অনুশ্রুতি ৩য় খন্ডে ‘সংজ্ঞা’

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “সংজ্ঞা” শিরোনামে পৃষ্ঠা ০৯ – ১৬ পর্যন্ত মোট ৩৭ টি বাণী রয়েছে।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

শুভ-চৰ্য্যায় শ্রেয়-সহ
লেগে থাকাকেই নিষ্ঠা কয়,
ভঙ্গপ্রবণ অনুরতি
সেটা কিন্তু নিষ্ঠা নয় । ১।
শোন্ না বলি—ভাগ্য মানেই
নিষ্ঠানিপুণ সদ্‌-ভজন,
দীপ্ত-উছল নিষ্পাদনাই
ভাগ্যদেবীর সিদ্ধ আসন। ২।
ভজনদীপ্ত কৃতি যেথায়
নিষ্ঠা-আনুগত্য নিয়ে,
ভগবত্তা সেইখানেই তো
সেই হৃদয়ে চলছে ব'য়ে । ৩।
সৎসঙ্গ তা'কেই বলে 
নিষ্ঠা যা'তে উতল চলে,
আনুগত্য-কৃতি বাড়ে
তেমনতরই শিষ্ট তালে ;
যে-সঙ্গে এর ব্যতিক্রম আনে
অসৎসঙ্গ জানিস্ তা'য়,
সত্তাকে তা' করে না স্ফুরণ
অশিষ্ট যা' তা'তেই ধায়। ৪।
ধুরন্ধর জেনো সে— 
যত পাকই খা'ক্ না কেন
ধুরো ছাড়ে না যে। ৫।
ছেলেপেলে ও নেহাৎ-প্রিয়
ছাপিয়েও যা'রা স্বামীরতা, —
নিষ্ঠানিপুণ অনুকৃতি—
তারাই কিন্তু পতিব্রতা। ৬।
অন্তর-নিয়মন যিনি করেন
যেমনতর নিয়মনে,
অন্তর্য্যামী তা'ই-ই ঈশ্বর—
করেন বৈধী বিনায়নে। ৭।
যিনি যা'-কিছু হ'য়ে থাকেন
বিশেষ বৈশিষ্ট্যে ব্যক্ত হ'য়ে,
তিনিই বিভু—চলেন সদাই
বৈশিষ্ট্যেরই ব্যাপ্তি ল'য়ে। ৮।
প্রেষ্ঠ তোমার ইষ্ট যিনি
চিত্তবৃত্তি-প্রবাহ তাঁ’তে,
'তা'কেই কিন্তু ধ্যান বলে—
সার্থক সঙ্গতি যাঁহার সাথে। ৯।
ভজন মানেই ইষ্টীচলন
বাঁচাবাড়ার দীপনায়,
বিশ্বমাঝে যা'-কিছু সব
জাগে যা'তে ঊৰ্জ্জনায়। ১০।
ধৃতি-স্বভাব অন্তরে যাঁ’র
কৃতি-সোহাগ-সম্বেগে—
ভগবান্ যে তিনিই তো হন
পালন-পোষণ-আবেগে। ১১।
ভগবান্ মানেই ভজবান যিনি
যেথায় যেমন স্ফূর্ত্ত হয়,
ভজবানের মহিমা ছাড়া
ভগবান্ কি কোথাও রয়?
ভক্তদেহেই তাঁ'র আবির্ভাব
ভজন-সাধন-কৃতির টানে,
জ্ঞান-প্রদীপের বোধদৃষ্টি
যেথায় প্রীতি-আলো আনে;
ভরদুনিয়ায় ব্যাপ্ত যিনি
যে-জন তা'তে ভজনদীপ্ত—
ভগবানের বিকাশ তাঁতেই,
সেই ব্যক্তিত্বেই থাকেন স্ফূর্ত্ত। ১২।
ব্রাহ্মী-দীপক জ্ঞান-সংহতি
স্বভাব-সুন্দর যা'তে থাকে,
ভক্তি-বিভব জ্ঞানবিভায়,—
পুরুষোত্তম বলে তা’কে;
ভক্তি, জ্ঞান, চতুর দৃষ্টি
সহজ-স্বভাব ব্যক্তিত্বে তা'কে,
মহাপুরুষ আখ্যা দিয়ে
স্তুতি করে বহু লোকে। ১৩।
ব্রহ্ম কিন্তু বৃদ্ধি আনেন
বিস্তারেতে ব্যাপ্ত হ'ন,
সব যা'-কিছুর ভিতরে তিনি
এই দীপনায় দীপ্ত র'ন। ১৪।
বৃদ্ধি পাওয়ার তুকতাক যা'
ব্যাপ্তিতে তা'র উচ্ছলন,
কোন্ প্রগতির কেমনতর তা'
সেই জ্ঞানই তো ব্রহ্মজ্ঞান ;
জীবনই বা কেমনতর
মরণই বা কেন হয়,
ব্রাহ্মী আবেগ কেমনতর
কিসে কেমন সচল রয়
আবর্তন-বিবর্ত্তন আর
পরিণতি-পরিণাম,
কেমন ক'রে কোন্ গতিতে
কেনই বা হয় ব্যতিক্রম ;
নিটোল পটু যেমনতর
যেমন জানায় দক্ষ হবে,
ব্রহ্মজ্ঞানও তেমনতরই
সার্থকতায় দাঁড়িয়ে র'বে। ১৫।
শ্রেয়জনার অভিজ্ঞ বাদ
আশীর্ব্বাদই তা'য় জানিস,
যে-নিয়মে চললে পরে
কৃতার্থ হয়, ঠিক বুঝিস্। ১৬।
মন্ত্র মানে সেই তুক্‌টি
যা' ধ'রে যা করা যায়,
মিলিয়ে নিয়ে তাৎপর্য্যেতে
সার্থকতা আসেই তা'য়। ১৭।
যোগ কাহারে কয়?
চিত্তবৃত্তি যা'-সব যা'তে
একেই সার্থক হয়। ১৮।
দেখে-শুনে বুঝে-সুঝে
যেমন বোধে শক্ত তুমি,
বাস্তবতার সঙ্গতিতে
হ'ল যেটা হওয়ার ভূমি,
অনুভূতি কিন্তু সেটাই নিছক
পশ্চাতেতে হও যা' তুমি,
যা'তে তোমার জ্ঞানটা দীপক —
দেখা-বোঝা যাহার ভূমি। ১৯।
সঙ্গতিশীল হ'য়ে যেটা
অনুভবে আসবে তোমার,
অনুভূতি তা'কেই বলে—
বাস্তবতা বোধটি যা'র। ২০।
কেমন ক'রে বেঁচে থাকি
বাড়ার কী নিদান,
সঙ্গতিতে যে তা' জানে
সেই তো বিদ্যাবান্। ২১।
যে-অবস্থায় যেমনতর
হাতে-কলমে বুঝে ক'রে,
সিদ্ধকাম হয় যে-জনা
'অভিজ্ঞ' তা'রেই নিস্ ধ'রে। ২২।
সাধু জানিস্ তা’রা—
সৎ আচার্য্যের নিদেশমত
প্রজ্ঞাতপা যা'রা। ২৩।
বহু কোটি লোকের সাথে
একপ্রাণতায় যা'র বসতি,
ছত্রপতি সেই তো হবে
পিছিয়ে দিয়ে সব অরাতি। ২৪।
সমীচীনভাবে বাঁচাবাড়ার
যত আয়োজন,
ধৰ্ম্ম ব'লে ব'লে থাকেন
যাঁ'রা বিচক্ষণ। ২৫।
বাঁচাবাড়ায় সাহায্য করে
দুটো খাওয়া দিয়ে,
আনন্দবাজার নাম হ'লো তাই
চর্য্যা-পোষণ নিয়ে। ২৬।
অন্তঃকরণ তা'কেই বলে
ভাববিভূতির বিধানে যা'
ব'লে ক'রে চ'লে তোমার
ভাবে আনে উচ্ছলতা। ২৭।
শান্তি মানে নিথর হ'য়ে
অবশ-অলস নয়কো হওয়া,
সুধী-বীক্ষণে সুচৰ্য্যাতে
সুনিষ্পাদন ক'রে যাওয়া। ২৮।
মন্দ কিন্তু তা'—
জীবন-আবেগে বিক্ষেপ আনে
নিথর করে যা'। ২৯।
বীর্য্যবান্ হওয়া মানে—
অশিষ্ট-আচারী হওয়া নয়,
শোভন-সুযুক্ত অনুচলনে
করতে হবে উপচয়। ৩০।
সত্তায় তোমার চিতী সম্বেগ
যে-ভাবে স্বতঃ অবস্থান,
বর্ণ তোমার তা'ই-ই কিন্তু
সাত্বত তা'ই অধিষ্ঠান। ৩১।
যেমনতর ধৃতি-আবেগ
জমাট বেঁধে শরীর হয়,
সেই আবেগের স্পন্দনাটার
বর্ণ ব'লে পরিচয়। ৩২।
আবার বলি—বর্ণ মানেই
আবেগ-অনুরঞ্জনা,
যে-সংস্কারে উথলে ওঠে
স্বতঃস্রোতা ঊর্জ্জনা। ৩৩।
অস্তিত্বটার জীবন-তালটি
ক’মে-বেড়ে চলতে থাকে,
সমীচীন সাম্যে যা' রাখে তা'য়
ঔষধই তো বলে তা'কে। ৩৪।
বোধ-বাস্তবে কল্পনায় যা'র
বিশেষ বিকাশ হ'য়ে ওঠে,
সার্থকতা দেখায় কিন্তু
অর্থ তা'কেই ব'লে থাকে। ৩৫।
স্বতঃ সাবলীল শব্দস্তর যা'
জীবনীয় দ্যুতি নিয়ে,
স্বৰ্গ কিন্তু সেটাই আসল
সাত্ত্বিকতার ভাতি বিনিয়ে ;
মর্ত্যেও তেমনি স্বর্গ আসে
যা' মরত্ব-অপসারী,
স্বৈর্য্যভরা জীবনীয়—
সত্তায় করে সুপ্রসারী। ৩৬।
সুখ-অৰ্জ্জনা স্বতঃ যেথায়
নিটোল চলে জীবনস্রোত,
স্বৰ্গ কিন্তু তা'কেই বলে
সেথায় স্বতঃ সলীল বোধ। ৩৭।

Loading