সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
ক্ষমা কর, কিন্তু ক্ষতি ক’রো না।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব ঋদ্ধীশকে বাণীটির অর্থ ব্যাখ্যা করার আদেশ দিলেন।
ঋদ্ধীশ—আমি একজনের সাথে অন্যায় ব্যবহার করলাম। সে আমাকে ক্ষমা করল কিন্তু আমার ক্ষতি করল না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সে কেমন ক’রে? আমাকে তুমি ক্ষমা করলে কিন্তু ক্ষতি করলে না—সেটা কেমন?
ঋদ্ধীশ কিছু বলছে না দেখে তিনি পুনরায় বললেন—ধর, তুমি একটা অন্যায় কাজ করলে, আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম। এতে ক্ষতি করা হয় কেমন ক’রে?
ঋদ্ধীশকে নিরুত্তর দেখে তিনি ঐ প্রশ্ন একে একে প্রেমরঞ্জন ও দীপ্তিসুন্দরকে করলেন। কিন্তু উভয়ের কেহই ঠিকমত উদাহরণসহ বাণীটির ব্যাখ্যা করতে না পারায় তিনি বললেনঃ
ধর, আমি একটা অন্যায় কাজ করলাম। তুমি দেখলে কিন্তু কিছু বললে না। আবার অন্যে দেখল, কেউ কিছু বলল না— তাহলে কী হবে? আমার অন্যায়ের সংশোধন হবে না। ক্ষমা করা হ’ল, তুমি ক্ষমা করলে, কিন্তু এতেই ক্ষতি করা হ’ল আমার। সেই একটা গল্প আছে না? এক মাসী তার বোনের ছেলেকে মানুষ করত। তারপর সেই ছেলে স্কুল যেতে শুরু করল। স্কুল গিয়ে সে এর কলম চুরি করত, ওর বই চুরি করত—এরকম একের পর আরেক জিনিস চুরি করতে আরম্ভ করল। মাসী সবই জানত, কিন্তু কিছুই বলত না। এভাবে চুরি করতে করতে একদিন সে পাকা চোর হয়ে উঠল। স্কুলে টুকিটাকি চুরি করা শুরু করে পরে হ’ল পাকা চোর। তারপর একদিন চুরি করতে গিয়ে সে ধরা পড়ল। কোর্টে বিচার হ’ল, ফাসি হ’ল, ফাঁসি দেওয়ার আগে জজ জিজ্ঞাসা করছে—তোমার কি কোন অপূর্ণ বাসনা আছে? নিয়ম আছে—কারো যদি কোন বিশেষ বাসনা থাকে তাহলে ফাঁসির আগে তা পূরণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। জজের কথা শুনে সে বলল—হ্যাঁ, ফাঁসির আগে আমার মাসীর সাথে একবার দেখা করতে চাই। এরপর মাসীকে খবর দেওয়া হ’ল। মাসীকে কাছে পেয়ে ঐ ছেলে মাসীর কানের কাছে মুখ এনে কান কেটে দিল। বলল—মাসী! তোমার ভালবাসার এই পুরস্কার। মাসী আগে থেকে সাবধান করলে আজ আর তা’কে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলতে হ’ত না।
আর একটা ঘটনা বলি। কলকাতার পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক ভদ্রলোক কাছা খোলা অবস্থায়—কোন অফিসার হবে হয়তো।
তাই দেখে তার পিছনে লেগে একটা ছেলে বদমায়েসি শুরু করল। ভদ্রলোক পিছন ফিরে তা’ দেখে বলল—কী—পয়সা নেবে? এই নাও—ব’লে ৪ আনা ছুঁড়ে দিল। ক্ষমা করল। পয়সা পেয়ে সে তো মহা খুশি! দোকানে গেল ঐ পয়সায় মিষ্টি খেতে। তারপর ঐ ছেলে তো কায়দা শিখে ফেলল। একই কায়দায় পয়সা উপার্জন করতে শুরু করল। একদিন এক দোকানদারকে পিছন থেকে চিমটি কাটল। দোকানদার পিছন ফিরে তা’ দেখে ফট্ ক’রে এক চড় মারল। সে এমন চড় যে দুটো দাঁত ভেঙ্গে পড়ে গেল।—এরকম ব্যাপার। এখন যদি ঐ ভদ্রলোক পূর্বের ঐ ঘটনায় ছেলেটিকে শাসন করত, সাবধান ক’রে দিত তাহলে আজ আর তার ঐ দশা হ’ত না। তাকে ক্ষমা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তার ক্ষতিই করল।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৫/১০/৭৯ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ১৮৪-১৮৫]