চরিত্র নিয়ে অনুশ্রুতি ২য় (২৪১-২৮০)

অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “চরিত্র” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৪০ – ১৯০ পর্যন্ত মোট ২৮০ টি বাণী রয়েছে ।
নিচে ২৪১ – ২৮০ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

শিষ্ট-অটুট আনুগত্য 
নাইকো যাহার অন্তরে,
ব্যতিক্রম আর বিক্ষেপ কিন্তু
আছেই হৃদয়-কন্দরে। ২৪১।
দুষ্ট-দৃপ্ত অন্তঃকরণ
ভ্রষ্ট যা' তা'ই রাখে ধ'রে,
সুযোগমত সুবিধা পেলেই
কাজে তা' সে হাসিল করে। ২৪২।
বাস্তবে যা'র নাইকো মিল,
সঙ্গতি তা'র তেমনি ঢিল। ২৪৩।
বিপর্য্যয় আর ব্যতিক্রমের
স্বার্থ-লুব্ধ বিবেচনা,
ব্যক্তিত্বতে আনেই কত
ক্ষোভদৃপ্ত কী লাঞ্ছনা ! ২৪৪।
নিষ্ঠানিপুণ নয়কো যা'রা 
উত্তেজনায় যা'ই করুক,
স্বভাবে তা'দের নেই সঙ্গতি
শৃঙ্খলাহীন—যাই ধরুক। ২৪৫।
কথাবার্ত্তা, আচার-ব্যাভার
বুদ্ধি-বিবেক, চাল-চলন,
যা'র হয় ভাল, হৃদয়গ্রাহী
বিভূতি হয় তা'র বলন। ২৪৬।
নিষ্ঠা-বিবেক-বিহীন যা'রা
চঞ্চল অন্তঃকরণ—
উলট-পালট্ চাল-চলনে
চলেই অনুক্ষণ। ২৪৭।
অহং-মুঢ় যা'দের স্বভাব
বিনা চৰ্য্যায় চায় কর্ত্তা হ'তে,
কর্ত্তৃত্বটা বজায় রেখে
স্বার্থসেবায় চায় লাগাতে। ২৪৮।
ধৃতিহারা চর্য্যা যা'দের
কৃতিহারা হয়ই তা'রা,
ধাপ্পাবাজির কর্ত্তা-বুদ্ধি
উছল চলা করেই খোঁড়া। ২৪৯।
নিষ্ঠানিপুণ নয়কো যা'রা—
বিহীন কৃতি-ঊর্জ্জনা,
যা'ই করুক না অমন তা'রা
লাভ তা'দের হয় বঞ্চনা। ২৫০।
ধাপ্পাবাজির লোভানিতে
নিজেকে লুকিয়ে অন্য নামে
প্রবর্ত্তনা করে যা'রা—
গতিই তা'দের জাহান্নমে। ২৫১।
শোনা কথায় আস্থা ক'রে
কল্পনাতে যা'রাই দেখে,
ভাল কিংবা কুৎসিত অন্তর—
রকম দেখে বুঝো তা'কে। ২৫২।
সাধু-বিদ্বান্ যতই না হও
চলন-কৌশল বুঝলে না,
হৃদয়টাকে বিনিয়ে নিয়ে
ব্যবস্থা করতে পারলে না। ২৫৩।
সাধুবেশই যে শুদ্ধ হবে—
দর্শন, শ্রবণ, জ্ঞান-যোজন,
সব সময়ে সেটা যে ঠিক
ভাবিস্ নাকো তা' কখন। ২৫৪।
বস্তু-যুক্তি-ব্যবহারে,
দেখাশোনার মাধ্যমে,
সিদ্ধ-শুদ্ধ যে-জন যেমন
শিষ্টও তেমনি রকমে। ২৫৫।
ব্যতিক্রমী অশিষ্ট যে 
ঊর্জ্জীতেজা যতই হো'ক—
যায় না কভু কোনদিনই
অশিষ্টতার অন্তর-ঝোঁক। ২৫৬।
বাঁচতে-বাঁড়তে চায় তো সবাই
বিকৃতি তা'দের যতই থাক্,
নীচকৰ্ম্মা নীচমনারই
উৎকর্ষতে রয় বিরাগ। ২৫৭।
কূটকচালি ধান্ধা নিয়ে
দিন যদি যায় তোর চ'লে,
বিশ্বাস-প্রীতির লাখ কথা তোর
ধ'রবে নাকো তোরে তুলে। ২৫৮।
ভাঁওতাবাজির রাহাজানি—
স্বার্থপোষার কায়দা নিয়ে
যতই চল,—উৎসর্জ্জনা
বইবে নাকো হৃদয় দিয়ে। ২৫৯।
মহৎ-প্রধান সাধু-সজ্জন
বুদ্ধ-ঈশা-শ্রীচৈতন্য—
শ্রদ্ধাহীনের কে ভগবান্
স্বার্থপোষার কায়দা ভিন্ন ? ২৬০।
কেমনতর দেখবে তুমি—?
তোমার কাছে মন্দ ক'জন !
অন্যের নিন্দা করার স্বার্থে
কা'র তোষণ কর কেমন। ২৬১।
সততা যা'দের সহজ থাকে
নিন্দা কুড়িয়ে বেড়ায় না,
একের নিন্দা করতে গিয়ে
অন্যের সাধুত্ব বাড়ায় না। ২৬২।
স্বার্থনেশা কঠোর যা'দের
বুদ্ধি-বিবেক কুটিল হয়,
বেকুব-জটিল উৎসারণায়
শুভ যা' তা'র করেই ক্ষয়। ২৬৩।
স্বার্থসেবী মিথ্যুক যে
দুষ্ট-স্বভাব কুটিল প্রাণ,
জীবনতালের গতিই যে ঐ,—
আত্মস্বার্থ তা'র ভগবান্। ২৬৪।
গুণকর্ম্মের সুসম্মিতি
নিষ্পন্নতায় যেমনি হোক্,
আচার-ব্যবহার-চরিত্র নিয়ে
ব্যক্তিত্বে তা'র তেমনি ঝোঁক। ২৬৫।
অন্তরে কিসে কেমন দম
চ'টলে পরেই বোঝা যায়,
করণ-কারণ কোথায় কেমন
তা'তে আরো হয় প্রত্যয়;
যে-জন চটলে যে-রূপ ধরে
অন্তরেও তা'র সেই অভিপ্রায়,
বুঝে-প'ড়ে কৃতি-চলায়
বেছে-গুছে নিবি তা'য়। ২৬৬।
আত্মম্ভরি অহঙ্কারী
যা'রাই থাকে এ দুনিয়ায়,—
ভাল করলেও মন্দই বোঝে
দূরদৃষ্টে রয় কি রেহাই ? ২৬৭
চরিত্রটি নিস্ দেখে তুই
স্থিতিশীল কি চঞ্চল,
তেমনিভাবে বিনিয়ে নিয়ে
পারিস্—বাড়াস্ সতের বল। ২৬৮।
নিষ্ঠা যা'দের চঞ্চল হয়
ধূর্ত্ত-কুটিল হয় তা'রা,
বিশ্বস্তি তা'দের সাময়িক পাবি
চাঞ্চল্যেতে প্রায় সারা। ২৬৯।
ইষ্টনিষ্ঠ ভজনদীপ্ত 
সেবাচৰ্য্যা অনুরাগ—
ধৃতিকৃতি স্বতঃস্রোতা—
ঐ চরিত্রই ঐশী যাগ। ২৭০।
লোকবর্দ্ধনী নিষ্ঠারতি
ধৃতিচর্য্যা প্রতি ঘটে,
বোধ-বিবেকে চলা-ফেরা
ভগবত্তা তা'তেই বটে। ২৭১।
অনাচার আর উচ্ছৃঙ্খলার
নিষ্ঠাহারা অনুচলন,
চরিত্রকে খর্ব্ব করে,
কমিয়ে চলে কৃতি-ধরণ। ২৭২।
অন্তরেতে কুৎসিত যা'রা
বুদ্ধিতে কূট খেলোয়াড়,
ব্যক্তিত্বটাই ভ্রষ্ট তা'দের
বেকুব, হিংস্র জানোয়ার। ২৭৩।
নিষ্ঠাবিহীন বাগ্-বিলাসীর
আপ্তকথায় প্রত্যয় নাই,
প্রত্যয়হীন অভিনিবেশে
অর্থবোধের কোথায় ঠাঁই ? ২৭৪।
অন্তঃস্থ পাপপ্রবৃত্তি 
গুপ্ত থাকে ব্যক্তিত্বে যা'র,
ঠোকা পেলেই সজাগ হ'য়ে
প্রকাশ করে সম্পদ তা'র। ২৭৫।
অর্থস্বার্থী যা'রাই জানিস্ 
ইষ্টার্থী সে অটুট নয়,
বৃত্তি-খোরাক অগোছাল বুদ্ধি
তা'তেই তা'রা মত্ত রয়। ২৭৬।
নিষ্ঠাবিভব শিষ্ট ধারায়
ভাববৃত্তি সিক্ত যা'য়,
গরবও তা'র মিষ্টি হ'য়ে
উছল ক'রে তোলে সবায়। ২৭৭।
তোমার সাথে তুলনা ক'রে
কেটা কেমন দেখ দেখি,
ভজনদীপ্ত ধৃতিমুখর
আশে-পাশে কেউ আছে নাকি? ২৭৮।
জানে না কিন্তু অনেক বলে
অধঃপাতে তা'রাই চলে। ২৭৯।
ভজনদীপ্ত ধৃতিচৰ্য্যা
যা'রাই বেশী তোমার চেয়ে,
ভগবানও সজাগ সেথায়
গুণে-জ্ঞানে দীপ্ত হ'য়ে। ২৮০।

Loading