সত্যানুসরণে থাকা বাণীটি হলো..
ভারতের অবনতি (degeneration) তখন- থেকেই আরম্ভ হয়েছে, যখন-থেকে ভারতবাসীর কাছে অমূর্ত্ত ভগবান্ অসীম হ’য়ে উঠেছে—ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদের উপাসনা আরম্ভ হয়েছে।
পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যা :
শ্রীশ্রীপিতৃদেব প্রশ্ন করলেন—অবনতি মানে কী? ভারতের অবনতি কখন থেকে আরম্ভ হয়েছে? অবনতিই বা কী?
রাণী—অবনতি মানে পতন।
— উন্নতি মানে?
— উন্নতি মানে বৃদ্ধি বা উত্থান। তাহলে কী হ’ল? সবটা সহজভাবে গুছিয়ে বল্।
রাণী—ভারতের অবনতি মানে পতন তখন থেকেই শুরু হয়েছে যখন থেকে ভারতবাসী অমূর্ত ভগবান অর্থাৎ যে ভগবানের কোন মুর্তি নাই, কোন রূপ নাই সেই ভগবানের পুজা শুরু করেছে। অমুর্ত ভগবানের পুজা করা মানেই অসীমের পূজা করা।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—অর্থাৎ অমূর্ত ভগবানের পূজা করতে গিয়ে মানুষ নিজের খেয়ালমত পূজা শুরু করেছে।
বাণীটির অবশিষ্টাংশ তিনি স্বপ্নাকে ব্যাখ্যা করতে আদেশ দিলেন।
স্বপ্না—যখন থেকে ভারতবাসী ঋষির মতবাদ অর্থাৎ ঋষি যা’ বলেন সেই মতবাদের উপাসনা শুরু করেছে, ঋষিকে না মেনে, ঋষিকে যথোচিত ভক্তি না করে তাঁর মতবাদকেই স্বীকার করে নিয়েছে, তখন থেকেই ভারতের অবনতি শুরু হয়েছে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—ঋষি কাকে বলে বললে না তো? খষি মানে কী? উপাসনা কাকে বলে?
স্বপ্নাকে নিরুত্তর দেখে তিনি নিজেই বললেন—ঋষি মানে দ্রষ্টাপুরুষ।
এরপর তাঁর আসনের ওপর রাখা ‘সংসদ বাংলা অভিধান’ খুলে দেখতে বললেন। মেয়েদের ঐ শব্দের অর্থ খুঁজে পেতে দেরী হচ্ছে দেখে তিনি নিজে হাত বাড়িয়ে অভিধানখানি নিয়ে শব্দটির অর্থ দেখে বললেন—ঐ দেখ, ঋষি মানে মন্ত্রদ্রষ্টা মুনি, বেদমন্তদ্রষ্টা অর্থাৎ দ্রষ্টাপুরুষ। আর উপাসনার অর্থ হল আরাধনা, পূজা বা ভগবৎচিন্তা। তাহলে এখন বোঝা যাচ্ছে? শাশ্বতী কী বল?
শাশ্বতী— যিনি দ্রষ্টাপুরুষ তাঁকে বাদ দিয়ে তাঁর যে বাণী তাই নিয়ে যখন আমরা মেতে আছি, তখন থেকেই আমাদের অবনতি শুরু হয়েছে।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ, সে তো বুঝলাম। কিন্তু তাতে অবনতি হবে কেন?
মেয়েদের উত্তর পরিষ্কার হচ্ছে না দেখে তিনি তার সম্মুখে উপবিষ্ট অন্নদা’দাকে (মাঝি) প্রশ্নটির উত্তর দিতে নির্দেশ দিলেন।
অন্নদা’দা—জীবনে উন্নতি করতে হ’লে জীবন্ত আদর্শ প্রয়োজন। জীবনে চলার পথে একজনকে মেনে চলতে হয়। তা না হ’লে শুধু বাণী দিয়ে হয় না।
শ্রীশ্রীপিতৃদেব—হ্যাঁ, চরিত্র গঠন করার জন্য একজন জীবন্ত আদর্শ প্রয়োজন।
অন্নদা’দা—তা না হ’লে শুধুমাত্র কোন মহাপুরুষের বাণী পড়ে বা আলোচনা ক’রে মানুষের পরিবর্তন হয় না।
শ্ৰীশ্রীপিতৃদেব সম্মতি জানিয়ে বললেন— শুধু বাণী প’ড়ে মানুষের সংস্কারের পরিবর্তন হয় না। তার মানে—ভারত আগে উন্নত ছিলই—মানসিক, আধ্যাত্মিক সবদিক থেকে ভারতবাসী চরম উৎকর্ষ লাভ করেছিল; তারপর তাদের অবনতি শুরু হ’ল অর্থাৎ মানসিক, আধ্যাত্মিক চেতনা কমে যেতে লাগল, যখন থেকে তারা জীবস্ত আদর্শকে বাদ দিয়ে শাস্ত্রের বিচারের মধ্যে নিজেদের ভাবনা চিন্তা ব্যাপৃত করে রাখল। এই যেমন, মহাপ্রভু যখন এসেছিলেন তখন ন্যায়-মীমাংসা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে কত তর্ক-বিতর্ক, বাগ-বিতন্ডা। তারপর মহাপ্রভুর প্রেমে আকৃষ্ট হ’য়ে যখন তাকে মেনে চলতে লাগল তখন প্রকৃত আধ্যাত্মিক চেতনার উদ্মেষ ঘটল।
[ ইষ্ট-প্রসঙ্গে/তাং-১/৪/৭৯ ইং]
[প্রসঙ্গঃ সত্যানুসরণ এর পৃষ্ঠা ৩, ৪ এ পাওয়া যাবে]