সেবা প্রসঙ্গে অনুশ্রুতি ৩য় খন্ড (১০১-১৬৮)

অনুশ্রুতির ৩য় খন্ডে “সেবা” শিরোনামে পৃষ্ঠা ১০৯ – ১৩৮ পর্যন্ত মোট ১৬৮ টি বাণী রয়েছে।
নিচে ১০১ – ১৬৮ নং বাণীসমূহ দেয়া হলো।

বিধিমাফিক স্বার্থসেবা
যেমন পার ক'রে যাও,
অন্যের স্বার্থ অটুট রেখে
আপন স্বার্থের দিক্ তাকাও। ১০১।
যা'দের সত্তাচর্য্যায় তুমি
ক'রে তুলেছ স্বার্থবান,
তুমিই তা'দের স্বার্থ-মুকুট
তুমি তা'দের স্বার্থ-আধান। ১০২।
সবাই যেমন তোমার স্বার্থ,
পরিচর্য্যা— লোক-পূজা,
লোক-ধৃতির পূজায় দাঁড়াও—
যেমন দাঁড়ান দশভুজা। ১০৩।
বান্ধব-ভাবটা চারিয়ে দে তো
বান্ধব-চৰ্য্যায় চল্ দেখি,
বিশেষ লোককে বিহিত চৰ্য্যায়
সৎ ক'রে তোল, যা'ক্ মেকী। ১০৪।
চর্য্যা-নিপুণ যাগ নিয়ে তুই
লোকের সেবা ক'রে চল,
আশা-বিশ্বাস-ব্যবহারে
বাড়ুক লোকের হৃদয়-বল। ১০৫।
গণ্যমান্য ক'রে তুলুক
তোমায় তোমার পরিবেশ,
আশা-বিশ্বাস-পরিচর্য্যায়
তোমায় জানুক সৎ-বিশেষ। ১০৬।
ধৃতিদীপ্ত অনুরাগে
তৃপণ স্বস্তি-পোষণায়,
পুষ্টি-প্রীতি পরিচর্য্যায়
বেড়ে ওঠ্ তুই তোষণায়। ১০৭।
অস্তিপালী স্বস্তিগানে
প্রাণের দোলায় দুলে-ফুলে,
সবার প্রাণটি সিক্ত ক'রে
অস্তিত্বটা ধর্ রে তুলে। ১০৮।
অশক্তদের ধৃতি দুর্ব্বল
নয়কো তেমন উচ্ছলা,
সুসমীচীন সাহায্য কর—
ধৃতি তোমার হো’ক্ উজ্জ্বলা। ১০৯।
অনুকম্পায় দরদী হও
চৰ্য্যী স্বেচ্ছ সম্বেগে,
দরদী হ'য়ে উঠুক সবাই
সেই আবেগের রং লেগে। ১১০।
নেবার বেলায় দিল্‌ খোলসা
দেবার বেলায় জোটেই না,
ঠিক জানিস্ তুই এই স্বভাবে
দরিদ্রতা ছুটবে না। ১১১।
চায় যদি কেউ, বুঝবি তা’কে
অমন হ'লে তোর—কী করিস,
সমঞ্জসা বিবেচনায়
তা'ই করিস্ তুই—যা’ পারিস্ । ১১২।
একটু ধীইয়ে দেখ্ না বুঝে
তোর ভাল তুই চাস্ কি না চাস্‌
চেলেই কিন্তু করতে হবে
সব ভালরই সমান চাষ। ১১৩।
বুঝে দেখ্ না আরো একটু
বেকুব যদি না হো'স্ তুই,
অন্যের ভাল না করলে কি
তোর ভালটা পাবি তুই? ১১৪।
মঙ্গলই তোর লক্ষ্য কিন্তু
কল্যাণই তোর জীবন চায়,
ইষ্টসেবা সবার চাওয়া
মঙ্গলক্রিয় হ' সবায়। ১১৫।
পরিস্থিতির কর উন্নতি
ধৃতি-চর্য্যা ব্যবহারে,
দরিদ্রতা থাকবে কোথায়
উৎসারণার সদাচারে ? ১১৬।
কৃতির নেশা, আগ্রহ আর
নিষ্ঠানিপুণ অনুরাগ,
চর্য্যানিপুণ চলন-ফেরন
ব্যক্তিত্বে আনে স্বর্গরাগ। ১১৭।
নিষ্ঠা-কৃতি-চৰ্য্যা-সেবায়
থাকলে অনুশীলন,
সে-ব্যক্তিত্বে হ'য়েই থাকে
জ্ঞানেরই উন্নয়ন। ১১৮।
ইষ্টতালে নিষ্ঠ হ’য়ে
হ' রে কৃতী ধৃতিসেবায়,
ধৃতিদেবের কর্ পূজা তুই
ফুটুক দ্যুতি জীবন-আভায়। ১১৯।
অস্তিত্বকে সুস্থ ক'রে—
বোধ ও ধৃতির চর্য্যা দিয়ে
তুলবি যেথায়—তৃপ্তি পাবি,
ফুটবে স্ফূর্ত্তি স্বস্তি নিয়ে । ১২০।
কৃতি বিনা ধৃতি-চৰ্য্যা
শিষ্ট-সুবোধ দক্ষতায়
হয় কি পাগল। সরল করিস্
সত্তা-সত্ব— দিগ্বলয়। ১২১।
বিভব আর ব্যক্তিত্বটা
চর্য্যা-নিটোল উদ্দীপনায়,
কৃতিমাফিক প্রভুত্ব ক'রে
চললে প্রেষ্ঠ সন্দীপনায়—
বিভূতি তা'দের করেই সেবা
তৃপ্ত-দীপ্ত করে প্রাণ,
স্বস্তিপ্রসাদ নিয়েই জীবন
চলায় চলে ঊর্জ্জমান। ১২২।
আলস্যহীন চলা নিয়ে
চর্য্যারত অনুকম্পায়
দেখ্ না চ’লে কেমনটি হয়—
জীবন ফোটে উচ্ছলায়। ১২৩।
প্রেষ্ঠনিষ্ঠা-স্ফীতিসহ
ক্লেশসুখপ্রিয়তায়,
ধৃতি-চর্য্যার কৃতি-আবেগ
দীপ্ত করে সব জনায়। ১২৪।
আনুগত্য আসে কিন্তু
কৃতিসেবার উদ্বোধনে,
অনুরাগের উৎসারণা
কৃতি-নিষ্পাদনে আনে। ১২৫।
অনুগতিসহ চর্য্যা করিস্
নিষ্ঠানিপুণ হৃদয় দিয়ে,
ঐ গতিটাই ব্যক্তিত্বকে
করবে স্থাপিত কৃতি নিয়ে। ১২৬।
চৰ্য্যাবিভূতিই অর্থসম্পদ—
স্বস্তি যা'তে উচ্ছলা,
লুব্ধ যা'রা স্বার্থসেবায় —
আনুগত্যই চঞ্চলা। ১২৭
সুব্যবস্থ চৰ্য্যা নিয়ে
বিনিয়ে জেনে সত্তাবিধান
ধৃতিতপে যে-জন বাড়ে—
সেই-তো সুজন পুণ্যবান্। ১২৮।
নিষ্ঠা-আনুগত্য নিয়ে
ইষ্টার্থটির কৃতিচর্য্যায়
নিষ্পাদনী তৎপরতায় —
ব্যক্তিত্ব চলে উচ্ছলতায়। ১২৯।
সত্তা পেলে' বৰ্ত্তালি তুই
সাত্বতীটির ক'রে সেবা,
চর্য্যাবিহীন ধৈর্য্য নিয়ে
ধৃতির যাগে থাকে কেবা ? ১৩০ ।
চর্য্যা-কুশল দৃষ্টি তোমার
নাই যদি রয় পোষণ-দাতায়,
বিবশ হবে উন্মাদনা
কৃতি-নিথর হবেই তা'য়। ১৩১।
চর্য্যাবিহীন চাটুবাদে
স্বার্থকতার কম নিশানা,
পার যদি এমনি কর
যা'তে শুভর হয় ঠিকানা। ১৩২।
দক্ষ-চতুর সম্বেদনায়
মানুষগুলি আপন কর্,
অসৎ চিনে সৎ চলনে
জীবন-অর্থে হ' তৎপর। ১৩৩।
আকাশে চা'—দেখ্ না পাখী
উড়ছে কেমন দলে-দলে,
কেউ তো কা'রেও ছাড়েনিকো
কেউ তো কা'কেও যায়নি ভুলে। ১৩৪।
ঐ দেখ না ঐ পাহাড়ের
মেঘ-মথিত কঠোর বুক,
কতই কাহার আশ্রয় সে
কতজনের যে দীপ্ত সুখ। ১৩৫।
কল্লোলিনী ঐ ছুটে যায়,
তর-তরিয়ে উধাও ধাওয়ায়,
বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখে
সহায় সবার জীবন-চলায়। ১৩৬।
ঐ যে মাটি বুক বিছিয়ে
প'ড়ে আছে রাত্রদিন,
সুখে-দুখে ধ'রেই আছে—
কত কি সবল, কত কি ক্ষীণ। ১৩৭।
ফসল ধ'রে মূক আবেগে
খোরাক জোগায় ঐ মাটি,
মাটি হ'য়েও সবার কাছে
ঐ ধরাই তো অটুট খাঁটি। ১৩৮।
সেবা কর্ তুই প্রাণপণে
যে যা' দেয়, তা' নে,
ইষ্টার্থকে অর্থ ক'রে
সার্থক হ'য়ে নে। ১৩৯।
টাকার যত্ন কর্ বা না কর্
লোকের যত্ন ক'রেই চল্,
লক্ষ্মী-কেশব রইবে বাঁধা
বিভবে তুই র'বি অটল। ১৪০।
অভাব কী তোর ? ভাবিস্ কী তুই ?
দেখিস্ না লোক তো'য় ঘিরে?
ইষ্টনিষ্ঠ ধৃতিচর্য্যায়
তোল্ না ক'রে জ্যান্ত হীরে! ১৪১।
আপদে যে জন তোমায় ধরে—
করে নানা উপকার,
তুমিও তাহায় লক্ষ্য রেখে
আপদকালে ধ'রো তা'র। ১৪২।
সেবাপ্রতুল অনুকম্পা
পাওয়াই ধাতার আশীর্ব্বাদ,
অন্যের আপদ উদ্ধার ক'রে
তুমিও নিও ধন্যবাদ। ১৪৩।
ভুলিস্ নে তুই কখনও তা'য়
আপন ব'লে যা'রে জানিস,
যেমন জানিস্ তেমনি চৰ্য্যায়
স্বস্তি দিয়ে বুকে রাখিস্ । ১৪৪।
তোমার ব্যথা বুকে রেখেই
সৎ চর্য্যায় যেটুক পারো,
ক'রে যেও আবেগ নিয়ে,
পার তো নিরাকরণ কর। ১৪৫।
অন্যের সুখ-দুখ যেমন দেখ—
তোমার হ'লে করতে কী ?
বিবেচনায় অমনি ধ'রে
চলিস্ করিস্ নিরবধি। ১৪৬।
ভগবানের দিব্য বোধি
তাদের প্রাণে জাগবে না,—
নিজের ছায়ায় পরকে দেখে'
যা'রাই সেবা করে না,
তা'দের হ'তে কী পেয়েছ
শিষ্ট-চর্য্যায় তোমার লাগি' ?
সে-হিসাব কি তোমার প্রাণে
নিয়ত হ'য়ে আছে জাগি' ? ১৪৭।
কদৰ্য্য যে হয়,—
প্রীতিপ্রসূ দানে করবি
তাহার হৃদয় জয়। ১৪৮।
ধারণ-পালন ব্রত নিয়ে
পরিস্থিতির সেবায় থাক্,
জীবন্ত হো'ক্ সব যা'-কিছু
জীবন্ত হো'ক্ পোড়া খাক্‌ । ১৪৯।
ওরে গরীব! ওরে আতুর!
স্বার্থলোলুপ কুটিল মন!
ইষ্টনিষ্ঠ হ'য়ে কর্ রে
পরিস্থিতির উন্নয়ন। ১৫০।
পরের ব্যথা বুঝে চলিস্
সেবায় করিস্ প্রশমন,
এমনতর পরিচর্য্যাই
আনবে আত্মপ্রসাদন। ১৫১।
অনুগ্রহ চাও যেখানে
চাও সৌহার্দ্দ্য-যশ,
মিষ্টি কথায় তুষ্ট রেখো
ক'রো চর্য্যা-বশ। ১৫২।
উৎসবে, ব্যসনে আর
দুর্ভিক্ষে, রাষ্ট্র-বিপ্লবে,
রাজদ্বারে, শ্মশানে রয়
ভুলো নাকো সে-বান্ধবে। ১৫৩।
ইষ্টার্থ যা' পূরণ করাই
অর্থ কিন্তু তোর জীবনের,
সার্থক হ' তা'ই ক'রে নিয়ে
চর্য্যা ক'রে চল্ সকলের। ১৫৪।
স্বস্তি তোমার উথলে উঠুক
শুভর পথে চল,
পড়শীদিগের শুভবার্ত্তা
অনুচৰ্য্যায় বল। ১৫৫ ৷
বান্ধবতা চলবি নিয়ে
ধৃতি-কুশল প্রাণের টানে,
আপদ-বিপদ্ নিরোধ ক'রে
রাখিস্ তা'রে তৃপ্তি-দানে। ১৫৬।
তোষণ-পোষণ সবার ক'রো
শোষণ ক'রো না কারও,
তোমায় শোষা যেমন লাগে
তেমনি কিন্তু তা'রও। ১৫৭।
অস্তি-বৃদ্ধি বজায় রেখে
সাধ্যমত অন্যে দিস,
পূরণ-পোষণ-ধৃতিটাকে
বজায় রাখতে না-ভুলিস্। ১৫৮।
অজান লোকও যদি আসে
সেবা-সন্দীপনা নিয়ে,
তৃপ্ত করিস, ফুল্ল করিস্
প্রীতিপূর্ণ হাদয়-দিয়ে। ১৫৯।
স্বস্তিপ্রসু সেবা নিয়ে
সুষ্ঠুবৈধী আচরণে—
আসলে কাছে ফেরাস্ না তা'য়,
ফুল্ল করিস্ আপ্যায়নে। ১৬০।
দোষমুক্ত কইবি কথা
বান্ধব করবি সবায়,
সু-জনোচিত আপ্যায়নায়
আপন করিস্ সেবায়। ১৬১।
আপদকালে কেউ নও তুমি
নাইকো সেবা সহানুভূতি,
দরদবিহীন অনুচলন
তবুও চাও লোকের স্তুতি ? ১৬২।
ইষ্টে অটুট প্রীতি রেখে
সাত্বত ব্ৰতে হ' ব্ৰতী,
কৃষ্টিচলায় চলৎ থেকে
লোকসেবাতে রাখ্ মতি। ১৬৩।
সৎপাত্রে করিস্ দান
শ্রদ্ধা-সহকারে,
অভাব ক্রমেই পালিয়ে যাবে
তেপান্তরের পারে! ১৬৪।
শ্রদ্ধাভরা সুবিনয়ী
ভঙ্গী কৃতার্থের,
এমনি ধাঁজে দান করিস্ তো
ফলবে ফলে ঢের। ১৬৫।
প্রীতির তোষণ নিয়ে যা'কে
ধারণ-পোষণ-দানে,
শুভচর্য্যায় রত তুমি
জাগবে তা'রই প্রাণে;
করায় যেটুক থাকে তোমার
ক'রে যাও তা' সব,
কেউ যদি তা'র সহায়ই হয়
(ক'রো) তৃপ্তি অনুভব;
আপ্যায়নায় পুষো তা'রে
তৃপ্তি দিও প্রাণে,
কৃতজ্ঞতায় অঢেল হ'য়ো
কুশল সেবা দানে। ১৬৬।
নিষ্ঠা-রাতুল নন্দনা তোর
উথলে হৃদয় পড়ুক ঝ'রে,
জীবনঝরা ঐ প্রেরণায়
সব পরিবেশ উঠুক ভ'রে ;
মানুষ হবার মক্‌সই ঐ
নিষ্ঠা-রাতুল নন্দনা,
যার ফলে তুই পাবিই সবার
শ্রদ্ধাভরা বন্দনা। ১৬৭।
ব্রাহ্মী দীপন বর্দ্ধনা তোর
ঘটে-ঘটে ছড়াবে যত,
বিষ্ণু-আশিস্ ব্যাপ্তি নিয়ে
ব্যাপন-বেগে চলবে তত। ১৬৮।

Loading