সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীদু’টি হলো:
নাম-যশ আত্মোন্নয়নের ঘোর অন্তরায়।
তোমার একটু উন্নতি হ’লেই দেখবে কেউ তোমাকে ঠাকুর বানিয়ে ব’সেছে, কেউ মহাপুরুষ ব’লছে, কেউ অবতার, কেউ সদ্গুরু ইত্যাদি ব’লছে ; আবার, কেউ শয়তান, বদ্মায়েস, কেউ ব্যবসাদার ইত্যাদিও ব’লছে ; সাবধান! তুমি এদের কারো দিকে নজর দিও না। তোমার পক্ষে এরা সবাই ভূত, নজর দিলেই ঘাড়ে চেপে বসবে, তা’ ছাড়ানও মহা মুশকিল। তুমি তোমার মত কাজ ক’রে যাও, যা’ ইচ্ছা তাই হোক।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেবের নির্দেশে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র বিজন মণ্ডল বলল—আমার সামনে যদি বহুলোক আমার প্রশংসা করে, তাহলে সেটা আমার পক্ষে ভালো নয়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কেন ভাল নয়?
বিজন—আত্মোন্নয়ন হবে না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—এখানে কী উন্নতির কথা বলেছেন?
সুবীর বিশ্বাস—আত্মোন্নয়ন মানে নিজের উন্নতি।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তার মানে টাকা পয়সা বেশি হ’ল, ঘরবাড়ি সবকিছু হ’ল এসব নাকি? শাশ্বতী তুমি বল এখানে কী উন্নতির কথা বলেছেন।
শাশ্বতী—আর্থিক উন্নতি।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—বক্সী বল, কি উন্নতির কথা?
ধৃতিদীপি বক্সী—উচ্চে আনতি।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—কি বলতে চাইছ? দীক্ষা নিয়ে ঠাকুরের অনুশাসনবাদ মেনে চলে যে উন্নতি হয়, সেই উন্নতি?
ধৃতিদীপি—আজ্ঞে হ্যাঁ।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ইষ্ট গ্রহণ করে, ঠাকুরের অনুশাসনবাদ মেনে চললাম। ‘তাঁকে’ ভালো লাগছে, সবাইকে ভালো লাগছে; জীবজন্তু, রামশ্যাম, সবাইকে ভালবাসতে লাগলাম। তা’ দেখে অনেকে ভালোবাসতে লাগল, শ্রদ্ধা, ভক্তি করতে লাগল, অনেকে গুরু বলে ভাবতে লাগল। আবার কেউ কেউ ভণ্ড, শয়তান, বদমায়েস ইত্যাদিও বলতে লাগল । ঠাকুর বলছেন তুমি ঠিকমত চল, ঈশ্বর লাভের পথে চল। নিয়ম মত ইষ্টের অনুশাসনবাদ মেনে চললে তোমার আত্মোন্নয়ন অবধারিত।
উচ্চে আনতি মানেও তাই—ইষ্টকে গ্রহণ করে ‘তাঁর’ অনুশাসনবাদ মেনে চলা। ইষ্টকে যার ভাল লাগে সেই ভাললাগা তাঁর থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে সবার মধ্যে পড়ে। ইতর প্রাণী কাদের বলে? গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। এই ইতর প্রাণীরাও তখন তাকে ভালোবাসে। তারাও অনুভব করে সেই ভালোবাসা। তারাও আকৃষ্ট হয়। আত্মোন্নয়ন হলে গোবরগণেশ থেকে পণ্ডিত পর্যন্ত সবাই ভালোবাসে। কিন্তু ঠাকুর বলছেন তোমাকে অবতারই বলুক বা ভণ্ডই বলুক তুমি কারও দিকে নজর দিও না; এরা সবাই তোমার কাছে ভূত। নজর দিলে এরা ঘাড়ে চেপে বসবে, মানে তুমি এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়বে। এদের কারও দ্বারা তুমি প্রভাবিত হয়ো না।
[ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-২৮/৮/৭৬ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ২৫২ – ২৫৩]