সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
“অহঙ্কারী ধনী মলিনতার দাস, তাই জ্ঞানকে উপেক্ষা করে।“
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব বাণীটি পাঠের আদেশ দিলেন। পাঠের পর জিজ্ঞাসা করলেন—ক্লাস সেভেনের কে আছ?
ধৃতিদীপী—সপ্তর্ষি আছে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সপ্তর্ষি পড়।
সপ্তর্ষি পাঠ করল বাণীটি। এরপর তিনি গতকালের মেয়েদের পাঠ করার নির্দেশ দিলেন।
একে-একে স্বপ্না (চৌধুরী), রানী (মুখার্জী) ও শাশ্বতী (চ্যাটার্জী) পাঠ করল ঐ বাণী। অতঃপর শ্রীশ্রীপিতৃদেব ভবেশকে (সরকার) বাণীটির ব্যাখ্যা করতে বললেন।
ভবেশ—অহঙ্কারী ধনী, অর্থাৎ যে ভাবে আমার মত ধনী কেউ নেই, আমিই কর্তা—সে মলিনতার দাস, অসতের দাস।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ধনীরই তো অনেক দাস থাকে, সে আবার মলিনতার দাস কী ক’রে হয়?
ভবেশ—সে জ্ঞানের ওপরে ওপরে থাকতে চায়, আমার মত কেউ জানে না—এ’রকম ভাবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ময়লা-আবর্জনার কেউ দাস হয় না-কি?
ভবেশ—অসতের দাস হয়।
—তার মানে?
—যে সৎ-কে অবজ্ঞা ক’রে চলে, সে অসতের দাস।
—’সৎ’ কাকে বলে, তাহ’লে বল।
—যে-সব রীতি-নীতি মেনে চ’লে সুপথে গমন করা যায়।
—সে তো ঠিকই। কিন্তু সৎ কাকে বলে তা তো বোঝা গেল না। ধৃতিদীপী কী বল?
ধৃতিদীপী—যা’ জীবনবৃদ্ধির সহায়ক তা-ই সৎ।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ। তাহ’লে কী হ’ল? জীবনবৃদ্ধির সহায়ক যা নয়—তা’ অসৎ। এ তো না হয় ‘সৎ’ ‘অসৎ’ কাকে বলে বোঝা গেল। কিন্তু এখানে বাণীতে কী বলা আছে? ‘অহঙ্কারী ধনী মলিনতার দাস’ —দাস মানে কী?
ভবেশ—চাকর।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তাহ’লে মলিনতার দাস বলতে কী বুঝব? ঠাকুর বলেছেন,—অহঙ্কারী ধনী মলিনতার দাস—মানে অহঙ্কারী ধনী মলিনতার চাকর অর্থাৎ সে মলিনতার হুকুমে চলে। মলিনতা কী? কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ ও মাৎওসর্য—এ ছ’টাকে কী বলে? এগুলো কী? এগুলো হ’ল রিপু—ষড়রিপু। রিপু মানে?
ভবেশ—মলিনতা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কিন্তু ঐগুলোকে যদি ইষ্টকাজে লাগানো যায়, তখন বন্ধু হ’য়ে কাজ করে। অহঙ্কারী ধনী এগুলোর বেশী চর্চা করে, এদের নির্দেশমত চলে, আর জ্ঞানকে উপেক্ষা করে। কিছু না জেনেই সে বলে—সব জানি । ….. চিন্তা করবে ঐগুলো—কাম কাকে বলে, ক্রোধ কাকে বলে, লোভ কাকে বলে।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-১৩/৫/৭৬ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ১৮৩-১৮৪]