অনুশ্রুতি ২য় খন্ডে সংজ্ঞা

অনুশ্রুতির ২য় খন্ডে “সংজ্ঞা” শিরোনামে পৃষ্ঠা ২৩০ – ২৩৮ পর্যন্ত মোট ৬০ টি বাণী রয়েছে ।
নিচে বাণীসমূহ দেয়া হলো।

ঈশ্বর তবে কে?
ধারণ-পালন-সম্বেগ-সিদ্ধ
উৎস-স্রোতা যে। ১।
ভগবান্ তবে কে? 
ভজন-দীপন জীবন-স্রোতা
কল্যাণ-কল যে। ২।
সত্য কিন্তু তা'কেই কয়
মঙ্গল যা'তে হয়,
ক্ষতিপ্রসূ এমন সত্য
সত্য কিন্তু নয়। ৩।
বাস্তব-বোধ গজায় যা'তে
বিন্যাসদ্যুতি-বর্ষণে,
সত্য জানিস্ তা'কেই বলে
উৎসারিত কর্ষণে। ৪।
বাস্তবতার বিনায়নে
ন্যায্য হ'য়ে যেটাই নেয়,
ধী-তৃপণী উদ্বর্ত্তনা,—
তা'কেই জানিস্ ব'লে ন্যায়। ৫।
বাস্তবতার তথ্য জেনে
ন্যায্য যেটা, উচিত যেটা,
তেমনতরই বুঝে করা—
ছোট্ট কথায় বিচার সেটা। ৬।
পর ব'লে কেউ নাইকো যেথায়
মিতব্যয়ী স্বভাব যা'র,
অন্নদারই সমষ্টি রূপ
সেই-ই তো আনন্দ-বাজার। ৭।
আবৃত্তিতে জন্মে বোধ
বোধ-বিন্যাসে জ্ঞান,
চিন্তা-চলন সেই পথেতে
ওকেই বলে ধ্যান। ৮।
আবৃত্তি মানে লেগে থাকা 
বুদ্ধি-বিচার-চলন নিয়ে,
সমঞ্জসা তাৎপর্য্যেরই
নিষ্ঠানিপুণ মনন দিয়ে। ৯।
ইষ্ট তবে কে?
ধারণ-পালন-সন্দীপনায়
মত্ত-মুখর যে। ১০।
ভজন কা'রে কয়?
সেবা, অনুরাগ, অনুশীলনে
গায় আচার্য্যের জয়। ১১।
মন্ত্র কা'রে কয়?
যে-তুক ধ'রে, স'য়ে-ব'য়ে
হয় জীবনে জয়। ১২।
মন্ত্র জানিস্ তা'ই—
যে-মন্ত্রণার চর্য্যা ক'রে
সার্থকতা পাই। ১৩।
কল্যাণ তবে কী ?
সাত্বতই যা'র গতি-মতি
সত্তাসেবী ধী । ১৪।
আপন তবে কে?
তোমার সুখে হৃদয় পাগল
ডরায় নাকো যে। ১৫।
ব্যর্থ তবে কী?
স্বার্থসেবায় লোভ-পরবশ
স্বার্থপাগল ধী। ১৬।
প্রণয় কা'রে কয়?
প্রাণের টানের প্রদীপ্ততায়
উৎকর্ষে যে লয়। ১৭।
ভোগ কাহারে কয়?
যোগহারা যে বক্রমুখী
স্বার্থকে পোষয়। ১৮।
ভণ্ড তবে কে?
স্বার্থসেবা করে যে-জন
অন্যকে ভাঁড়ায়ে। ১৯।
ধরা কা'কে কয় ?
যা'-কিছুকে ধ'রে রাখে
বিমুখ কভু নয়। ২০।
অনুরাগ কা'রে কয়?
নিষ্ঠা-কঠোর সেবাপটুতা
আনেই প্রিয়র জয়। ২১।
ভক্ত জানিস্ সেই,
ভজন-প্রতুল রাগ-মাধুর্য্যে
প্রেষ্ঠে অটল যেই। ২২।
শ্রদ্ধা রয় কোথায়?
নিষ্ঠাপ্রতুল সৎ-এর সেবায়
কৃষ্টি-ঊর্জ্জনায়। ২৩।
বিশ্বাস করি কা'রে?
কথায়-কাজে মিল আছে যা'র
আপদকালে ধরে। ২৪।
আত্মা কা'রে কয়?
জীবনধারার গতি নিয়ে
সত্তা সংরক্ষয়। ২৫।
সাধু কা'রে কয়?
নিষ্পাদনে সিদ্ধ যা'রা
চরিত্রে তন্ময়। ২৬।
প্রবুদ্ধ সে কে?
ধৃতি-নিপুণ কৃতি নিয়ে
বোধ-বিন্যস্ত যে। ২৭।
প্রত্যয়ী সে কে?
দেখে-শুনে বুঝ-বলাতে
নিশ্চয় করে যে। ২৮।
ঐতিহ্য কা'রে কয়?
আগল-ভাঙ্গা জীবন-চলা
অটুট যা'তে রয়। ২৯।
ব্রহ্মচর্য্য মানেই জানিস্ 
বৃদ্ধিপথে চলন-বলন,
সেই চলনে থাকে, বাড়ে,
নিরোধ ক'রে অকাল মরণ। ৩০।
ঐতিহ্য তো তা'কেই বলে
সংস্কারের সঙ্গতি,
প্রাচীন ধারার যোগে যেথায়
আপদে পাস্ নিষ্কৃতি। ৩১।
তোমায় ছাড়া চলে নাকো
বিশেষত্ব এই যা'দের,
সাঙ্গোপাঙ্গ তা'রাই তোমার
এমনতরই হয় তা'দের। ৩২।
শিষ্য কা'কে কয়?
ইষ্টশাসন সেধে-শুধে
জ্ঞানে প্রতিষ্ঠয়। ৩৩।
কর্মী কা'কে কয়?
কৰ্ম্মতপা হ'য়ে যে-জন
ত্বরিত নিষ্পাদয়। ৩৪।
সেবক তবে কে?
বুঝে-সুঝে কৰ্ম্ম ক'রে
হৃষ্ট করে যে। ৩৫।
ঋত্বিক্ বলে তা'কে—
জীবন-ঋতুর মাধ্যমে যে
লোককে চালায় তুকে। ৩৬।
অধ্বর্য্যু তো সে—
ইষ্টপথে জীবন-ব্রতে
যুক্ত করে যে। ৩৭।
যাজক বলে কা'রে?
ইষ্টীপূত হ'য়ে
ভাব-অবস্থার মাধ্যমে যে
ধৃতি সঞ্চারে। ৩৮।
লোকনেতা কে?
ধৃতিতপা জীবনযাজ্ঞিক
লোকপালী যে। ৩৯।
ভক্তি তবে কী?
ঊর্জ্জী ভজন, ঊর্জ্জী নিষ্ঠা,
ঊর্জ্জীতপা ধী। ৪০।
ভালবাসা তবে কী?
যা'র ভালতে বসবাস তোর—
চর্য্যানিপুণ ধী । ৪১।
পছন্দ কর কা'ক্?
তোমার ছন্দে যা'র ছন্দ মেলে
রয় কমই যা'য় ফাঁক। ৪২।
সুন্দর তবে কী?
দেখলে আদর উথলে ওঠে
শুভতে হয় স্থিতি। ৪৩।
রাজনীতি বলে কা'য়?
পূরণ-পোষণ পরিচর্য্যায়
সংহতি আনে যা'য়। ৪৪।
ব্রহ্মচারী কে?
বাঁচা-বাড়ার কৃতিচর্য্যায়
বিজ্ঞ-যোগ্য যে। ৪৫।
গৃহস্থ বলি তা'রে—
গৃহে থেকেও বিহিত চৰ্য্যায়
লোককে বিজ্ঞ করে। ৪৬ ।
বানপ্রস্থী সেই—
ব্যষ্টিসহ বিস্তৃতির
সেবাব্রতী যেই। ৪৭।
সন্ন্যাসী বলে কা'য়?
সম্যক্ সুনিশ্চয়ে যা'তে
সত্তা-সংস্থ হয়—
আচার্য্যেতে ন্যস্ত হ'য়ে
যে-জন সাধে তা'য়। ৪৮।
আশ্রম কা'রে কয়?
হাতে-কলমে কাজ ক'রে যেথা
বিজ্ঞতা লভয়। ৪৯।
মুক্তি এল সেই—
মনের গ্রন্থি ভেঙ্গে-চুরে
ইষ্টনিষ্ঠ যেই। ৫০।
বৈরাগ্য তবে কী?
ইষ্টরাগে রঙ্গিল যে-জন
সেবাদীপ্ত ধী। ৫১।
পাপ বলে কা'য় জানিস্ কি তুই
চিন্তে-ভেবে বুঝিস্ কি তায়?
সত্তাকে যা' পিষ্ট করে
অস্তিত্বকে যা ডুবায়। ৫২।
রাষ্ট্র বলে কা'য়?
বহু লোকের সুসমাবেশ
সাত্বত নিষ্ঠায়। ৫৩।
রাজনীতিই তো সেই নীতি
সত্তায় করে রঞ্জনা,
উসকে তোলে কৃষ্টিজীবন,
পোষণ-পূরণ-বন্দনা। ৫৪।
সমাজ বলে কা'য়?
সত্তাপোষী চলায় যা'রা
হাত মিলিয়ে ধায়। ৫৫।
কিসে কেমন কী মেলালে
সৃষ্টি হ'ল কী—
কোন্ ব্যাপারে কেমন সুফল
তা'ই জানাই তো ধী। ৫৬।
জ্ঞানী তবে কে?
সব যা'-কিছু দেখে-বুঝে
সত্তা পোষে যে। ৫৭।
মান মানেই তো চরিত্রের ওজন,
ব্যবহার আর তপস্যায়—
লোক-হৃদয়ে সঞ্চারিয়ে
গৌরবান্বিত করে তা'য়। ৫৮।
প্রাণের স্থৈর্য্য যা'তে থাকে
যা'তে থাকে তা'র আয়াম,
সুধীজনা তা'তেই বলে—
তা'কেই জানে প্রাণায়াম। ৫৯।
অনুশীলন কিন্তু তা'কেই বলে—
খুঁটিনাটি সবটা নিয়ে
বোধ-আয়ত্তে এনে তা'কে
আয়ত্ত করা শ্রদ্ধা দিয়ে। ৬০।

Loading