সেবা প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড (১-৫০)

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “সেবা” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১০৯ – ১৩৮ পর্যন্ত মোট ১৬৮ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ০১ – ৫০ বাণীসমূহ দেয়া হলো।

নিষ্ঠা-ভক্তি প্রেষ্ঠতেই হয়
কৃতিচর্য্যী উন্মাদনায়,
শ্রেয়ত্ব গায় জীবনের জয়
সেবানিপুণ তৎপরতায়। ১।
নিষ্ঠা নিয়ে আচার্য্যসেবা
করিস্ দেখে-শুনে,
করার বুঝটি এমনিই হবে
বাড়বি ক্রমিক গুণে। ২।
গুরুর ব্যথা করলি না বোধ
করলি না তার নিরসন,
এমনতর কৃতি-চলায়
করবে কি তোয় বিচক্ষণ ? ৩।
পোষণ নেওয়া, পোষণ দেওয়া
বাড়িয়ে তোলা জীবন-স্রোত,
অসৎ-নিরোধ ক'রে চলা—
সত্তা-সেবার চারটি বোধ। ৪।
সওয়া-বওয়ার মাধ্যমেতে
লুকিয়ে থাকে স্বস্তি-জয়,
সহা-বহা ক'রেই থাকে
শিষ্ট, শুভ আর অভয়। ৫।
লোকবর্ন্ধনী অনুসেবন
ধৃতিচর্য্যার মূলধন,
ধৃতিচৰ্য্যায় দক্ষ যেমন
বিভব হবে সেই মতন। ৬।
জীবন যা'দের ঊর্জ্জী-তপা
ঊর্জ্জী-কৃতি নিয়ে,
তা’রাই বাঁচায় দেশ-পরিবার
হৃদয়-চৰ্য্যা দিয়ে। ৭।
প্রত্যাশাহীন পরিচর্য্যা
প্রত্যাশাহীন আপ্যায়ন,—
এমনতর ব্রতী চলনে
প্রীতির পূজা হয় সাধন। ৮।
চলা-বলা-করায় তোমার
চালটি প্রীতিদক্ষ হ'লে,
আপ্যায়নী পরিচর্য্যায়
সবাই তেমনি উঠবে ফুলে। ৯।
ঠিক বুঝিস্‌ তুই সব খতিয়ে
জীবন-দাঁড়াই পরিবেশ,
তুইও তেমনি তা'দের দাঁড়া
তুই-ই তা'দের সুনিবেশ। ১০।
সুষ্ঠু-সুন্দর সেবাচর্য্যা,
সত্তাপোষী আদান-প্রদান
আপদকালে পরিচর্য্যা—
সৎ-অন্তরেরই শুভ আধান। ১১।
খোঁজ-খবর যা'র রাখবি যত
উপকারের সন্ধানে,
চর্য্যারত উচ্ছলতায়
বাঁধবি তেমনি বন্ধনে। ১২।
আপদ-বিপদ দেখলে কা'রো
দেখলে ঠেকা কোনোখানে,
সজাগ চোখে বুঝে-সুঝে
নিয়োগ হ'বি তেমনি টানে। ১৩।
অসুখ-বিসুখ-দুর্ঘট-আদি
সাধ্যের অতীত কারো যখন,
ফুল্লতালের উদ্দীপনায়
রাখবি তা'রে তেমনি দীপন। ১৪।
হৃদয় দিয়ে চর্য্যা-চলায়
জয় করিস্ তুই যা'কে,
বান্ধবতায় বদ্ধ সে যে
পাবিই সাড়া ডাকে। ১৫।
অনুকম্পায় চর্য্যাপ্রতুল
যতই তুমি করবে হ'য়ে,
লোকেই বইবে তোমার বোঝা
তা'দের চর্য্যা চল ব'য়ে,
সুসংহত হ'য়ে উঠবে
সেবানিপুণ বর্দ্ধনায়,
তাই তো তোমার আত্মপ্রসাদ
তোমার প্রীতির মূর্চ্ছনায়। ১৬।
সাত্বত সঙ্গতি দেখবে যেথায়
বোধ-চক্ষুর দীপ্তি দিয়ে,
সেইটে-ই নেবে শিষ্ট চৰ্য্যায়,—
সাৰ্থক হ' না তাই নিয়ে। ১৭।
কুটুম্ব হয় তা'রাই কিন্তু—
ধারণ-পালন-পোষণ দিয়ে
পারস্পরিক বাঁধন আনে
চর্য্যাদীপ্ত হৃদয় নিয়ে। ১৮।
ভজন-তেজা ব্যক্তি যা'রা
চর্য্যা-সেবা-অনুরাগে,
দূরকেও জানিস্ আপন করে
পরকেও তা'রা আগলে রাখে;
এমন ধরা, এমন করা
এমন চর্য্যা-অনুরাগ,
অমৃতেরই আশীর্ব্বাদ সে
সম্বর্দ্ধনার সুষ্ঠু যাগ। ১৯
দেওয়া-নেওয়া-ধরায় কিন্তু
দেখবে পরও আপন হয়,
নেওয়ার তরে মোসাহেবী
দুর্ভাগ্যেরই গাহে জয়। ২০।
দেওয়া-নেওয়ার মিলনতালে
যেখানে যেমন শিষ্ট-শুভ,
প্রীতি-উচ্ছল উৎসৰ্জ্জনাও
হ'য়েও থাকে তেমনি ধ্রুব। ২১।
পারস্পরিক দেওয়া-নেওয়ায়
সত্তাপোষী অর্থনায়—
যেখানে যা'র যেমন লাগে
ছাড়ে-রাখে প্রয়োজনায়। ২২।
পরিবেশের দেওয়া-নেওয়ায়
বাঁচাবাড়ার ঊর্জ্জনা,
তেমনতরই হয়ই সেথায়
যেমন কৃতির সর্জ্জনা। ২৩।
পারস্পরিক পরিচর্য্যায়
কৃতিপূর্ণ আবেগ নিয়ে,
সৎ-উচ্ছলায় চললে পরে—
ধৃতি ওঠে দীপ্ত হ'য়ে। ২৪।
লোকচর্য্যা করে যে-জন
লোককে ভজে তৃপণ-সুখে—
নিষ্ঠা-অটুট অন্তরে তা’র
র'ন ভগবান্ সুখে-দুঃখে। ২৫।
প্রয়োজনপালী পরিচর্য্যায়
লোকদরদী হবে যত,
তোমার নিদেশ মানবে তা’রা
দিয়েও ধন্য হবে তত। ২৬।
অনুকম্পার অঢেল চলায়
ব্যষ্টিগুলির চর্য্যা ক'রে,
আপন ক'রে তোল্ না সবায়
ধৃতিচর্য্যার বহর ধ'রে। ২৭।
দরদী-দান মহৎ সে দান
হৃদয় নিয়ে চলে—
হৃদয়ধারা বয় অবিরল
শ্রেয়ার্থটির বলে। ২৮।
হৃদয়-চোয়ানো দেওয়া-নেওয়া
প্রাণের প্রসার আনে—
বান্ধবতার অনুবন্ধে
উচ্ছল প্রতিদানে। ২৯।
অনুকম্পায় পরকে যত
পরিচর্য্যায় দেখবে তুমি,
ভগবত্তার পথেও তেমনি
চলবে ধীরে আশিস্ চুমি'। ৩০।
বাঁচতে বাড়তে থাকতে তুমি
চাওই যদি একান্ত,
সবার বাঁচা-বাড়ার সেবা
করতেই হবে নিতান্ত। ৩১।
সেবা-সঙ্গতিতে ফাঁকিবাজি
শুনবি যত ফাঁকের ডাক,
শাতন-অন্ধ সত্তাসেবা
মুছে যাওয়ার ছাড়বে হাঁক। ৩২।
এক আদর্শে শিষ্ট হ'য়ে
ঐ গতিতে চল্ না দেখ,
কৃতির সেবায় আসবে ধৃতি
বিশেষ থেকেও হ' না এক। ৩৩।
লোকেই ধরবে প্রয়োজন তোর
লোকচর্য্যায় হ' তৎপর,
ধাতার ধৃতি-অনুশাসনে
সব হৃদয়কে দীপ্ত কর্। ৩৪।
লোকের সেবা যেই-ই করে
ধৃতিচর্য্যী উপাসনায়,
প্রীতিমুখর সেবা তখন
তা'রই সেবায় দিন কাটায়। ৩৫।
বোধ-বিবেকী সৎ যাহারা
লোকচৰ্য্যী বুদ্ধিমান,
চালচলন দেখে-বুঝে
রাখিস্ কিন্তু তা'র সম্মান। ৩৬।
যা'র প্রতি যা' করণীয়
কর তুমি তা' সুখে,
তোমার প্রতি তা'র করণীয় যা
ব'লো কমই মুখে। ৩৭।
বয়োবৃদ্ধ জ্ঞানবৃদ্ধ
হোক্ না কেন কোনজন,
শ্রদ্ধানিপুণ আপ্যায়নায়
করবি তা'দের ফুল্ল মন। ৩৮।
গুরুজনে নাই মমতা
স্বার্থসেবাই যা'র চলন,
ভূতে পাওয়া কৃতি নিয়ে
হয় কি কভু তা'র বলন ? ৩৯।
তুমি যা'কে সহ্য কর
সাধু, দীপ্ত সেবারাগে—
তোমাকেও সে করবে সহ্য
হৃদয়ভরা সুসম্বেগে। ৪০।
সেবাপটু অনুরাগের
নিষ্ঠাপ্রতুল ভজন-যাগ,
কৃতি-নেশায় যেমনতর
তেমনি ফোটে ভাগ্য-রাগ। ৪১।
বোধবিবেকী অনুচৰ্য্যায়
চর্য্যাক্রিয় যেমন তুমি,
তেমনতরই দূরদর্শী
অসৎ-নিরোধ-পরাক্রমী। ৪২।
পোষণে হয় রাণী,
শোষণে চাকরাণী। ৪৩।
দেবার স্পৃহা স্বতঃই যা'দের
ভাবে কমই দুঃখ-ভার,
দিলেই কেন নেবে তুমি
বইতে যদি না পার তার? ৪৪।
স্বার্থে-পদে নিষ্ঠা তোমার
নাই লোকার্থী ঊৰ্জ্জনা,
তবুও চাও ধন্য হ'তে
লোকার্থ ক'রে বর্জ্জনা ? ৪৫।
পরিবেশে থাকলে কুলোক
শুধরে যদি না নিস্ তা'য়,
বেদনায় দিন কাটাতে হবে
লাগবে ব্যথা জীবন-চলায়। ৪৬।
অসৎ যা'রা অশিষ্ট যা’রা
শরীর-মনের স্বাস্থ্যহরা,
স্বস্থ ক'রে তোল্ তাহাদের
নিশ্চয়ী তোর ধী-টি দ্বারা। ৪৭।
পরের চর্য্যা না কর যদি
স্বতঃস্বেচ্ছ, সুসম্বেগে,
তোমার বেলায় তা'দের করা
জাগবে বল কোন্ আবেগে? ৪৮।
খাওয়া-দাওয়া চলছে ভাল
ঘর-কন্না চলছে বেশ,
পরিবেশকে উপচে তোল
নইলে প্রাপ্তি ক্রমেই শেষ। ৪৯।
আপদ-বিপদ উদযাপনে
যে-জন তোমায় ধরে-করে,
তা'র চর্য্যায় বিমুখ হ'লে
সে কত কি করতে পারে? ৫০।

Loading