সাধনা প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড (৪১-৭৯)

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “সাধনা” শিরোনামে পৃষ্ঠা ৬৭ – ৮২ পর্যন্ত মোট ৭৯ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ৪১ – ৭৯ বাণীসমূহ দেয়া হলো।

বুজরুকি সব দাও না ফেলে,
আপ্তবাক্য ক'রে সার,
কর চল সেই পথেতে
ধাপ্পা হ'তে পাবে উদ্ধার। ৪১।
নরক-ঘাঁটা মানুষেরও যদি
তেষ্টা-চেষ্টা শুভ রয়,
কৃতির তালে তা'ই করে সে—
আস্তাকুঁড়ও তীর্থ হয়। ৪২।
সৎ-এর দিকে নজর রেখে
ভুলগুলি তোর ধর্ আগে,
ভেবে-চিন্তে ঠিক ক'রে সব
চল্ ওরে চল্ সৎ-এর রাগে। ৪৩।
মিষ্টি কথা, আচার-ব্যাভার
কৃতিদীপ্ত ঊৰ্জ্জনায়,
'ব্যোম্‌' ব'লে তুই ওঠ্ না জেগে
সব রিপুকে ক'রে জয়। ৪৪।
সৎ-সাধুদের সমর্থনে
সব সময়ে প্রস্তুত থাকিস,
সাত্বত যা' সবদিক দিয়ে
সবগুলিকে মিলিয়ে রাখিস্ । ৪৫।
সাধু-প্রকৃতির প্রথম লক্ষণ
সৎ-সাধুদের সুসমর্থন,
যে যেমন হো'ক্, এ না হ'লে
ব্যক্তিত্বেই রয় অপকর্ষণ। ৪৬।
অসৎ-নিরোধ যেমন প্রখর
সৎ-সঞ্চারণে তুখোড় তেমনি,
ধৃতিচর্য্যার কৃতি নিয়ে
সাধু ব্যাপৃত রয়ই সেমনি। ৪৭।
অন্তঃস্থ তোর জনিমালা
বিন্যস্ত যা'য় সত্তা তোর,
কৃষ্টিতপের শিষ্ট চলায়
ফুটবে অঢেল জীবন-ভোর। ৪৮।
শিষ্ট যদি হ'তেই চাও
বিশেষজ্ঞ হবে যদি,—
শ্রেয়নিষ্ঠ তৎপরতায়
নিয়ে আনুগত্য-কৃতি,
নিরলসভাবে নিদেশ তাঁহার
নিষ্পন্ন কর নিরবধি,
অভ্যাসে আয়ত্ত কর,
সত্তাতে কর সঙ্গতি। ৪৯ ৷
নিষ্ঠা-অনুগ কৃতি নিয়ে
সঙ্গতিশীল বোধ-দর্শনে,
যেগুলি সব ফুটে ওঠে
তা'ই কিন্তু যায় ব্রহ্মজ্ঞানে। ৫০।
দীক্ষা হ'তে শিক্ষা আসে
অনুশীলনার তৎপরতায়,
আচার-বিচার বিনিয়ে তেমনি
তৃপ্ত হ'বি সদ্-দীপনায়। ৫১।
দীক্ষানুশীলনে দক্ষতা বাড়ে
ধী-ও বাড়ে তেমনিতর
কৃতিত্ব আনে কৃতি কিন্তু
যেমনতর নিষ্ঠা দড়। ৫২।
অটুট নিষ্ঠায় পালন করলে
দীক্ষার অনুশাসন,
অভ্যাসেতে অভ্যস্ত হ'য়ে
আনেই সুবর্দ্ধন। ৫৩।
নিষ্ঠানিপুণ অনুরাগের
অনুরণন বাড়বে যত,
দেখতে পাবি ক্রমে-ক্রমে
অনুভূতির বিভব তত । ৫৪।
নিষ্ঠারতির অনুরাগে
কৃতিদক্ষ হবে যত,
অর্থান্বিত বিনায়নে
নাম-মহিমা বুঝবে তত । ৫৫।
ইষ্টনিষ্ঠায় অটুট থেকে
অনুগতির কৃতি ব'য়ে,
পরাক্রমে চল্ ওরে চল্
সুধীসুন্দর চর্য্যা ল'য়ে। ৫৬।
দেখ তোমায় শোন বলি—
ইষ্টনিষ্ঠায় অটুট হ'য়ে
জ্ঞান-বিজ্ঞানের সন্ধিৎসাতে
নিটোল হ'য়ে লেগে থেকে
সার্থক সমাহিতি নিয়ে
কৃষ্টিকলার সাবুদ চলায়
ধৃতি নিয়ে চল চলি'। ৫৭।
চেষ্টা অনেক তেষ্টা মেটায়
নিষ্ঠামাফিক বোধবিবেকে,
ভাবাচলাও তেমনতরই
আগ্রহ নিয়ে চলতে থাকে। ৫৮।
শোন্ না আমার সোজা কথা—
নিষ্ঠা পরাক্রম রয় যদি,
যেমন হয় তোর ইষ্টনিদেশ
তাই ক'রে চল্ নিরবধি। ৫৯।
ক'রে জেনে বুঝে তুমি
যেমনতর বলবে যত,
নিদেশগুলিও অনেক জনে
তেমনতরই মানবে তত। ৬০।
ইষ্টনিদেশ যা'ই শেখ না
কৃতি-উচ্ছল চৰ্য্যা নিয়ে,
তাঁ'র কাজেতেই তা' লাগিও
তাঁ'রই চর্য্যায় হৃদয় দিয়ে। ৬১।
ইষ্টনিদেশের অনুশাসনে 
নিষ্ঠানুগত্য-কৃতি নিয়ে,
যে-জন চলে বিহিতভাবে
তেমনতর ধৃতি বিনিয়ে,
ঊর্জ্জী দ্যুতি ওঠেই ফুটে
ফিনিক্ দিয়ে উচ্ছলায়,
ব্যক্তিত্বটা তেমনই হয়
কৃতি-চর্য্যার সচ্ছলায়। ৬২।
শ্রেয়'র নিদেশ আঁকড়ে ধ'রে
ভেবে ক'রে সেধে নে,
অভ্যাসে তা' কায়েম ক’রে
ব্যক্তিত্বকে বেঁধে নে;
এমনি ক'রে চলিস্ যদি
দেখবি—পাবি অশেষ গুণ,
গুণের জেল্লা আনবে স্বতঃই
বিভব কত নিত্য নতুন। ৬৩।
ধাপ্পাবাজির মহড়ায় তুই
দেখলি কত ব্ৰহ্মজ্যোতিঃ,
বাড়লো কি তা'য়—বেকুব ওরে!
এতটুকু জ্ঞানের দ্যুতি ?
জানলি কি তা'য়—কী করলে কী হয়?
কোথায় কোন্‌টা হয় কি না হয়?
নিষ্ঠানিপুণ উদ্যমটা তোর
কৃতিদীপ্ত হ'ল কি তা’য় ?
এখনও তুই হ' রে সামাল
হাল ধ'রে চল্ নিষ্ঠারাগে,
অটল নিটোল শিষ্টাচারে
জীবনটা রাখ্ ইষ্টরাগে;
ইষ্টচালে মিলিয়ে যা'-সব
ধরবি করবি চলবি যেমন,
ঐ নিশানায় চললে পরে
পাবি হ'বি ঠিকই তেমন। ৬৪।
যেমনতর চলবে সেধে
ফলও পাবে তেমনতর,
সাধন-ফলে ব্যতিক্রম হ'লে
সাধন-পথ নয় যোগ্যতর। ৬৫।
ভজন তোমার নাইকো — শুধু
অলস গবেষণা,
একেও কি রে চাস্ বলতে তুই
বিভুর আরাধনা ?
আরাধনা যেমনতর
পা'চ্ছ তেমন ফল,
ধাপ্পাবাজি পদে-পদে
পায় যেমন কুফল। ৬৬।
অনুরাগের রাগ-লালিমায়
পোষণ-পূরণ-সম্বেগে,
ভজনরাগী চ'লেই থাকেন
মহিমাপূর্ণ আবেগে। ৬৭ ।
ভগবানকে দেখতে চেলেই
ভজনদীপ্ত সেবা-রাগে,
তাঁ'র মহিমায় অন্তর সিক্ত
করতে হবে বোধ-বিবেকে ;
দেখ্‌-না ক'রে এমনতর
দেখ্‌-না চ'লে এই চলায়,
কোথায় তিনি ওঠেন জেগে'
কেমনতর স্ব-মহিমায় ! ৬৮।
শব্দধারা ব’য়ে গিয়ে
ধৃতি-উৎস ধরে,
নিয়োগটাকে দেখে-বুঝে
অর্থ ওঠে স্ফুরে। ৬৯।
বোধ-বিচক্ষণ তুখোড় হ'য়েও
সাদামাঠা চলন যা'র,
ধৃতিপালী ভজনদীপ্ত—
ভগবত্তা সজাগ তা'র। ৭০।
শ্রেয়নিষ্ঠ অনুগতির
ভজনদীপ্ত উৎসারণায়,
যে-বোধে তুমি উপনীত হও,—
ভগবত্তা তেমনি দাঁড়ায়;
জাগেই তেমনি ভগবত্তা
সহজ-সুন্দর উচ্ছলা,
নিষ্ঠা-আনুগত্য-কৃতি
যেথায় যেমন প্রোজ্জ্বলা। ৭১।
নিষ্ঠানিপুণ ভালবাসায়
বিপুল আবেগ নেশার ভরে,
ভজনচৰ্যী অনুবেদনায়
ভগবানকে ধরতে পারে। ৭২।
ভজনসেবা তোমার যত
নিষ্ঠা-নিটোল আবেগ নিয়ে
ধৃতির সেবা চলবে ক'রে,—
ভগবানও আসেন বিনিয়ে। ৭৩।
ভগবানকে চাস্ যদি তুই—
কৃতি-হোমের চর্য্যা নিয়ে
ভজনপথে জ্ঞান-আলোকে
ভগবানও আসেন এগিয়ে। ৭৪।
নিষ্ঠানিপুণ অনুচৰ্য্যায়
ভজনদীপ্ত যে,
ভগবান্ তা'র হৃদয়ে বাঁধা
ধন্য মানুষ সে। ৭৫।
সব থেকেও যাঁ'র নাইকো কিছু
সব জেনেও জানেন না,
এমনতর সহজ যিনি
ঊজ্জী তাঁহার ভজনা
তাঁ'র চলনে চল্ চ’লে চল্
সতর্ক সুধী তৎপরতায়,
সার্থকতায় দাঁড়িয়ে থেকে
দূর ক'রে দে বিপাক-বাধায়। ৭৬।
বোধন-বিবেক-বিচার নিয়ে
কৃতি-আবেগে ভজন ধর,
প্রেষ্ঠনিষ্ঠায় অটুট থেকে
স্বস্তি-স্বার্থের সেবা কর,
অমনতরই ভজন যখন
সঙ্গতিশীল তৎপরতায়
সার্থক সেবায় চলতে থাকে,—
জ্ঞান-বিভূতির হয় উদয়। ৭৭।
আগ্রহটা সিধে সোজা
উদ্দেশ্যতে শক্ত,
তা'র অনুকূলে যা' পাবি তুই
আদর্শে করিস্ যুক্ত;
এমনি ক'রেই আদর্শকে
শিষ্ট রেখে পুষ্ট করিস্,
পুষ্টিতে ঐ সার্থকতা
বিনিয়ে তা'কে তাজা রাখিস্ :
চলন-বলন-করণচর্য্যা
তদনুগ হয়ই যেন,
তোমার কৃতি-সার্থকতায়
বাস্তবতায় ফুটুক হেন। ৭৮।
চল-অচলের আপেক্ষিকে
দেখ না চলৎ কোন্‌টা কিসে,
অচলটাও তেমনি খুঁজে
রাখ্ দেখে তুই তা'রই দিশে
মধ্য যা' তা' কেমনতর
সেটা কেমন কিসে গড়া,
চল-অচলের মাধ্যমে সে
কেমন কোথায় দেয় বা সাড়া;
সচলই বা অচল কোথায়—
অচল কোথায় হ'ল সচল,
খুঁজে-পেতে দেখে-শুনে
ব্রাহ্মীবিদ্যায় হও সফল। ৭৯।

Loading