনে
সক্রিয় নয় করতে বিধান
স্বতঃস্বেচ্ছ উন্মাদনায়,—
সে বান্ধবতার নাইকো প্ৰাণ। ৫৬।
মুদ্রাস্বার্থী আত্মীয়তা
শয়তানেরই সে বসতা। ৫৭।
বান্ধবতায় দাগাবাজি
করে কারসাজি নানারকম,—
ব্যাধিদুষ্ট অন্তরেরই
জানিস্ এটা কুটিল ধরণ। ৫৮।
দরদবিহীন ব্যর্থ বান্ধব—
বসবাস যা'র নিয়ে তা'দের,
ব্যর্থই তা'র জীবন-চলনা
সঙ্গ ক'রে সে বান্ধবের। ৫৯।
অশিষ্ট যা'দের সহানুভূতি
তোমার ব্যথা লাগে না বুকে,
সহানুভূতি নাইকো তা'দের—
তোমার ব্যথায়ও থাকে সুখে। ৬০।
স্বার্থনিপট কুটিল লোভে
সখ্য কি হয় কোনকালে ?
লুব্ধলোলুপ চলায়-বলায়
ব্যর্থতা আসে স্বতঃচালে ;
বৃত্তিলোভী ভ্রান্ত পাগল
কান্তা হওয়া তা'র কি সাজে ?
স্বার্থলোভে সব হারাবি
হ'বি ভূয়ো, হবি বাজে। ৬১।
দরদী তোমার যে যতই হো’ক্‌
স্বস্তি দিতে যদি না-ই পারে,
দরদ তা'দের কেমনতর
ব্যথার ধার যদি না-ই ধারে ? ৬২।
শিষ্ট-সাধু সহানুভূতি
ব্যক্তিত্বে যা'দের অটুট রয়,
বীর্য্য থাকে তা'দের বুকে
ব্যথাকে তা'রা করেই জয়। ৬৩।
তোমাকে বাঁচিয়ে বাঁচতে যে চায়
প্রীতি আছে তা'র প্রাণে,
তোমাকে দিয়ে খুশি যে হয়
পেয়েও খুশি সেই টানে। ৬৪।
ব্যতিক্রমদুষ্ট জীবন হ’লে
সার্থকতার রয় না বোধ,
নেওয়া-দেওয়ার অর্থই সেথা
হ'য়ে থাকে স্বতঃই রোধ। ৬৫।
শিষ্ট নিয়ন্ত্রণে আন
ব্যক্তিত্বটার উৎসর্জ্জনা,
অনুশীলনে আন অটুট
পরাক্রমী সংবর্দ্ধনা। ৬৬।
ব্যতিক্রমদুষ্ট হ'লেই কিন্তু
সংস্কার-সম্বেগ দুষ্ট হয়,
ব্যক্তিত্বটাও অমন স্থলে
তেমনতরই মুষড়ে যায়। ৬৭।
দেওয়া-থোওয়া ভালবাসা
যেমন পারিস্ লাখ করিস্ না,
কৃতঘ্ন যে অশিষ্ট যে
দেবেই ঘৃণ্য কু-লাঞ্ছনা। ৬৮।
করতে করতে অভ্যাস আসে
ধী-ও জাগে তেমনি,
অমন কৃতিই প্রকৃতি হয়
চলনও হয় সেমনি। ৬৯।
সু-অভ্যাসে সুপ্রকৃতি
কু-অভ্যাসে কু,
কু-প্রকৃতি কু-ই ডাকে
শুভই ডাকে সু। ৭০।
কৃতি-ধৃতির প্রজ্ঞা যখন
ইষ্টার্থে হয় বিনায়িত,
প্রাজ্ঞ-চেতন-সত্তা হ'য়ে
জীবনটাও হয় নিয়ন্ত্রিত। ৭১।
আজগবী বকা যা'রাই বকে
কৃতি-কৌশলের ধারে না ধার,—
ঠকার ওটা বড় লক্ষণ,
দুর্দ্দশায় প্রায় পায় না পার। ৭২।
কৃতজ্ঞতার আবেগে যে
পাওয়ায় স্বীকার করে না,
কিংবা উচ্ছ্বসিতভাবে
দাতার কথা বলে না,
জটিল খলের স্বভাব যাহার
লুকিয়ে থাকে অন্তরে—
প্রায়ই জানিস্ কপট সে-জন
স্বার্থলোভে ঘোরে-ফেরে। ৭৩।
প্রিয়'র কাছে গোপন ক'রে
বাইরে রটায় বাজিয়ে ঢোল,
এমনতর দেখলে বুঝিস্
অন্তরে তা'র দুষ্ট গোল। ৭৪।
নিজের মুখে আপন খ্যাতি
যা'রাই করে বেশী যত,
চরিত্রটার খাঁকতিও বুঝো—
সে-ব্যক্তিত্বে বেশী তত। ৭৫।
ঊর্জ্জনাহীন সত্তা যা'দের
হৃদয়ভরা দুর্ব্বলতা,
নিষ্ঠানিপুণ আনুগত্য
কৃতিসম্বেগ কমই যেথা,
শরীরও তা'দের যায় না ভাল,
পারায় কমই সফলতা। ৭৬।
অসৎ-বর্দ্ধনার ইন্ধন যা’রা—
সৎ-সতীর যতই করুক ভান,
নষ্ট-ভ্রষ্ট বিশৃঙ্খলার
তা'রাই দৃপ্ত অভিযান। ৭৭।
প্রেষ্ঠনিষ্ঠা, আনুগত্য,
কৃতিসদ্বেগ হৃদয়ে যা'র,
অটুট হ'য়ে দাঁড়িয়ে আছে
বিশ্বস্ত মন জেনো তা'র। ৭৮।
অবিরলস্রোতা উৎসর্জ্জনা
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতি
যেথায় দীপ্ত চিরজাগ্রত—
সেই তো সবার জীবন-ধৃতি। ৭৯।
কৃতিদীপ্ত দরদী যে
অনুকম্পী বোধবিবেকী,
এমনতর লোকই জেনো
হয় দরদী সুধী-সম্বেগী;
নির্ভরতার আসনই ঐ
কৃতিদীপ্ত মহান্ হৃদয়,
কৃতিতপা হয়ই যে-জন
প্রায় কাজেতেই লভে সে জয়। ৮০।
বিধানে যে রক্ত বয়
করতে সত্তাপোষণ,
সেইতো সক্রিয় অভিব্যক্তি
যে গুণে তা'র তোষণ,—
সেইটি হ'ল সত্তা-স্বভাব
রক্তে চলৎশীল,
ব্যক্তিত্বটা তা'তেই কিন্তু
তেমনি সাবলীল। ৮১।
তোমার স্বার্থই স্বার্থ যাহার
তোমার খোশেই খুশি,
দোষ বললে কেউ স্বতঃই ঢাকে,
করে না তোমায় দোষী,
কুড়িয়ে নিয়ে যা' পায় ভাল
তোমাকেই দিতে চায়,
তোমার ভাল যা'তে হবে
অটুট তা'তেই ধায়,
এমনতর দেখলে স্বভাব
ভাব আছে তা'র বুঝি,
সদ্-ব্যবহারী সন্দীপনায়
তা'কে শিষ্ট করিস্। ৮২।

Loading