পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের শ্রীহস্তলিখিত উপদেশ বাণী হলো সত্যানুসরণ। সৎসঙ্গীদের নিত্যপাঠ্য সত্যানুসরণের বাণীগুলোকে নিম্নে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন করা হলো।
- সত্যানুসরণ সম্বন্ধে পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুরের মন্তব্য (শ্রীশ্রীঠাকুর—সত্যানুসরণ আমার হাতের লেখা। প্রথম বই। বই ব’লে তো লিখিছিলাম না।………)
- সত্যানুসরণ শব্দের অর্থ ও এটা কেন লিখেছেন তা নিয়ে পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দার ব্যাখ্যা (অভিধান দেখে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন— ‘সৎ’ শব্দ ষ্ণ প্রত্যয় করে আসছে সত্য। মানে উত্তম, চিরস্থায়ী, বিদ্যমান ইত্যাদি। সত্য-এর আরও অর্থ করা যায়— যথার্থ, অমিথ্যা।….)
- সত্যানুসরণ রচনার পটভূমি ( পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের অন্যতম প্রিয়ভক্ত অতুলচন্দ্র ভট্টাচার্য্য। কর্ম্মজীবন তাকে পাবনা….)
- সত্যানুসরণের শুরুতে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রধান দুটি বাণী ভারতের অবনতি ও অর্থ, মান, যশ।
- দুর্বলতা নিয়ে সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা নং- ৭, ৮, ৯ (সর্ব্ব প্রথম আমাদের দুর্ব্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক’রতে হবে। সাহসী হ’তে হবে, বীর হতে হবে।….)
- অনুতাপ নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর পৃষ্ঠা নং ৯, ১০ (অনুতাপ কর; কিন্তু স্মরণ রেখো যেন পুনরায় অনুতপ্ত হ’তে না হয়।…..)
- কামিনী-কাঞ্চন সম্বন্ধে পৃষ্ঠা নং ১০, ১১(জগতে মানুষ যত-কিছু দুঃখ পায় তার অধিকাংশই কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি থেকে আসে, ও দুটো থেকে যত দূরে স’রে থাকা যায় ততই মঙ্গল।….)
- দুঃখ বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর পৃষ্ঠা নং ১২ (সঙ্কোচই দুঃখ, আর প্রসারণই সুখ। যাতে হৃদয়ে দুর্ব্বলতা আসে, ভয় আসে— তাতেই আনন্দের খাঁকতি—আর তাই দুঃখ।……)
- কপটতা প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ১৩ ( যদি সাধনায় উন্নতি লাভ ক’রতে চাও, তবে কপটতা ত্যাগ কর। কপট ব্যক্তি অন্যের নিকট সুখ্যাতির আশায় ……..)
- অন্যের দোষ ধরা, পরনিন্দা, খোসামোদ পৃষ্ঠা নং ১৪, ১৫ (এটা খুবই সত্য কথা যে, মনে যখনই অপরের দোষ দেখবার প্রবৃত্তি এসেছে তখনই ঐ দোষ নিজের ভিতরে এসে বাসা বেঁধেছে। …………)
- ধর্ম নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের মতামত পৃষ্ঠা নং ১৫, ১৬ (যার-উপর যা’-কিছু-সব দাঁড়িয়ে আছে তাই ধর্ম্ম; আর, তিনিই পরমপুরুষ।ধর্ম্ম কখনও বহু হয় না…….)
- জ্ঞানাভিমান প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ১৬, ১৭(যদি ভাল চাও তো জ্ঞানাভিমান ছাড়, সব্বারই কথা শোন; আর, যা’ তোমার হৃদয়ের বিস্তারের সাহায্য করে তাই কর……)
- সদগুরুকে পরীক্ষা করা পৃষ্ঠা নং ১৭, ১৮ ( যদি পরীক্ষক সেজে অহঙ্কার নিয়ে সদগুরু কিংবা প্রেমী সাধুগুরুকে পরীক্ষা ক’রতে যাও, তবে তুমি তাঁতে তোমাকেই দেখবে, ঠ’কে আসবে…..)
- জ্ঞান অর্জন পৃষ্ঠা নং ১৮ (সত্যদর্শীর আশ্রয় নিয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা কর এবং বিনয়ের সহিত স্বাধীন মত প্রকাশ কর। ….)
- সৎ হওয়া, নাম-যশ, নিষ্কাম ও সকাম কর্ম পৃষ্ঠা নং ১৯, ২০ (নিজের দোষ জেনেও যদি তুমি তা’ ত্যাগ করতে না পার, তবে কোনও মতেই তার সমর্থন ক’রে অন্যের সর্ব্বনাশ করো না। তুমি যদি সৎ হও, তোমার দেখা-দেখি হাজার-হাজার…..)
- অপরকে দিতে চেষ্টা করা পৃষ্ঠা নং ২০ (তুমি অন্যের নিকট যেমন পেতে ইচ্ছা কর, অপরকেও তেমনি দিতে চেষ্টা কর…….)
- বন্ধন, অদৃষ্ট বিষয়ক নির্দেশনা পৃষ্ঠা ২০, ২১, ২২ ( কাজ ক’রে যাও, কিন্তু আবদ্ধ হ’য়ো না। যদি বিষয়ের পরিবর্ত্তনে তোমার হৃদয়ে পরিবর্ত্তন আসছে বুঝতে পার, আর সে-পরিবর্ত্তন তোমার বাঞ্ছনীয় নয়, তবে ঠিক জেনো, তুমি আবদ্ধ হয়েছ…..)
- এগিয়ে যাওয়া, অভিভূত হওয়া বিষয়ে পৃষ্ঠা নং ২২ (এগিয়ে যাও, কিন্তু মেপে দেখতে যেও না কতদূর এগিয়েছ……..)
- সেবা, অনুরোধ, নিন্দা সম্বন্ধে পৃষ্ঠা নং ২২ (যত পার সেবা কর, কিন্তু সাবধান! সেবা নিতে যেন ইচ্ছা না হয় ।…)
- ধীর, ক্ষীপ্র, বীর, স্থিরপ্রতিজ্ঞ, সহানুভূতি, প্রশংসা পৃষ্ঠা নং ২৩ (ধীর হও, তাই ব’লে আলসে, দীর্ঘসূত্রী হ’য়ে প’ড় না। ….)
- মনোমালিন্য ও বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ২৩, ২৪ (যার উপর ক্রুদ্ধ হয়েছ, আগে তা’কে আলিঙ্গন কর, নিজ বাটীতে ভোজনের নিমন্ত্রণ কর, ডালা পাঠাও এবং হৃদয় খুলে বাক্যালাপ না-করা পর্য্যন্ত অনুতাপের সহিত তার মঙ্গলের জন্য পরমপিতার কাছে প্রার্থনা কর….)
- ব্রহ্মজ্ঞান বিষয়ক নির্দেশ পৃষ্ঠা নং ২৫ (যতদিন তোমার শরীর ও মনে ব্যথা লাগে, ততদিন তুমি একটি পিপীলিকারও ব্যথা নিরাকরণের………..)
- হাসা, কাঁদা ও বলা পৃষ্ঠা নং ২৫, ২৬ (হাসো, কিন্তু বিদ্রূপে নয়। কাঁদো, কিন্তু আসক্তিতে নয়, ভালবাসায়, প্রেমে। বল, কিন্তু আত্মপ্রশংসায়….)
- সৎ এর প্রকাশ প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ২৬ (তোমার সৎস্বভাব কর্ম্মে ফুটে উঠুক, কিন্তু আপন ভাষায় ব্যক্ত না হয়, নজর রেখো।…)
- বলা ও অনুভূতি প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ২৬, ২৭( স্পষ্টবাদী হও, কিন্তু মিষ্টভাষী হও। ব’লতে বিবেচনা কর, কিন্তু ব’লে বিমুখ হ’য়ো না।…..)
- খেয়াল, বিস্তার, কর্ম্ম ও সাধনা প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ২৭, ২৮ (যে-খেয়াল বিবেকের অনুচর, তারই অনুসরণ কর, মঙ্গলের অধিকারী হবে।…..)
- উদ্দেশ্যে পৌঁছানো প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং২৮, ২৯ (একটা চাইতে গিয়ে দশটা চেয়ে ব’স না, একেরই যাতে চরম হয় তাই কর, সকলগুলিই পাবে।…..)
- কী করলে কী হবে আর কী হবে না পৃষ্ঠা নং ২৯, ৩০ (হৃদয় দাও, কখনও হ’টে যেতে হবে না।….সাধু হও…)
- শিষ্য সম্বন্ধে পৃষ্ঠা নং ৩০, ৩১ (অন্ধ হওয়া দুর্ভাগ্য বটে, কিন্তু যষ্টিচ্যুত হওয়া আরও দুর্ভাগ্য…..স্কুলে গেলেই তা’কে ছাত্র বলে না, আর, মন্ত্র নিলেই তা’কে শিষ্য বলে না…..)
- গুরু, আদর্শ ও সৎচালক সম্বন্ধে পৃষ্ঠা নং ৩১ থেকে ৩৫ (খবরদার! কাউকে হুকুম ক’রে কিংবা চাকর-বাকর দিয়ে গুরুর সেবা-শুশ্রূষা করাতে যেও না….গুরুই ভগবানের সাকার মূৰ্ত্তি, আর তিনিই Absolute (অখণ্ড)।……)
- দীন, ব্যাকুলতা, স্বার্থপরতা, সেবা, ভক্ত, সহিষ্ণুতা পৃষ্ঠা নং ৩৫ (দীন হওয়া অর্থ নোংরা সাজা নয়কো…..)
- ক্ষমা, বিচার, অন্যায় পৃষ্ঠা নং ৩৬ (ক্ষমা কর, কিন্তু অন্তরের সহিত ; ভিতর গরম রেখে অপারগতাবশতঃ ক্ষমাশীল হ’তে যেও না।….)
- পাপ প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ৩৬, ৩৭(যদি পাপ ক’রে থাক, কাতরকণ্ঠে তা’ প্রকাশ কর, শীঘ্রই সান্ত্বনা পাবে।…)
- দান সম্বন্ধে পৃষ্ঠা নং ৩৭(দান কর, কিন্তু দীন হ’য়ে প্রত্যাশা না রেখে। তোমার অন্তরে দয়ার দরজা খুলে যাক।….)
- কর্মী হিসেবে সফল হওয়া পৃষ্ঠা নং ৩৮ (হেগে মরার চেয়ে হেঁটে মরা ভাল। যে বলায় কম কাজে বেশী, সে-ই প্রথম শ্রেণীর কৰ্ম্মী…….)
- ধনী সম্বন্ধে পৃষ্ঠা নং ৩৯ (ধনী হও ক্ষতি নাই, কিন্তু দীন এবং দাতা হও।…..)
- ক্ষমা, প্রেম, ভালবাসা, বগবগানি পৃষ্ঠা নং ৩৯ (ক্ষমা কর, কিন্তু ক্ষতি ক’রো না।…..)
- সৎ-চিন্তা, সৎকর্ম পৃষ্ঠা নং ৪০ (যদি নিজে সন্তুষ্ট বা নির্ভাবনা হ’য়ে থাক, তবে অন্যের জন্য চেষ্টা কর।…….সৎ-চিন্তা এবং সৎ-কর্ম্মে ডুবে থাক……)
- ধর্মকে জানা প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ৪০, ৪১ (ধর্ম্মকে জানা মানেই বিষয়ের মূল কারণকে জানা ; আর, …)
- বিশ্বাস প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ৪১-৪৪ (যে-ভাব বিরুদ্ধ ভাব দ্বারা আহত বা অভিভূত না হয়, তাই বিশ্বাস।….)
- সন্দেহ প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ৪৪, ৪৫ (বিশ্বাস বিরুদ্ধ ভাব দ্বারা আক্রান্ত হ’লেই সন্দেহ আসে।….)
- ভক্তি প্রসঙ্গে পৃষ্ঠা নং ৪৬ – ৫০ (শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস দুই ভাই, একটি আসলে আর একটিও আসে।…..)
- জ্ঞান প্রসঙ্গে সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা নং ৫০, ৫১ (অনুভূতির দ্বারা যা’ জানা যায় তাই জ্ঞান।………)
- অহংকার ও সন্দেহ পৃষ্ঠা নং ৫১ – ৫৩ (অহঙ্কার যত ঘন, অজ্ঞানতা তত বেশী ; আর অহং যত পাতলা, জ্ঞান তত উজ্জ্বল।…..
- সরল সাধুতা, বিনয়, প্রেম, বিশ্বাস, জ্ঞান, দীনতা, সদগুরুর আদেশ পালন পৃষ্ঠা নং ৫৩ (সরল সাধুতার মত আর চতুরতা নেই ; —যে যেমনই হোক না কেন,………)
- নেতা ও বীরত্ব নিয়ে পৃষ্ঠা নং ৫৪, ৫৫ (যে আগে ঝাঁপ দিয়েছে, আগে পথ দেখিয়েছে, সেই নেতা ……)
- নাম-যশ পৃষ্ঠা নং ৫৫, ৫৬ (নাম-যশ আত্মোন্নয়নের ঘোর অন্তরায়।……….)
- প্রকৃত হওয়া, সত্যকে জানা, সত্য প্রচার পৃষ্ঠা নং ৫৬ – ৬০ ( তুমি যেমনতর প্রকৃত হবে, প্রকৃতি তোমায় তেমনতর উপাধি নিশ্চয় দেবেন এবং নিজের ভিতরে তেমন অধিকারও দেবেন ; ইহা নিত্য প্রত্যক্ষ ক’রছ …..)
- অহংকারমুক্ত থাকার তুক পৃষ্ঠা নং ৬০ – ৬২ (দেহ থাকতে অহঙ্কার যায় না, আর ভাব থাকতেও অহং যায় না। তবে নিজের অহং আদর্শের উপর দিয়ে, passive (অক্রিয়) হ’য়ে যে যত থাকতে পারে, সে তত নিরহঙ্কার এবং সে তত উদার।…….)
- সদগুরুর শরণাপন্ন হওয়া পৃষ্ঠা নং ৬২, ৬৩ (……সদ্গুরুর শরণাপন্ন হও, সৎ-নাম মনন কর ; আর, সৎসঙ্গের আশ্রয় গ্রহণ কর—আমি নিশ্চয় ব’লছি, তোমাকে আর তোমার উন্নয়নের জন্য ভাবতে হবে না।……)
- প্রেম, সন্ন্যাস ও প্রেমাস্পদ পৃষ্ঠা নং ৬৩ – ৬৮ (প্রেমকে প্রার্থনা কর, আর হিংসাকে দূরে পরিহার কর, জগৎ তোমার দিকে আকৃষ্ট হবেই হবে।……..যাঁ’তে সৰ্ব্বস্ব বিকিয়ে দিয়েছ—তিনিই তোমার ভগবান্ ; আর, তিনিই তোমার পরম গুরু।)
- পাওয়ার জন্য করণীয় পৃষ্ঠা নং ৬৮, ৬৯ (যেমন ক’রে যা’ পেতে হয়, তা’ না ক’রে সেজন্য দুঃখিত হ’য়ো না।…….মানুষের আকাঙ্ক্ষিত মঙ্গল তার অভ্যস্ত সংস্কারের অন্তরালে থাকে………)
- ব্রহ্ম, ভগবান, সদগুরু….ইত্যাদির সংজ্ঞা পৃষ্ঠা নং ৬৯ – ৭২ (সত্যানুসরণের ৬৯ – ৭২ পৃষ্ঠায় শ্রীশ্রীঠাকুর ব্রহ্ম, ভগবান, সদগুরু, সৎ, সন্ন্যাস, সমাধি, ধ্যান, যোগ, ঋষি, মুক্তি, আধ্যাত্মিকতা, প্রকৃত বিচার, যুক্তি, অনুতাপ, তীর্থ, পূণ্য, পাপ, সত্য, সসীম, অসীম – এগুলোর সংজ্ঞা দিয়েছেন। )