সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:
সৎ-চিন্তায় নিমজ্জিত থাক, সৎ-কৰ্ম্ম তোমার সহায় হবে এবং তোমার চতুর্দ্দিক সৎ হ’য়ে সকল সময় তোমাকে রক্ষা ক’রবেই ক’রবে।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :
নীরদাসুন্দরী আলোচনা শুরু করল।
—সৎ-চিন্তায় নিমজ্জিত থাক মানে সৎ চিন্তায় ডুবে থাক।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সৎ-চিন্তা কি, আগে বল।
নীরদাসুন্দরী—সৎ-চিন্তা হ’ল ইষ্ট বিষয়ক চিন্তা। যা জীবনবৃদ্ধির সহায়ক এমন চিন্তা। সেরকম চিন্তা করলে কার্যও সেরকম হবে; সৎ হবে, জীবনবৃদ্ধির সহায়ক কর্ম হবে। তখন চারিদিকই ওরকম হবে, সৎ হবে। তখন আমাকে সবদিক থেকে রক্ষা করবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব এবার দেবলাকে আলোচনা করার আদেশ দিলেন।
দেবলা—সৎ-চিন্তা হ’ল যা জীবনবৃদ্ধির সহায়ক। এরকম চিন্তা করলে এরকম কর্ম করলে সব সময় পরিবেশ আমাকে সাহায্য করবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ও (নীরদা) যা বলল তুমি তার চেয়ে একটু ব্যাখ্যা ক’রে উদাহরণ দিয়ে বল। ও তো বললই। সৎ-চিন্তা কী?
—সৎ-চিন্তা মানে ইষ্ট-চিস্তা।
—ইষ্ট কী?
—যিনি আমাদের বাঁচাবাড়ার মূর্ত প্রতীক তিনি ইষ্ট।
—তাতে কী?
দেবলা—তাঁর পথে চললে সকলের মঙ্গল হবে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সকলের মঙ্গল হবে না নিজের মঙ্গল হবে?
বাণীটি পুনরায় পাঠ করল দেবলা। পাঠের পর তাকে নিরুত্তর দেখে শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—সৎচিন্তা মানে ইষ্টচিন্তা। ইষ্ট মানে ঠাকুর, গুরু। তাঁর চিন্তা কী? তাঁর কোন্ চিন্তাটা করব, তা তো বললে না। (একটু থেমে) সেই সব করব, যাতে আমার মঙ্গল হয়। তাহলে তিনি যা’-যা’ করতে বলেছেন তাই-তাই করব।
দেবলা—হ্যাঁ। তা বলবও অন্যদের।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—নিজে আগে সে-রকম হব। সে-রকম করব। তাঁর চিন্তাই সৎ-চিন্তা। আর তাঁর কর্ম? ইষ্ট যা যা করলে খুশি হন সে-সব কর্ম করব। এই তো বলতে চাচ্ছ। করার আগে চিন্তা করতে হয়। যেমন ধর, সকাল বেলা তুমি ঠাকুরবাড়ী এলে। তার আগে আসার কথা চিন্তা করলে। তারপর ফুলটুল তুলে নিয়ে ঠাকুরবাড়ী চলে এলে।
তিনি তো মঙ্গলময়। তাই তিনি আমাদের মঙ্গলের কথাই বলেছেন। যা করলে আমাদের মঙ্গল হয়, কল্যাণ হয় সেকথাই বলেছেন। তাই আমাদের উচিত তাঁর অনুশাসনবাদ কাঁটায় কাঁটায় মেনে চলা। কিন্তু যারা ঠাকুরের দীক্ষা নেয়নি তারা কি সৎচিন্তা করবে না? সৎ-কর্ম করবে না? তাহলে যারা দীক্ষা নেয়নি তারা কেমন ভাবে চলবে?—(ধৃতিবল্লভকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন)।
ধৃতিবল্লভ—তারা তাড়াতাড়ি দীক্ষা নেবে।
ধৃতিবল্লভের কথা শুনে সকলে হেসে ফেললেন।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ, বাবা আছেন, মা আছেন, তাদের কথা শুনবে। পাড়া প্রতিবেশী সকলের মঙ্গলের জন্য ক’রে চলবে। এই করতে করতে সে একদিন ঠাকুর পেয়ে যাবে। মোট কথা সৎচিন্তা মানে শুভ-চিন্তা, মঙ্গল-চিন্তা করা। অনিষ্ট-চিন্তা না করা এবং তা কিন্তু শুধু আমি বা আমার পরিবার বা আমার পরিবেশের জন্যই নয় কেবল। জগতের সব যা কিছু—ব্যক্তি, প্রাণী, বস্তু—সব কিছুর জন্যই।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তারিখ-১৭/৭/৭৭ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ পৃষ্ঠা ১৮৯-১৯০]