চরিত্র নিয়ে অনুশ্রুতি ২য় (১০১-১৫০)

অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “চরিত্র” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৪০ – ১৯০ পর্যন্ত মোট ২৮০ টি বাণী রয়েছে ।
নিচে ১০১ -১৫০ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

সাদা দেখলে বুঝিস্ নাকো
কটু তা'তে নাই,
কথায়-কাজে, বিশ্বস্ততায়
দেখবি যেমন, তা'ই। ১০১।
অন্ধকারে সাদা থাকে
আলো পেলেই লাল,
পদ্ম হ'লেও নয়কো কমল,
পদলোভী মাতাল। ১০২।
চিনিই শুধু মিষ্টি নয়
বিষও মিষ্টি হয়,
করণ-কারণ দেখে তাহার
করিস্ পরিচয়। ১০৩।
বাতকে সাধু অলস যে-জন
অবশ কুটিল গতি,
শ্রেয়চর্য্যা মূঢ় তা'দের
শুধু নিন্দায় রতি। ১০৪।
ব্যক্তিত্বটা ব্রাহ্মী তা'রই 
বর্দ্ধনী জ্ঞান যেথায় রয়,
কথা-বার্ত্তায়, চরিত্রে আর
আচরণে তা' বিচ্ছুরয়। ১০৫।
অকৃতজ্ঞ দেখবি যা'রা— 
কথার নেইকো ঠিক,
ভদ্র-শূদ্র হো'ক না যে-সেই
আসলে বেল্লিক। ১০৬।
জীবন-ধৃতি দ্যুতিমান,
দেবতা তা'রাই, তা'রাই প্রধান। ১০৭।
নেবার বেলায় বেজায় রসাল
দেবার বেলায় শুকনো কাঠ,
কৃতজ্ঞতা নাইকো তোমার
বিছিয়ে বেড়াও কথার ঠাট;
স্বার্থলোভে একটুখানি
ব্যর্থ যদি হও তুমি,
কর্পট, নিন্দুক কেরদানিতে
ফাটিয়ে বেড়াও মর্ত্ত্যভূমি;
পাওয়ার বেলায় বড়ই সরল
চলেই মুখে ধৰ্ম্মবাক্
যেই সেখানে দেখলে ফাঁকি
বলতে থাক—থাক্ রে থাক্;
আপন রঙে রঙীল হ'য়ে
বেড়াও ঘুরে দিগবিদিক্,
রঙ-তামাসা নয়কো খারাপ
স্বার্থে যদি না হয় ধিক্;
কেরদানি তোর যাবে কিসে
অন্তরে তোর নেহাৎ ফাঁক,
সর্ব্বনাশ যে এগিয়ে এল
এখনও বলি—রাখ্ রে রাখ্;
পরম ভক্ত নেবার বেলায়
দেবার বেলায় সব খারাপ,
দুষ্ট-বধির নিঠুর হৃদয়
যেখানেতে নাইকো লাভ;
বুঝে দেখ তুমি কী ধন
কী মন নিয়ে চল্ তুমি!
লাভের একটু ব্যাঘাত হ'লেই
কাঁপিয়ে তোল আকাশভূমি। ১০৮।
আপনকে দেখে পরের মত
অন্যে দরদ দেখায়,
নষ্ট-নিপট হৃদয় তাহার
ব্যর্থতাতেই ধায়। ১০৯।
জীবন যাহার বাতাসের মত
সবাইকেই পালে-পোষে,
নিষ্ঠাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব তা'র
ঝরে নাকো আপসোসে। ১১০।
ক্ষিপ্রতায় যে দীন,
সুষ্ঠুকৰ্ম্মা হ'লেও জানিস্
ক্ষমতায় সে হীন। ১১১।
লোকপরিচর্যী স্বভাব—
সম্পদ্ তা'রে কয়,
সুব্যবস্থ পরিচর্যায়
বিভব উপচয়। ১১২।
বলায় মিষ্টি, করায় খারাপ,
এইতো জানিস কূটের মাপ। ১১৩।
গরম কইলেও ভালই করে
তা'রাও সতের লক্ষণ ধরে। ১১৪1
যুক্তিযুক্ত সৎকথা কয়
হৃদ্য ব্যাভার সদ্‌-বিবেকী,
কাজে-কর্মে শুভই করে,
সে-জন জেনো নয়কো মেকী। ১১৫।
সংগ্রহে যে ব্যর্থ সদাই
কর্ত্তা হবার বেজায় সাধ,
বেকুব বুদ্ধি রয় সেখানে
ফেলে বেড়ায় কথার ফাঁদ। ১১৬।
ঠাণ্ডা মাথায় সবই শুনিস্
বুঝে দেখিস্ বোধের সাথে,
বাস্তবেতে যেটি মেলে
সেইটিকে তুই নিস্ রে ডেকে। ১১৭।
দীপ্তরোখা মন্দ কথায়
আচার-ব্যাভার মন্দ যেথা,
লক্ষ মধুর হোক না সে-সব
নিসনে সেটা, ধরিসনে তা'। ১১৮।
শ্রেয় যেটি তা'ই বেছে নিস্ 
অশ্রেয় যা' দূরেই থাক্,
সন্দীপনী শ্রেয় নিয়ে
চর্য্যাটি তোর অটুট রাখ্। ১১৯।
ব্যর্থ করার স্বার্থ নিয়ে
গালবাজি আর হামবড়াই,
প্রাজ্ঞ জ্ঞানীর ঢং-বাজিতে
বল্ খাটবে কা'র দোহাই। ১২০।
ভুলভ্রান্তি মানুষেরই হয়
শুধরে যদি চলিস্ সোজা,
দীপ্তি পাবি, তৃপ্তি পাবি
হাল্কা হবে বুকের বোঝা;
অজ্ঞ হ'য়ে বিজ্ঞ ভানে
লুকিয়ে নিজের বোকা বুক,
লুকিয়ে থাকতে আর হবে না
উজল হবে কুলের মুখ। ১২১।
নিষ্ঠানিপুণ নন্দনা যা'র
অন্তরেতে পায়নি স্থান,
সাম্য-চলন কাম্য হ'য়ে
বয় না তাহার ছিন্ন প্রাণ। ১২২।
বন্দনারই স্পন্দনা তোর
হৃদয় ছেয়ে যেমন রয়,
ব্যক্তিত্বটাও সিক্ত হ'য়ে
গুণ-গরিমা তেমনি বয়। ১২০।
সহজ মানুষ হও—
সৎ-শুভ যা' নিভুল জানা
লোকের কাছে কও। ১২৪।
নিষ্ঠাবিহীন রতি-প্রবল
আড়ম্বরের লোক সে কেবল। ১২৫।
মানের দরদ, প্রাণের নয়,—
ব্যত্যয়ী সে, রাখিস্ ভয়। ১২৬।
তৃপ্তি তবে কোথায়?
সুখে-দুঃখে অটল চলায়
হৃদয় অটুট যেথায়। ১২৭।
অন্তরেতে আছে কথা
প্রত্যয়েতে নাই—
মানেই হ'ল, আস্থার অভাব,
সন্দেহই তা'র ঠাঁই। ১২৮।
ভয়াল যা'রা দুষ্ট যা'রা—
ইষ্টনিষ্ঠ সৎচলনে
বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায় যদি
সম্বুদ্ধ হয় বহুৎ জনে। ১২৯।
অর্ঘ্য পাবি কত-শত
ধন্য-ধন্য করবে লোক,
ঐ ভালেতে মাতিস্ নে তুই
রাখিসনে কো লোভের ঝোঁক। ১৩০।
সুব্যবস্থা, সুসন্ধিৎসা
নাইকো যাহার প্রাণে,
হাতে-কলমে নিষ্পাদনা
নাইকো বুকের টানে,
কথায়-কথায় হুকুমদারী
আত্মম্ভরি সম্বাদন,
দোষদৃষ্টি যাহার কেবল
নিরীক্ষণী আলম্বন,
গণ্ডগোলের ডামাডোলে
আত্মম্ভরি গাহে জয়,
দক্ষনিপুণ পরিচর্য্যা
অন্তরেতে যাহার নয়,
বিদ্রুপাত্মক যা'র ব্যবহার
নাইকো মিষ্টি কথা,
প্রতিষ্ঠা পায় হৃদয় যাহার
দিয়ে অন্যে ব্যথা,
দেখেই বুঝিস্ সে-ব্যক্তিত্বে
ফলেই কম সুফল,
বিফল ক'রে সফল হওয়ার
ধান্ধা তা'র কেবল। ১৩১।
সৎ-শ্রম আর পরিচর্য্যায়
উপায় যা'দের স্বতঃই হয়,
নয়কো তা'রা শোষক কভু
পোষক-বৃত্তিই পোষণ দেয়। ১৩২।
উদ্যমে হও দুর্দ্ধর্ষ তুমি
ক্ষিপ্র-নিপুণ কাজে,
সুষ্ঠু ত্বরিত নিষ্পাদনায়
সার্থকতা রাজে। ১৩৩।
গুরুত্বেরই হয় অভিষেক
গুরুর ঝরা অংশ নিয়ে,
তৃপণদীপী শ্রেষ্ঠ ভজন
শ্রদ্ধাচর্য্যা বিভব দিয়ে । ১৩৪।
প্রেষ্ঠচর্য্যায় নিরত যা'রা
প্রেষ্ঠ-সেবায় মুগ্ধপ্রাণ,
তা'দের যদি ভাল লাগে
থেকে প্রিয়ের সন্নিধান,
স্নেহ-প্রীতি স্বার্থ-দ্যোতন
সবই যাহার প্রিয় লাগি',
সে-মানুষটি নিরেট মানুষ
সহজ প্রেষ্ঠ-অনুরাগী। ১৩৫।
বুদ্ধি বাঁকা, আঁইট কম,
সৎ দেখালেও কুটিল দম। ১৩৬।
যেমন তালে যেমন চালে
সক্রিয়তায় দীপ্ত তুমি,
তেমনতরই সম্পদ তোমার
পুণ্য তোমার জীবন-ভূমি। ১৩৭।
মিষ্ট কথা শিষ্টাচারেই
ভুলিস্ না কা'রো—বন্ধু ব'লে,
তা'কেই জানিস্ বন্ধু কিন্তু
কথায়-কাজে মিলন হ'লে। ১৩৮।
একটা কথা মনে রাখিস্—
ভালই কিন্তু চায় সবাই,
স্বার্থ খুঁজি' লোভের টানে
গায় অনেকে নিজ-সাফাই। ১৩৯।
টাকার লোভে ইষ্টসেবা
যা'রাই করে ঠিক জানিস্,
স্বতঃস্রোতা ইষ্টনেশা
নাই সেখানে ঠিক মানিস্। ১৪০।
অভাবপন্থী ভাব যাহাদের
প্রভাব তা'দের আল্স ঢোলা,
কৃতিস্রোতটি মন্দ তা'দের
গুণে তা'রা ফাঁকা খোলা। ১৪১।
ঠাকুর-দেবতার গুণরাজি তোর
চরিত্রে যেই বিকাশ পেল,
অমনি বুঝিস্, প্রাপ্তি তোমার
পায়ে-পায়ে এগিয়ে এল। ১৪২।
ঊর্জ্জী নেশা ইষ্টে যা'দের
আচার-চরিত্র ইষ্টপ্রাণ,
সন্ধিৎসাটি নিভাঁজ যেথায়
ধৃতিমুখর তা'দের টান। ১৪৩।
শিষ্টাচারে সত্তাসাধন
অস্তিপ্লাবন যা'দের প্রাণ,
যেমনতর হো'ক্ নাকো সে
অস্তিচর্য্যী সেই মহান্। ১৪৪।
দেখে-শুনে চৌকস হ'য়ে
দেখবি যা' তুই সমীচীন,
চতুর চলন নিয়ে তা'কে
করিস্ ও-তুই তোর অধীন। ১৪৫।
চার আল দেখে চলে
তা'রাই চালাক সত্যিকার,
দূর-নিকটের জ্ঞান-বিভবে
তেমনি তা'দের অধিকার। ১৪৬।
ধারণ-পালন-বৃত্তি-বিভব
অন্তরে যা'র মূর্ত্তিমান,
চতুর-চালাক ধৃতি তাহার
মুগ্ধ করে সবার প্রাণ। ১৪৭।
ঊর্জ্জী-তেজা আগ্রহটি 
নিষ্ঠানিপুণ যা'র যেমন,
উজিয়ে চলে কৃতির পথে
সার্থকতাও পায় তেমন। ১৪৮।
ঊর্জ্জনাও নাই অন্তরে যা'র
উদ্যমও তা'র শিথিল তেমন,
নিষ্ঠা-সম্বেগ তেমনি তাহার
পাওয়ার পথেও তেমনি গমন। ১৪৯।
অসাম্য যা'র মনোবৃত্তি
আবেগও তেমনি অসাম্য যা'র,
বহু ভাঁওতায় ঘুরে বেড়ায়
সার্থকতা কমই যে তা'র । ১৫০।

Loading