হেগে মরার চেয়ে ….-ব্যাখ্যা

সত্যানুসরণ-এ থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটি হলো:

হেগে মরার চেয়ে হেঁটে মরা ভাল।

পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক ব্যাখ্যা :

আদেশ পেয়ে ধৃতিবল্লভ আলোচনা শুরু করল।—কেউ হয়তো ঠাকুরের কাজ করে। তারপর তার অসুখ হ’ল—কাজ করতে পারে না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে পেচ্ছাব-পায়খানা ক’রে সে একদিন মরে গেল।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—সে তো হয়ই। কেউ যখন রোগ-অসুখে ভোগে তখন সে কেমন ক’রে কাজ করবে? রোগ সারলেই তো সবাই কাজ করে। আমরা যারা ঠাকুরের কর্মী তাদেরও রোগ-অসুখ হতেই পারে। রোগে ভূগলে কেমন ক’রে কাজ করব?

নির্দেশক্রমে ধৃতিবল্লভ আবার বাণীটি পাঠ করল। কিন্তু বাণীটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ধৃতিবল্লভকে চুপ করে থাকতে দেখে তিনি অমলকে ব্যাখ্যা করার আদেশ দিলেন।

অমল—আমার হয়তো রোগ হয়েছে। শয্যাশায়ী হয়ে থাকলাম। তাই কাজ—

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—তোমার রোগ হতে যাবে কেন? আর রোগ হলে কাজ করবেই বা কেমন ক’রে? হাটবেই বা কেমন ক’রে?

এরপর অমলকে নিরুত্তর দেখে তিনি বোধিব্যাসকে একই প্রশ্ন করলেন।

বোধিব্যাস কিছু না বলায় শ্রীশ্রীপিতৃদেব বললেন—মানুষ একদিন না একদিন মরেই। ঠাকুর বলছেন, তুমি যে বসে আছ শুয়ে আছ, এভাবে বসে শুয়ে কাটিয়ে মরার চেয়ে কাজ কর। শুয়ে বসে পেচ্ছাপ-পায়খানা ক’রে সময় কাটিয়ে লাভ কী? মরতে তো হবেই একদিন। শুয়ে-বসে আলসেমি ক’রে রোগগ্রস্ত হয়ে মরার চেয়ে কাজ কর—ইষ্টের কাজ কর। ‘হেঁটে মরা’ মানে কাজ করতে-করতে মরা। মৃত্যুই তো জীবনের শেষ—জীবনের পরিণতি। সেই অবস্থায় পৌঁছানোর আগে ইষ্টকাজ করে যাও, সকলের যাতে কল্যাণ হয় সেরকম কাজ কর। চুপ করে বসে থেকে কুড়েমি ক’রে মরার চেয়ে যাতে ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠা হয়, সবারই মঙ্গল হয় সেরকম ক’রে দেহরক্ষা কর। দেহরক্ষা কর মানে?

বালকগণ—দেহরক্ষা মানে মরে যাওয়া।

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—মরে যাওয়াকে দেহরক্ষা বলে কেন?

ছেলেদের নিরুত্তর দেখে গুরুকিংকরদা (পাণ্ডে) বললেন—আজ্ঞে, দেহকে এই পৃথিবীতে রেখে দিয়ে আত্মা অন্য জগতে চলে যায় বলে কেউ মরে গেলে আমরা বলি, দেহরক্ষা করল।

মেয়েদের দিকে তাকিয়ে শ্রীশ্রীপিতৃদেব জিজ্ঞাসা করলেন, বাণীটি তারা বুঝেছে কি-না। মেয়েরা প্রত্যেকে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল। শ্রীশ্রীপিতৃদেব এবার সমুখের দাদাদের ও মায়েদের পানে তাকালেন। কারো কোন প্রশ্ন না থাকায় তিনি সেবা বিধায়না গ্রন্থ পাঠের আদেশ দিলেন।

[ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তারিখ-২৪/৬/৭৭ ইং]

শ্রীশ্রীপিতৃদেব—চুপচাপ ক’রে বসে না থেকে, সৎভাবে কাজকর্ম্ম করা, ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত করা ভাল। মরতে তো একদিন হবেই—শুধু বসে বসে খেয়ে এবং মরে লাভ কোথায়? ইস্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠায় কর্ম্মরত থেকে মরাই শ্রেয়। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ একটা বাঘ দেখতে পেলে। তখন কি করবে। ওরে বাবা! বাঘ বলে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে পড়ে যাবে, না প্রতিবিধানের চেষ্টা করবে।

মানুষ দু’প্রকার। প্রথম—বিপদে পড়লে চেঁচিয়ে ওঠে। বিপদের সমূহ প্রতিকার করে তবে নিরস্ত হয়। দ্বিতীয় শ্রেণী—বিপদে পড়লে নিজের অস্তিত্ব ভুলে ভেঙ্গে পড়ে, কোন প্রতিকার না করেই।

প্রথম শ্রেণী—বাঘ দেখেই ছুটে পালাবে, তা যদি সম্ভব না হয় কাছে কোন গাছ দেখলে তা’ বেয়ে গাছে উঠে পড়বে। তা’ না পেলে হাতের কাছে ইট-পাথর যা পাবে, তাই দিয়ে আঘাত করবে। তাতে যদি বাঘ নিরস্ত না হয়, তবে মরার আগে শেষ চেষ্টা করা। চোখের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেওয়া, দু’গাল চিরে দেওয়া, শেষ চেষ্টা।

দ্বিতীয় শ্রেণী—ওরে বাবা বাঘ, বলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। বাঘ এসে ঘাড় মটকে দেয়। ভেবেই নেয় মৃত্যুই অবধারিত। যে প্রকৃত মানুষ হতে চায়, সে প্রথম শ্রেণীকে অনুসরণ করবে।


[তাঁর সান্নিধ্যে/তারিখ-২৮/৯/৭৭ ইং]

Loading