সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
যা’ ক’রলে রক্ষা হ’তে পতিত হয়—তাই পাপ।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব সপ্তর্ষিকে বাণীটি আলোচনা করার আদেশ দিলেন।
সপ্তর্ষি—পতিত মানে পড়ে যাওয়া। আর পাপ হ’ল তা-ই যা অন্যায়, যা করলে শাস্তি পেতে হয়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—আমায় শাস্তি পেতে হবে—সেজন্যই পাপ? যদি আমার শাস্তি না হয়?
সপ্তর্ষি—পাপ কাজ ক’রে ধরা পড়লাম। তখন আমায় শাস্তি ভোগ করতে হ’ল।
—ধরা না পড়লে পাপ নয়?
—ধরা না পড়লেও পাপ।
—সেকথা বুঝিয়ে বল—চুরি করার ফলে রক্ষা হতে পতিত হয়—কেমন করে?
—সবাই যখন আমার চুরির কথা জানতে পারল তখন পতিত হয়ে গেলাম।
—কিন্তু সবাই না জানলেও তো পাপ,—তুমি আগে যা বললে। পতিত হওয়া মানে কী?
—মানে নীচে নেমে যাওয়া।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব এবার ধীরাকে বুঝিয়ে বলতে নির্দেশ দিলেন।
ধীরা—আমি চুরি করলাম। তার ফলে মন থেকে সৎ-চিন্তা চলে গেল। ঠাকুরকে আর স্মরণ করতে পারি না; সর্বদা ধরা পড়ার ভয়। মনে-মনে ভাবছি—আগেই ভাল ছিলাম! এমনি ক’রে মন নীচে নেমে যায়।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—পতিত কেমন ক’রে হয়—তা তো বোঝা গেল না। কোন জিনিস উঁচু থেকে পড়লে পতিত বলি তো! যেমন আগে আমি জীবনবৃদ্ধির পথ ধ’রে চলছিলাম; তারপর একদিন লোভে পড়ে চুরি করলাম। গ্লানি জমল আমার মধ্যে। এতে আমার নিজেরই ক্ষতি হ’ল। জীবনবৃদ্ধির পথ থেকে পতিত হলাম। ইষ্ট হচ্ছেন জীবনবৃদ্ধির মূর্ত প্রতীক। ইষ্টকে আমার মধ্যে রক্ষা ক’রে চলছিলাম। তাঁর নির্দেশ মেনে তাঁকে খুশি করার চেষ্টায় ছিলাম। তারপর তা’ থেকে বিচ্যুত হলাম—মন নীচের দিকে নেমে গেল। নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তি নিয়ে খেয়ালমত চলতে লাগলাম। জীবনবৃদ্ধির পথ থেকে পতিত হলাম।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-৩/১২/৭৬ ইং ]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ৩২৬]