গুরু হ’তে চেও…উদ্ধারকর্ত্তা। – ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

গুরু হ’তে চেও না। গুরুমুখ হ’তে চেষ্টা কর ;আর, গুরুমুখই জীবের প্রকৃত উদ্ধারকর্ত্তা।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

শ্রীশ্রীপিতৃদেব উমেশকে বাণীটি আলোচনা করতে বললেন।

উমেশ বাণীটি পাঠ ক’রে বলল—ঠাকুর বলছেন গুরু হতে চেও না।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তার মানে?

উমেশ—গুরু হওয়ার চেষ্টা করব না। উপদেশ দিতে চাইব না। গুরু যেমন বলেন সেইরকম হতে চেষ্টা করব, তাঁর মনোমত হতে চেষ্টা করব।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—গুরু হবার চেষ্টা করা মানে কী?

উমেশ—বড় হতে চাইব না।

—বড় হ’তে চাইব না কেন? বড় হতেই তো চাই আমরা। তিনি তো বড় হতেই বলছেন, তিনি যেমন-যেমন বলেন যেমন-যেমন চান সেইটা করাই তো সাধনা।

—নকল করব না।

—হ্যাঁ, সেইটা বল। বলতে চাচ্ছেন—সাজতে যেও না, কী হতে চেষ্টা করব?

—গুরুমুখ হতে চেষ্টা করব।

—গুরুমুখ কাকে বলে?

উমেশকে নিরুত্তর দেখে বললেন—’পুবমুখে চল’ মানে কী? না, পুবদিকে মুখ রেখে চল। তাহলে গুরুমুখ মানে, গুরুর দিকে মুখ রেখে চল। তাঁর অনুশাসনবাদ মেনে চল, তাঁর প্রতি নিষ্ঠা, আনুগত্য, কৃতিসম্বেগ নিয়ে চল। যিনি গুরুমুখ তিনি গুরুর গুণকীর্তন করে বেড়ান, গুরুর মনোমত পথে চলেন, আমাদের জীবনে চলার পথে তিনি আদর্শ, তাঁকে অনুসরণ ক’রে কত মানুষ জীবনবৃদ্ধির পথ ধরতে পারবে। যেমন, কোন পথিক হয়ত পথে যেতে-যেতে ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে গেছে, সেই পথে যদি কোন ভাল বাড়ী পেয়ে যায়, ঝড় বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। মনে করবে যাক্‌, দাঁড়ানোর একটা জায়গা পেলাম। তেমনি এই সংসারে মানুষ মোহগ্রস্ত হয়ে থাকে। তা থেকে দুঃখ, কষ্ট, অশান্তি আসে। যদি মানুষ গুরুমুখের সংস্পর্শে এসে পড়ে, জীবনবৃদ্ধির নীতিবিধি পেয়ে সে উপকৃত হবে—বৃত্তি-প্রবৃত্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে, মোহমুক্তি ঘটবে। দুঃখ, কষ্ট, অশান্তি দূর হবে। তাঁর সংস্পর্শে এসে এরকম বহু মানুষ মঙ্গলের কথা শোনে, গুরুর গুণকীর্তন শোনে, মানুষের মঙ্গল হয়—সৎ-মন্ত্র গ্রহণ করে, শান্তি পায়। উদ্ধার হওয়া মানে বৃত্তি-প্রবৃত্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া।

[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-১৬/১১/৭৭ ইং]

[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২৬৮]