অনুশ্রুতি ৪র্থ খন্ডে “চরিত্র” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১৫৩ – ১৬৯ পর্যন্ত ৮৪ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ৪১ – ৮৪ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।
মান-মর্য্যাদা-অর্থলোভে
ব্যক্তি কখনও হয় না শ্রেয়,
বিনিয়ে দেখিস্ তা'র ব্যক্তিত্ব
কেমন মানুষ, কেমন হেয় । ৪১।
মানমর্য্যাদার লোভে যা’রা
নিষ্ঠাপ্রীতির করে ভান,
নষ্ট তারা, ঘৃণ্য তা’রা,
হীনত্বেই তা'দের অভিযান । ৪২ ।
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতি
রয় অন্তরে মলিন যা'দের,
কটুবাক্য, কুটিল ব্যাভার
পরপীড়নই সুখ তা'দের । ৪৩।
নিষ্ঠা যা'দের নাই অন্তরে
লুব্ধ কপট রয় হৃদয়,—
লোভের তরে থাকে তা'রা,
অধোগামী হয়ই হয় । ৪৪ ।
নিষ্ঠাহারা যে যেমন, তা'র
অনুগতিও তেমনতর,
কৃতি-আবেগও মন্দ তেমন
অধিগতিও তেমনি দড় । ৪৫ ।
নিষ্ঠা হ'লে ঢিলেমিলে
আগ্রহে অলস মন—
এমন জনার জীবনে রয়
উন্নতি কতক্ষণ ? ৪৬ ।
এক ঠোক্করেই নিষ্ঠা ভাঙ্গে—
দেখবে এমনতর যা'দের,
নিষ্ঠারতি হয়নি কভু
দেখে নিও জীবনে তা'দের । ৪৭।
নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতির
উদ্যমহীন যা'রা,
লাখ বল না করার কথা
করে কমই তা'রা । ৪৮।
স্বাৰ্থলুব্ধ ইষ্টনিষ্ঠা
নিষ্ঠায় ফাটল আনে—
স্বার্থানুগ ভাঁওতায় যে
ইষ্টনিদেশ শোনে । ৪৯ ৷
গালি কিংবা অপমানে যা'দের
ইষ্টনিষ্ঠা ঘায়েল হয়,
নিষ্ঠা তা'দের ছিল নাকো কভু—
মানমর্য্যাদার লোভে রয় । ৫০।
স্বস্তিচৰ্য্যা নেইকো যা'দের
স্বভাবে নেই সম্বৰ্দ্ধন,
স্বার্থলাভে প্রীতি তা'দের
ধাপ্পাই তা'দের কৃতি-ভজন । ৫১ ।
সৎ-শৌর্য্য-স্বভাব যদি
নাই থাকে কারো স্বতঃস্রোতা,—
বুদ্ধি তাদের বেকুব হয়ই,
খল হ’য়েও তা'রা হয়ই ভোঁতা । ৫২।
নিষ্ঠানিপুণ আনুগত্য
যদি না-ই তোর থাকলো,
যতই যেমন হো’স্ না 'ও-তুই
খাঁকতি ভরাই রইলো । ৫৩।
যা'র নাইকো এমন দাঁড়া—
যা'কে ধ'রে দাঁড়িয়ে চলে,
নিষ্ঠাবিহীন বে-দাঁড়াতে
প্রায়ই তা'রা চলে ট'লে । ৫৪ ।
শ্রেয়'র কাছে গোপন করে
বলে না কিন্তু কোন বাক্,
এমন মানুষ দেখলে বুঝবে
অন্তরে তা'র দুষ্ট দাগ । ৫৫ ।
দরদ ভরা হৃদয় হ'লে
আগ্রহ ওঠে গ'ৰ্জ্জে তেমন,
দরদ-ব্যথা করতে বিনাশ
ব্যগ্রও কাজে হয়ই সেমন । ৫৬ ।
কথার দরদ দরদই নয়
সৌজন্যর এক অঙ্গ,
অমনতর মিথ্যা কথার
করা কি ভাল সঙ্গ ? ৫৭ ।
তথাকথিত সাধুতা বা
ভদ্রতা তুমি যা'ই বল না,
চৰ্য্যানিটোল কাজে-কৰ্ম্মে
না ফুটলে তা' শুধু ছলনা । ৫৮।
স্বস্তিশোষণচর্য্যী যা’রা—
পরিবেশ-সহ ব্যষ্টি যত,
সাধ্যমত রাখেই ধ'রে
প্রীতির রাগটি ল'য়ে সতত । ৫৯ ৷
শিষ্ট-সুধী সৎ যাহারা—
অসৎ-নিরোধ পরাক্রমটি
আত্মগরিমায় করে না প্রকাশ,
কৃতিদ্যোতনায় ওঠেই ফুটি' । ৬০।
কৃতী লোকের চলন জেনো—
মিতি-চলনে লক্ষ্য দিয়ে
চলেই তা'রা নিষ্পাদনে
দক্ষ-ত্বরিত লক্ষ্য নিয়ে । ৬১ ।
সৎ কৃতী লোক তা’রাই জানিস্—
নিষ্ঠা-আনুগত্য নিয়ে
সুনিষ্পাদন ক্ষিপ্র করে
নিখুঁতভাবে হৃদয় দিয়ে । ৬২।
তোমার প্রয়োজন-পূরণ-করা—
তাহাই সাধনা যা'র,
কৃতি-শ্রদ্ধা তা'তেই আছে
সেই তো তোমার আপনার । ৬৩।
দীপ্ত-মধুর তীব্রতেজা
তোমার ভাবের ভাবুক যা'রা,
কৃতিসম্বেগ ধৃতির টানে
থাকবে বিভোর জানিস্ তা'রা । ৬৪ ।
নিষ্ঠানুগত্য-কৃতিসম্বেগ
তোমার প্রতি আছে যা'র,
বজ্রগভীর দুর্দ্ধর্ষ হ'য়ে
ধরবে তোমার সকল ধার । ৬৫।
নিষ্ঠানিপুণ আনুগত্য,
কৃতিসম্বেগ ব্যক্তিত্বে যা'র,—
অস্খলিত রয়ই হ'য়ে
নিপুণ চলায় বর্দ্ধনার । ৬৬ ।
সু-কে ধারণ-পালন-পোষণ—
সুখে সেটা যে-জন করে,
নিখুঁত নিষ্পাদনে কিন্তু
সু-ধাই খায় সে জনম ভ'রে । ৬৭ ।
কদাকার মূর্ত্তি হ'লেও—
নিষ্ঠাকৃতির দীপ্তি নিয়ে
প্রভান্বিত হ'য়ে ওঠে
শ্রদ্ধাদীপ্ত তৃপ্ত হ'য়ে । ৬৮ ।
নিষ্ঠা-অনুগতিসহ
কৃতিদীপ্ত যাদের প্রাণ,
উচ্ছলতায় উপচে ওঠে
উৎসারিত হৃদয়খান । ৬৯ ৷
নিষ্ঠানিটোল শিষ্ট যা'রা
আনুগত্য-কৃতি নিয়ে,
উচ্ছলতায় চলেই স্বতঃ
আবেগসহ হৃদয় দিয়ে ।৭০ ।
মেধা-ধৃতি-কৃতিতে যা’রা
উছল হ'য়ে চলতে থাকে,—
সুসন্ধিৎসু কুশল তালে
সার্থকতায় সবই রাখে । ৭১।
শ্রেয়শ্রদ্ধ নিষ্ঠা যা'দের
আনুগত্য-কৃতিবেগ,
জীবন তা'দের ধন্য জানিস্
ব্যক্তিত্বে রয় সুধী সম্বেগ । ৭২।
ইষ্টের কাছে করলে আদায়
কপাল তা'দের খুলবে না,
ভাগ্য তা'দের নিথর হবে,
সদ্-দীপনায় ফুটবে না । ৭৩।
ইষ্ট-অর্ঘ্য দেবার লাগি'
শুভ ফন্দী-ফিকির ক'রে
অর্ঘ্য দিয়ে ধন্য যা’রাই—
সৌভাগ্যও তা'দের ধরে । ৭৪।
যেমনতর চরিত্র যা'র
যা'তে যেভাবে অধিষ্ঠিতি,
ভাববৃত্তি-দেবতারও
তেমনতরই ধী ও স্থিতি ;
ব্যক্তিত্বকেও বুঝে রেখো—
তা'রই বিহিত মূর্ত্তনা,
তা'তেও তেমনতরই থাকে
কৃতি-মুখর ঊর্জ্জনা ;
তেমন লোকের তেমনি পূজায়
যেমনতর ধারণা,
গ্রহান্বিত ব্যক্তিত্বেরও হয়
মন্দ কিংবা সু-দীপনা । ৭৫।
আপদের সময় যেখানে গেলে—
হ'লে যেমন তা'র আপ্তজনা,
নিজের তোফিল গুছিয়ে নিয়ে
হ'লে অকৃতজ্ঞ চৌৰ্য্যমনা ;
কেউ যদি তোমায় করত অমন
লাগত কেমন তোমার কাছে ?
তবেই ভাব—তোমার মতন
ক'জন অমন দুষমন আছে ? ৭৬।
অনুকম্পী স্থিতি-সহায়—
যা'রাই থাকে বেগবান্,
মূর্খ লোকে তা'দের আগে
সৃষ্টি করে আটক-আধান,
যা'র ফলেতে তা'দের বিপদ্
অন্ধস্রোতা হ'য়ে চলে,
নিজের ধ্বংস অমনি ক'রেই
নিজেই আনে ছলে-বলে । ৭৭।
খ্যাতি-প্রশংসা আদর-সোহাগে
ইষ্ট যাহারে ব'ন,
আত্মম্ভরি গর্ব্বে যদি
ধৃষ্ট হয় সে-জন,
নিছক সে-জন কৃতিনিষ্ঠাহারা
মূর্খ দুর্দ্দম হয়,
নিজেরে খোয়ায়ে পরকে খোয়ায়
দুঃখের বোঝা বয় । ৭৮ ।
নিষ্ঠাবিহীন আচারবিহীন
শ্রেয়জনে শ্রদ্ধাহারা,
আনুগত্য-কৃতিসম্বেগ
উধাও যেথা,—নাইকো সাড়া,
বিদ্যাবুদ্ধি যতই থাকুক
বিক্ষিপ্ত তা'র হৃদয়-মন,
ছন্নছাড়া বিভব তাহার
দীপ্ত রয় কি ধৃতি তেমন ? ৭৯ ।
ভজনদীপ্ত নয়কো যে-জন
নিষ্ঠানুগ কৃতি নিয়ে,
কৃতি-সম্বেগ উচ্ছলতায়
নয়কো সজাগ ধৃতি নিয়ে ;
ভজনবিহীন ঐ চরিত্র—
কথায়-কাজে সঙ্গতি নেই,
লাখ ভগবান্ হোক্ না সে-জন,
ভগবত্তা তা'তে নেই । ৮০।
যা'তে যা'দের যেমন নিষ্ঠা
তেমনতরই তা'রা হয়,
সেই ব্যাপারেই চৌকষ দৃষ্টি
তেমনতরই লেগে রয় ;
হয়ও তা'রা তেমনতর
চলেও তা'রা সেই পথে,
ক'রে চ'লে সেই দিকেতে
চলে তেমন প্রবাহেতে । ৮১।
নিজ জাতিকুলে শ্রদ্ধাহারা
অন্য কুলের পরিচয়ে
সনাক্ত ক'রে ধন্য হয়—
নিজ জাতকুলে ঘৃণা ল'য়ে,
লাখ-মহাপুরুষ লাখ-মহাজন
হোক না সে-জন, ঠিক জেনো—
বিষাক্ত তা'র হৃদয়খানি,
ব্যক্তি ও দেশের নাশক, মেনো ;
খর নজরে দৃষ্টি রেখো
ঐ বিষাক্ত লোকের প্রতি,—
সর্বনাশের মিত্র তা'রা
জনসমাজের মহান্ ভীতি । ৮২।
ব্যক্তিত্বকে লোপাট ক'রে
পদলেহনে যে-জন চলে,
দাসসুলভ ব্যক্তিত্ব তা'র
ক্লীবত্বকে পালেই পালে ;
আত্মনির্ভর হওয়াটা তা'র
হ'য়ে থাকে বড়ই কঠিন,
বিচ্ছিন্নতা বিভিন্নতায়
ক্ষ'য়েই থাকে দিন-দিন ;
অবৈধ যা' বিধি হ'লে
ক্লৈব্যদৈন্যে হ'য়ে ফলন,
ক্লীববিধির অনুশাসনে
অশিষ্টতার হয় বর্দ্ধন ;
লোলুপ দৃষ্টি হীন আকাঙ্ক্ষা
হয়ই তা'দের স্বার্থচলন,
ক্লীববুদ্ধির অমনি গতির
ক্রমে-ক্রমে হয়ই বলন ;
স্খলনমুখর চলন তা'দের
নিষ্ঠাবিহীন অনুরাগ,
স্বার্থলোলুপ অন্ধতমে
জীবনও নেয় তেমনি বাগ ;
হৃদয়-রাগে তাই বলি শোন্—
এখনও ওরে, দেখ্ ভেবে,
জীবনচলন-সার্থকতায়
কোন্ দাঁড়াটি বেছে নেবে । ৮৩ ।
আড়ম্বরহীন শ্রদ্ধাপ্রীতি
সহজ সুন্দর চর্য্যী প্রাণ,
দেখানো আধিক্য নাইকো যেথায়
নয়কো যে-জন স্বল্প-প্ৰাণ,
সহজভাবে সঙ্গতিশীল
রাগদীপ্ত বুকের টান,
স্নেহ-প্রীতি সহজভাবে
সেথায় কিন্তু অটুট থাকে,—
প্রেষ্ঠনিষ্ঠা-আনুগত্য—
কৃতিদীপ্ত যা'র আধান । ৮৪।